বিনোদনের অনেকগুলো শাখা আছে। কবির লড়াই তার মধ্যে একটি এবং উল্লেখযোগ্য। বিনোদনের এই মাধ্যমটি নিজের গন্ডীতে বেশ আনন্দদায়ক। কখনো জ্ঞান আহরণেও উপযোগী, বিশেষ করে যারা নিরক্ষর তাদের জন্য এটি উত্তম একটি মাধ্যম। কেননা কবির লড়াইয়ে যে সব কথামালা উপস্থাপিত হয় তা কখনো কখনো  তথ্য ও জ্ঞাননির্ভর।
"ময়মনসিংহের মুগ ভালো, খুলনার ভালো কই।
ঢাকার ভালো পাতাক্ষীর, বাঁকুড়ার ভালো দই।।
কৃষ্ণনগরের ময়রা ভালো, মালদহের ভালো আম।
উলোর ভালো বাঁদর পুরুষ, মুর্শিদাবাদের জাম।।
রংপুরের শ্বশুর ভালো, রাজশাহীর জামাই।
নোয়াখালির নৌকা ভালো, চট্টগ্রামের ধাই।।
দিনাজপুরের কায়েত ভালো, হাবড়ার ভালো শুঁড়ি।
পাবনা জেলার বৈষ্ণব ভালো, ফরিদপুরের মুড়ি।।
বর্ধমানের চাষী ভালো, চব্বিশ পরগণার গোপ।
গুপ্তিপাড়ার মেয়ে ভালো, শীঘ্র-বংশলোপ।।
হুগলির ভালো কোটাল লেঠেল, বীরভূমের ভালো বোল।
ঢাকের বাদ্য থামলেই ভালো, হরি হরি বোল"।।
−ভোলা ময়রা
কবিগান সাধারণত দুটি দলের দ্বারা গীত হয়। প্রত্যেকটি দলের নেতৃত্বে থাকেন একজন "কবিয়াল" বা "সরকার"। তাঁর সহকারী গায়কদের বলা হয় "দোহার"। এঁরা সাধারণত নেতার কথাগুলিই পুনরাবৃত্তি করেন। কবিগান শুরু হয় "বন্দনা" বা "গুরুদেবের গীত"-এর মাধ্যমে। "বন্দনা" অংশটি সরস্বতী, গণেশ, জনতা ও শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়। এটি কবিয়াল যেমন উপযুক্ত করেন, তেমনভাবে গান। এরপর রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক গান গাওয়া হয়। এটিকে কেউ কেউ "আগমনী" বলেন। এরপর চারটি বিষয়ভিত্তিক গান গাওয়া হয়ঃ "সখী সংবাদ", "বিরহ", "লহর" ও "খেউড়"। এরপর প্রতিযোগিতামূলক অংশটি শুরু হয়।কবিগানের আসরে এই অংশটিকে "কবির লড়াই"-ও বলা হয়। এই অংশে একজন গীতিকার-সুরকার মুখে মুখে গান বেঁধে অপর গীতিকার-সুরকারকে আক্রমণ করেন এবং তিনিও গানের মাধ্যমে সেই আক্রমণের প্রত্যুত্তর দেন। কবির লড়াই আসলে কি? লড়াই তো এক প্রকার যুদ্ধ। ঢাল তলোয়ার, লাঠি দিয়ে যেমন লড়াই হয় তেমনি যুক্তি-তর্কের লড়াইও হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগে কিছু বিদ্বজ্জন ও পণ্ডিতের কথা বাদ দিলে সাধারণের শিক্ষা ও রুচির মান খুব নিম্ন স্তরে ছিল। কবির লড়াই,অশ্লীল কথাবার্তা ও রচনা,টপ্পা,খেউর ইত্যাদি অধিকাংশের কাছেই তৃপ্তিকর ছিল। শহরে হয় ত কিছু শিক্ষায়তন  প্রতিষ্ঠিত হত ও শিক্ষানুরাগীর দেখা মিলত কিন্তু দূরবর্তী স্থানে শিক্ষার আলো গিয়ে তখনও পৌঁছয় নি। এই অবস্থায় যে সব পত্র পত্রিকা প্রকাশিত হত,ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখতে গিয়ে অনেক সময়েই তাতে নিম্ন মানের লেখা প্রকাশ করা হত। অনেকেই এ ধরণের লেখা পড়তে পত্রিকা প্রকাশিত হবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত।
আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা কি সেই যুগে ফিরতে চাইছি ? আমার মনে হয় আসর তার জন্য তৈরী নয় , আশাকরি কবিরাও সেটা উপভোগ করেন না।