আমাদের এই শহরেও উষ্ণতা আছে।
প্রতি বছর শীতের উষ্ণ আবেগ নিয়ে
বইমেলা আসে—
কয়েকটা দিন মাঠের চত্বর জুড়ে
নতুন বইয়ের ম-ম গন্ধে মাখামাখি,
কী এক পুরনো গন্ধ ঘাই মারে বুকে,
কোথাও গরম কফির ফেনায়িত কাপে
ধোঁয়া ওঠে... মননে মনন জোড়ে!

এইসব ঝাপসা ধোঁয়া পেরিয়ে,
অতিমারীর কাল পেরিয়ে..
দৃশ্য বদল হয়—
জীবনের সব পাপতাপ ধুয়ে মুছে
কাঁধে শান্তিনিকেতনী ব্যাগ ঝুলিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে কয়েকটা পাগল আসে
এই উৎসব মুখর সন্ধ্যায়,
বর্ণমালার মৃদুরাগিণীর ছায়াতলে
ওদের বারোমাসের ১৪তম পার্বণে।
অজস্র বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে
কত দর্শনের জার্নাল উড়ে যায়..
এ শহর ছাড়িয়ে পৃথিবীর কোণে কোণে।
বইপাগলদের পদচারণায় ধুলোর ভেতর
ঘাসের ভেতর যেন মাটির সেতার বাজে,
বইয়ের পৃষ্ঠায় শব্দমালার শব্দহীন দহনে
মগজে নিরন্তর বেজে চলে মহাপ্রাণধ্বনি!
সন্মোহনে, স্বপ্নে?.. নাকি আত্মচেতনে?
জ্ঞানচক্ষুর আলোয় ভাসতে থাকে
চেতনার কিছু কবুল শিখে নেওয়ার দৃশ্য।

এভাবেই দৃশ্য থেকে দৃশ্য বদল হয়
বইমেলার শেষ দৃশ্যে ঘন্টাধ্বনি বাজে,
ঘন্টাধ্বনির অনুরণনে
বইয়ের সমুদ্রে ভেসে যেতে যেতে
শীতল অবগাহনে ধুয়ে যায়
মনের দীর্ঘ মলিনতার যত তেলচিটে..
মানুষের কাম-ক্রোধ, লোভ-লালসার মত
বইপ্রেমী কিছু পাগলের জিহ্বাগ্রে
স্বচ্ছতার বিভোর পাগল জলের খেয়ালে;
বইমেলা রেখে যায়, .. অনন্ত জ্ঞানপিপাসা!