আজ যে কবির কবিতা পড়বো তিনি কবি কবিতা সিংহ (১৯৩১  -১৯৯৮) । কবির জন্ম ১৯৩১ ১৬ অক্টোবর, কলকাতায় ভবানীপুরে। খুব ছোট বয়স থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন। তাঁর মা অন্নপূর্ণা সিংহকে কবিতা লিখতে ও ছবি আঁকা দেখেই তাঁর কবিতা লেখা ও ছবি আঁকতে শেখা।  বাবা শৈলেন্দ্র সিংহ সেতার বাজাতেন। মায়ের উৎসাহে নাচ ও শেখেন।  কবিতা সিংহ মনে করতেন, নাচ আর ছবি আঁকাই তাঁর জীবনে দান করেছে ছন্দ আর বর্ণ দিয়েছে শরীরের স্ফূর্তি, স্বাধীন বিকাশের আনন্দ। কবিতার জীবনের  সবখানি জুড়েই ভাস্বর হয়ে ছিল তাঁর মায়ের প্রভাব। সেই সময়কার পরিস্থিতি অনুসারে  সিংহ পরিবারে ছেলেদের জন্যে ছিল সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, আর মেয়েদের জন্যে অতি সাধারণ বেলতলা গার্লস। এই বেলতলা গার্লস স্কুলেই পড়তেন কবিতা সিংহ। ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে অসমতার চিত্র দেখেই বড় হন তিনি। তাঁর সাহিত্যের একটা বড় জায়গা অধিকার করে থাকে এই অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।  ১৯৪৬ সালে পনেরো বছর বয়সে নেশন পত্রিকায় প্রথম কবিতা সিংহের কবিতা প্রকাশিত হয়। সেটি ‘সম্ভবত একটি ইংরেজি কবিতা। ষোলো বছর বয়সে আনন্দবাজার পত্রিকায় কবিতা সিংহ লিখতে শুরু করেন। ‘আর্ট ও নারী’- বিজ্ঞাপনে নারীশরীরের ব্যবহার নিয়ে লেখা ছিল এই লেখাটি। এর বেশ কয়েক বছর পরে  এক বিখ্যাত ইংরেজি চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক সিনে অ্যাডভান্সের মেয়েদের পাতা সম্পাদনা করতেন তিনি। স্কুলশিক্ষা শেষ করে কবিতা সিংহ ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিন্তু বাড়ির অমতে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ১৯৫১-তে বিমল রায়চৌধুরীকে বিয়ে করেন।দুজনেই বিএসসি পড়তেন, স্বামী বিমল রায়চৌধুরী তখন পড়তেন স্কটিশ চার্চ কলেজে।  বিয়ে পরে পড়া বন্ধ হলেও বিয়ের সাত বছর বাদে স্বামীর উদ্যোগে আবার পড়াশোনা শুরু করেন  বিমলবাবু সাথে। দুজনই গ্র্যাজুয়েট হন। কবিতা সিংহ যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে বোটানিতে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন।  কবিতা সিংহের স্বামী বিমল রায়চৌধুরী (১৯৩০-৭৬) ছিলেন রংপুরের জমিদার মনীন্দ্র রায়চৌধুরীর ছেলে। তিনি কবিশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ছদ্মনামে গল্প লিখতেন। বিয়ের পর বেশ কয়েকটা বছর সময়টা খুব কষ্টে কেটেছে কবিতা সিংহের। অভিজাত পরিবার থেকে চলে আসেন কষ্টের জীবনে, জীবনের সঙ্গে অনবরত যুদ্ধ করতে-করতে চলতে হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পেশার মধ্যে দিয়ে কেটেছে কবিতা সিংহের এই সময়ের জীবন। সাংবাদিকতার জন্য  গ্রামে, বস্তি, যুদ্ধবিধ্বসত্ম বাংলাদেশে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তর ও দুর্গম অঞ্চলে গেছেন। আবার বিলাস-ব্যসনে মত্ত সমাজের ওপরতলায় তাকে ঘুরে বেরাতে হয়েছে মিশতে হয়েছে। এর পর তিনি আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে যোগ দেন ও পরে প্রথম মহিলা অধিকর্তা হন। সারা জীবনে সাহিত্যের সেবা করে  ১৯৯৮-এর ১৭ অক্টোবর (ছোট মেয়ের কাছে বস্টনে) মৃত্যু হয় কবিতা সিংহের।


