আমি ঘুরে ঘুরে পৃথিবীর বাতাসে
প্রতিটি মানুষের প্রশ্বাসে
দেখেছি এক অন্ধকার জগত !
দেখেছি এক আঁধার প্রকোষ্ঠ ;
নাকের অগ্রভাগ থেকে চলে গেছে
তাদের লালিত মন পর্যন্ত ,
যে মন নিয়ে তাদের গর্বের শেষ নেই ।
চোখে দেখতে পায় না তারা ,
তারা আঁধারের জীব
কানে শুনতে পায় না তারা ,
তারা বধির জীব ;
এ যেন ঘোলা মাছ ধরার মত
কোন নির্মল বোকামী তাদের !
আমি মানুষকে দেখি প্রতিনিয়ত ,
তাদের প্রশ্বাসের রঙ দেখি প্রতিনিয়ত ,
কী অদ্ভূত অচেনা রঙ মিশে থাকে
তাদের নিঃসৃত বাতাসে ।
কালো রঙের সহোদর সব রঙ ,
আমি দেখি ।
এসব অন্ধকার হৃদয়গুলো ভীড় করে
প্রতিদিন আমার চারদিকে ।
হৃদয়গুলো জানে না , তারা বিষধর ,
জানে না তারা ভয়ংকর !
কেবল জানে তাদের ঘিরে যে দেহ চঞ্চলিত
সেটা অনেক উজ্জ্বল ,স্পর্শকামী ,মাংসল ,
আবেগময় ।
শরীরে যে রোগ হয় মানুষেরা জানে
চিন্তিত হয়ে পড়িমড়ি চলে আসে
আমার দুয়ারে
ওষুধ খায় ব্যবস্থাবিধি নিয়ে
সেরে ওঠে শরীর ;
বহুবার এরকম ঘটে জীবনে ।
অতঃপর ,তারা ঘরে ফেরে আঁধার হৃদয় নিয়ে
এক এক ক'রে ।
আমি দেখি
নতুন হৃদয়েরা আসে ,অন্ধকারের রঙ নিয়ে ,
শঙ্কিত হয়ে গিয়েও অবিচল থাকি!
বেশ অদ্ভূত জীব মনে হয়
নিজেকে তখন ।
অথচ এসব নিত্যকার ঘটনা বলা চলে !
প্রতিদিন তো শত্রু তৈরি হয়; সকলেরই
অদৃশ্য হৃদয় নিয়েও ক্রমাগত শত্রুতা বাড়ে ; আমারও !
সঙ্কীর্ণ হৃদয়ের চারদিকে যে দেহগুলো
জীবিত বলে ভুল করি আমরা
তারা প্রমাণ নিয়ে চলে আসে
আমাদের সঙ্কীর্ণতার !
তাদের জাগতিক ব্যবহার যেন
কোন নিষ্ঠুর নিয়মে বাঁধা ষাঁঢ় ,
তোমাকে খোঁচাবে বলে
সারা রাত
সারা দিন
পরিশ্রম ক'রে শান দেয় শিঙে ;
ভিন্ন কিছু ভাবার মত অবসর
এসব অন্ধদের থাকে না কখনও ।
প্রতিদিন অজস্র হৃদয় ,দেখি ভেঙে পড়ে
শত্রুতার জেরে
ক্রোধের মত ঘোরে !
অন্ধ হৃদয় ,বদ্ধ হৃদয় ,যুবক হৃদয় , যুবতী হৃদয়
বিবাহিত হৃদয় ,অবিবাহিত হৃদয় , চতুর হৃদয়
পীড়িত হৃদয় ,জীবিত হৃদয় অথবা অর্ধমৃত হৃদয় -
সব ভেঙে যায় চুরমার হয়ে
একে অপরকে আঘাত ক'রে ক'রে !
আমার মত অদৃশ্য দর্শক হৃদয়ও কি বাদ যায় ?
এই অন্ধ ভেঙে যাওয়ার উত্সব থেকে ?