বাংলা কবিতা তাঁর হাত ধরেই প্রথম খুঁজে পেয়েছিল নারীর নিজস্ব ভাষা। তাঁর পরবর্তীকালে মেয়েরা তাঁদের সাহিত্যরচনায় সমাজে মেয়েদের বঞ্চনা, অসহায়তার প্রসঙ্গকে সোচ্চারে, সাহসিকতার সঙ্গে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন তাঁর হাত ধরেই। সমাজের নানাধরনের পীড়নের বিরুদ্ধে বার বার ধ্বনিত হয়েছে কবির স্বর। দলিত সত্তার প্রতি অবিচারের প্রতিস্পর্ধী স্বর, যৌনতার রাজনীতি-অভিসন্ধির বিরুদ্ধে, শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে। সমাজের নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি তার স্পষ্ট বক্তব্য রেখে গেছেন। মেয়েদের জীবনে শ্রেণি এবং লিঙ্গ এই দুটি পরিচয়ই যে তাদের স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে তা বার বার প্রকাশ পায় কবির লেখাতে। কবিতা সিংহের কলমে দেখা গেছে মেয়েদের যোগ্য স্বীকৃতির প্রত্যাশা। পাঁচের দশকে দাঁড়িয়ে যৌনতা নিয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে পারেন তিনি। তিনি ভাষা দিতে পারেন মেয়ে দের নিজস্ব ভাষায়। খুব চমৎকার উদাহরন পাওয়া যায় কবিতায়। যেমন, কবিতা সিংহের কাব্যের কোনো ঈশ্বর নেই, আছেন ঈশ্বরী। তিনি একা, তিনি নিরীশ্বর। নারী এবং কবিতাকে একইসঙ্গে মিলিয়ে দেন কবিতা সিংহ। বাংলা সাহিত্য-সমালোচনার জগতে খুব বেশি আলোচনা খুঁজে পাওয়া যায় না কবিতা সিংহকে নিয়ে। তাকে স্বীকৃতি দিলেও বার বার জুড়ে দেওয়া হয়েছে তিনি ‘মহিলা কবি’। কিন্তু কবি নিজে চেয়েছিলেন কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে। কিন্তু আজ এই সময় দাঁড়িয়ে তার লেখা পড়তে পড়তে মনে হয় তার কবিতা পুরো সমাজের কথা, প্রতিটি লড়াই করা প্রন্তিক মানুষরে কথা। সময়ের প্রক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কবির লেখায় ভাষার ব্যবহার বার বার মুগ্ধ করে যায়।  


কাব্য গ্রন্থঃ কবিতা সিংহর শ্রেষ্ঠ কবিতা, রক্তাক্ত গম্বুজ, মোমের তাজমহল, একদিন আশালতা, পৌরুষ, সহজসুন্দরী, সপ্তদশ অশ্বারোহী, সোনারূপার কাঠি, পাপ পূর্ণ পেরিয়ে, চারজন রাগী যুবতী, কবিতা পরমেশ্বরী,  হরিণা বৈরী,  প্রভৃতি।


আবৃতির লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=N5qkpZ2oZRA


অপমানের জন্য ফিরে আসি -- কবিতা সিংহ

অপমানের জন্য বার বার ডাকেন
ফিরে আসি
আমার অপমানের প্রয়োজন আছে!

ডাকেন মুঠোয় মরীচিকা রেখে
মুখে বলেন বন্ধুতার ... বিভূতি ...
আমার মরীচিকার প্রয়োজন আছে।

অপমানের জন্য বার বার ডাকেন
ফিরে আসি
উচ্চৈঃশ্রবা বিদূষক-সভায়
শাড়ি স্বভাবতই ফুরিয়ে আসে
আমার যে
কার্পাসের সাপ্লাই মেলে না।

অপমানের জন্য বার বার ডাকেন
ফিরে আসি
ঝাঁপ খুলে লেলিয়ে দেন কলঙ্কের অজস্র কুক্কুর ...
আমার কলঙ্কের প্রয়োজন আছে !

যুদ্ধরীতি পাল্টানোর কোনও প্রয়োজন নেই
তাই করমর্দনের জন্য
হাত বাড়াবেন না।
আমার করতলে কোনও অলিভচিক্কন কোমলতা নেই


দীন -- কবিতা সিংহ

আমি আজ নত হতে চাই
নত হতে চাই এই পথের ধুলার মধ্যে
দীনাতিদীনের মত ...
মত নয়, দীন অতি দীন!

কি পায় তাহারা? যারা মুখে অত শান্তি নিয়ে
হেঁটে যায় সন্তর্পণ
কি চায় তাহারা যারা কোনওদিন পুজোর খুশিতে
প্রসন্ন ভীড়ের স্রোত ঈর্ষা করেনি?

একবার ধুলো মেখে নিলে, একবার পথ
একবার রগড়ালে পথের পাথরে মুখ,... 'ঈশ্বর, ঈশ্বর'
দেখো বৃথা দিন যায় ... দিন যায় দিন
সেইসব মানুষেরা যাদের ক্রন্দন ঘোরে শূন্যে শূন্যে
কোনও তারহীন

আমি কি তাঁদেরও পায়ে, তাঁদেরও চরণ রজে
রজের ভিতরে নত হয়ে এজীবনে, কখনও, কোনওদিন
জানবো না, কাকে বলে দীনাতিদীনেরও চেয়ে দীন?


কবিতা -- কবিতা সিংহ

ছেড়ে যেও না...  থাকো!
ও আমার বাজারে না বিকোনো
লোহার অলক্ষ্ণী।
অশুভ রমণী, তুমি থাকো।

এই দেখো, যশ অর্থ কাম মোক্ষ
সব ফেলে দিয়ে
নিঙড়ে ধরেছি আয়ুষ্কাল
অয়ি তৃষাতুরা

তুমি শুষে নেবে বলে দেখো!
এই দেখো একেলা রাত্রির কালো
নিকষ-বিড়াল
নির্নিমেষ তারার নখরে
শরীর আঁচড়ায়, আর চিহ্ন আঁকে
কেবল তোমার!

ছেড়ে যেও না...  থাকো!
তুমিই আমার একমাত্র ধর্ম হও
আগুনের যেমন দাহিকা!
আমি যেন সৎ হই তোমার অ্ঙ্গারে
এই একা সতিদাহে পাশে পাই
তোমাকে কেবল!

হল্কার অস্থির মারে ভেঙে দাও
আমার কপাল।


বিসর্জনের পর -- কবিতা সিংহ

বিসর্জনের পর বুঝেছি জেনেছি
একদিন পুজো হয়েছিলো।
আজ তাই অন্ধকারে ফিরে ফিরে
অকাল বোধন।

তারপর চোখ চুল হাসি কথা
টুপটাপ অন্ধকারে ফেলে
বাড়তি আত্মার কাছে জেনে নিই
কাকে বিসর্জন?

জেনে নিই কে কার প্রতিমা।


ঈশ্বরকে ঈভ -- কবিতা সিংহ


আমিই প্রথম
জেনেছিলাম
উত্থান যা
তারই ওপিঠ
অধঃপতন !


আলোও যেমন
কালোও তেমন
তোমার সৃজন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।


তোমায় মানা
বা না মানার
সমান ওজন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।


জ্ঞানবৃক্ষ
ছুঁয়েছিলাম
আমিই প্রথম
আমিই প্রথম
লাল আপেলে
পয়লা কামড়
দিয়েছিলাম
প্রথম আমিই
আমিই প্রথম।


আমিই প্রথম
ডুমুর পাতায়
লজ্জা এবং
নিলাজতায়
আকাশ পাতাল
তফাৎ করে
দেওয়াল তুলে
দিয়েছিলাম
আমিই প্রথম।