সকালের তীব্র রোদ ক্লান্ত হলে আমি দেখি -
মানুষেরা বিচলিত হয়ে যায়
অদ্ভূত সন্ধ্যের ভয়ে ,
পরাজিত হতে চায় স্বেচ্ছায় !
শরীরটা ছিঁড়ে বের ক'রে দিতে চায়
আজীবনের সেই স্পন্দিত ,সূর্য আলোকের
স্পর্শবিহিন
সেই আঁধার হৃদয়কে !
অবলীলায় ও অনায়াসে ,
যেন মামুলি কোন ব্যাপার সেটা !
আমার হাসি পায়
চরম ব্যর্থতার পর যে নির্লিপ্ত হাসি
থামতে চায় না সহজে
হৃদয়ের গভীর থেকে সেই হাসি বেরিয়ে
আসে !
মানুষের চামড়ায় মোড়ানো
সেই সঙ্কীর্ণ দর্শন ,
কঠিণ করোটির ভিতরে প্রোথিত বোকা নিউরন
আমাকে চরম বিরক্ত করে !
প্রতিদিন অন্ধকার বাড়ে
ধীরে ধীরে
মন থেকে অন্য কোন মনে
হৃদয় থেকে অন্য কোন হৃদয়ে !
ভালবাসা
প্রেম
অথবা যা কিছু নিরীহ বলে দেখি
সব বন্দি হয়ে যাচ্ছে আঁধার প্রকোষ্ঠে ;
ভবিতব্য ভেবে যে প্রেম ঢুকে যায়
অন্ধ হৃদয়ে ,
ফেরে না সে , ফেরে না কখনো ।
মানুষের মত দেখতে প্রাণীরা মেরে ফেলে
তাকে
বন্দি করে দেয় সে হৃদয়কে
অথবা তাড়িয়ে দেয়
তাদের তামসিক আস্তানা থেকে !
আমার দর্শক হৃদয় এসব শিকারের দৃশ্যে
ব্যথিত হয় অনবরত; প্রতিদিন !
কলঙ্কিত এক পীড়িত হৃদয়কে আমি
প্রতিদিন দেখি ,
সে কাঁদে ; হাসির আড়ালে কাঁদে;
চাঁদ-তারার মায়াবী আলোতে বসে কাঁদে ,
মরে যায় হঠাত্ ক'রে
আবার ফিনিক্সের মত ভস্ম থেকে
বেঁচে ওঠে বজ্রকঠিণ দৃঢ়তা নিয়ে !
নিয়ম-মাফিক বেঁচে যাওয়া মরে যাওয়ার মধ্যে
যে সান্ত্বনার ছন্দ
যে বঞ্চনার বিলাসিতা
যে দৃঢ়তার আহ্লাদ
সেসব কি কেউ জানতে পারে কোনদিন ?
শত সহস্র মনে প্রতিদিন ভালবাসা
প্রেমের যে অবনমন
বেঁচে থেকে কেবল ,
বেঁচে না থাকার যে যুক্তি খুঁজে চলে
সেই মানুষের বিদ্রোহের খবর
কেউ কি জানতে পারে কোনদিন ?
তোমরা কেবল জন্ম দেখো
বৃদ্ধি দেখো ,
প্রজন্ম দেখো ,
অথবা মৃত্যু দেখো ,
অথবা কিছুই দেখার মত প্রয়োজন পড়ে না !
এই দেখা অদেখার মধ্যে
তোমরা বেঁচে যাও , মরে যাও
শত্রুতা করো , মিত্রতা করো
অথবা কিছুই না করার মত
অপরাধ করো ।
সেসব কি কেউ জানতে পারে কোনদিন ?
আমি দেখি
নতুন হৃদয়েরা আসে, অন্ধকারের রঙ নিয়ে;
প্রতিদিন অন্ধকার বাড়ে
ধীরে ধীরে ;
মন থেকে অন্য কোন মনে
হৃদয় থেকে অন্য কোন হৃদয়ে !