আমিই প্রথম
নর্ম সুখের
দেহের বোঁটায়
দুঃখ ছেনে
অশ্রু ছেনে
তোমার পুতুল
বানানো যায়
জেনেছিলাম
হেসে কেঁদে
তোমার মুখই
শিশুর মুখে
দেখেছিলাম
আমিই প্রথম।


আমিই প্রথম
বুঝেছিলাম
দুঃখে সুখে
পুণ্য পাপে
জীবন যাপন
অসাধারণ
কেবল সুখের
শৌখিনতার
সোনার শিকল
আমিই প্রথম
ভেঙেছিলাম
হইনি তোমার
হাতের সুতোয়
নাচের পুতুল
যেমন ছিল
অধম আদম


আমিই প্রথম
বিদ্রোহিনী
তোমার ধরায়
আমিই প্রথম।


প্রিয় আমার
হে ক্রীতদাস
আমিই প্রথম
ব্রাত্যনারী
স্বর্গচ্যুত
নির্বাসিত
জেনেছিলাম
স্বর্গেতর
স্বর্গেতর
মানব জীবন
জেনেছিলাম
আমিই প্রথম।


খেলা দেখাতে দেখাতে -- কবিতা সিংহ (কিছু লাইন)


খেলা ছিল বাজিকরের, ছিল খেলা
কাটা মুণ্ডের কথা বলা, মড়ার খুলি, জাদুর চেরাগ
আলজিভে জিভ আটকে খেলা
আসল খেলা মধ্যে ছিল


পয়সা ফেলার রঙিন রুমাল মধ্যে ছিল
ছড়িয়ে গেল মড়ার খুলি, জাদুর চেরাগ
.
.
.


খেলা দেখাতে     খেলা দেখাতে     আকামা সাপ হটাত ছোবল
খেলা দেখাতে     খেলা দেখাতে     মরণ-দাতে বিদ্ধ কমল
খেলা দেখাতে     খেলা দেখাতে     আলজিভে জিভ শান্তি! শান্তি!


সহজ সুন্দরী -- কবিতা সিংহ (কিছু লাইন)


চোখে যদি মন ফোটালে
মনে কেন চোখ দিলে না
বদলে তার বদলে
লজ্জা ভুয়ে নোয়ালে।
.
.
.
রক্তে প্রেমের বিষ মেশালে
বিষে কাল ঘুম দিলে না
বদলে তার বদলে
চোখে মন ফুটিয়ে দিয়ে
আঁজলায় যাচনা দিয়ে
বুকে কানা হৃদয় দিয়ে
দুনিয়ায় বেঁধে ঘোরালে
দুনিয়ায় বেঁধে ঘোরালে।


রাত্রি আমার কবিতা -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


১)
কিম্বা অত্যাশ্চারজের রাত্রি, অভিভুত রাত্রি কিবা রাত
চিত শুয়ে আছি রাত্রি, বাজে রে রজনী বাজে বাজে
.
.
.
তারার আঙুল ফল কতকাল দেখাবে সে তারে?


২)
বিশ্বাস করো রাত্রি
ঠিক আমার মতন জ্যান্ত
তার বুকে মাথা রেখে দেখছি --
.
.
.
রাত্রির হাতে হত্যা
লেখা জন্ম থেকেই কপালে
কবে বিধবে কৃষ্ণ ছুরিকা
কবে হে বিশল্যকরণী?


৩)
সাথে কি দিনের লাল উজ্জ্বল করদম দেহে মাখি
অবারিত দিবালোকে পথ হাটি মলিন বসনে,
.
.
.
তবু রাত্রির নেশা নীল মদ বুকে টলমল।


৪)
আকাঙ্খার শিশুর মত অত্যান্ত অবুঝ তাই রাতে
মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে গেলে তাকে ছড়ে দেই
ঘুরে তারা খেলা করে যেমন চাঁদের আলো ছাতে
জট পড়া ইচ্ছের সুতো নিয়ে শুধু খুঁজে ফিরি -- খেই।
.
.
.
ঝরে যায় যেন তার জমে থাকা নিকষ শোণিত।
উষ্ণ ললাট তার রাত্রি ছোয় -- চুমবনের মত।


বিবিকে ফুল মার্কস -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


বুনলি একই পশমে
বিবি তোর চুলের পশমে
দোনা সাতশ পুলোভার
বিবি তোর জোড়া মেলা ভার।


.
.
.


উড়ানো চুমু ছুড়ে দে
শুধু তুমি চুমু ছুড়ে দে
জ্বলছে হৃদয় দু হাজার
বিবি তোর জোড়া মেলা ভার।


ঈশ্বর! ঈশ্বর! -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


গোপনে সবাই খুব বিফলতা ভয় করে
সে সব পাথুরে পথে গেলামই না!
নিজে বিদ্ধ হবে বলে তুমি ছাড়া কে আর ঈশ্বর।
বধ্যভুমে আপনার ক্রুশখানি বহে নিয়ে গেলে,
হাঁ ঈশ্বর! হাঁ ঈশ্বর! কাকে তুমি বিফলতা বলো?


সফলতাগুলি বিফলতা?
...


স্বয়ংক্রিয় -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


একশো চুম্বন পাবে এই লাল সুইচ জ্বালালে
চারশত তোষামোদ, কবিতার উদ্ধৃতিসমেত
আলিঙ্গন
যৌনক্রিয়া
মুগ্ধচোখে চেয়ে থাকা খয়েরি গোলাপি নীল এইসব বিবিধ বোতামে” পাওয়া যাবে “বারো ঘন্টা নাগাড়ে সমানে
মাত্র এক লিটারের পবিত্র ডিজেল বিনিময়ে।


পৃথিবী দেখে না -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


কিছু কি আলাদা রাখো ?


শমীবৃক্ষে, রমণী হে একা?


সত্যকার এলোচুল, সত্যকার রমণীনয়ন


সত্যকার স্তন ?


খুলে রাখো নিজস্ব ত্রিকোণ ?


তারপর চলে যাও বিরাট রাজার ঘরে –


আহা যেন স্মৃতিভ্রষ্ট অজ্ঞাতবাসিনী


খুলে রেখে চলে যাও সত্যকার শ্রোণী…


শমীবৃক্ষে অস্ত্র খুলে রাখো


খুলে রাখো রমণী ধরম


কিম্পুরুষের সঙ্গে ঘটে যায় পৃথিবীর


সমস্ত অফলা সঙ্গম।


পর্নোগ্রাফি -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


সারা দেহ ফালাফালা,  ঢুকে গেছে জলের সোয়াদ
টিনের তোবড়ানো মগে, কলকাতার কলঘরে
উদোম সাগরে
জলের নিকট হতে এ দেহের নিস্তার হল না
জলে খালি দেহ মনে পড়ে  


আছেন ঈশ্বরী -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


কাব্যের ঈশ্বর নেই আছেন ঈশ্বরী।
তিনি একা, তিনি নিরীশ্বর।
ঈশ্বরী কি ধ্বনি দেন? চক্ষুহীন কর্নবিহীন?
না তিনি দেখান তাঁর অঙ্গুলি হেলনে
চক্ষুষ্মান সশরীর কবিতা চেহারা।


তিনি তো ভূমন্ডলে শ্রেষ্ঠ নিষ্ঠুরা – তিনি
তীব্র অপমানমুদ্রা , নীলবর্ণ করতলে করেন ধারন,


দুহতে বিলান নির্বাসন,
ঈশ্বরী কাব্যের যিনি, সাকার তমসা তিনি,
তিনি ঘোর অমা।


বৃদ্ধ বেশ্যা তপস্বিনী -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


হঠাৎ তোমাকে কেন রঙীন অফসেট মনে হলো?
হঠাৎই ল্যাকার করা চুল সিল্কস্ক্রীন শাড়ী
বহু বর্ণে সুশোভিত লেদার বাউন্ড
শরীরে নিখুঁত লাইনো
মলাটে মেডেন ফর্ম হলদে লাল বিবাহ মরশুম
বুদ্ধি করে কে এঁকেছে তোমার কভার?
বিয়ের বাজারে তুমি পড়তে পাবে না নারী,
পড়ার আগেই বিকে যাবে।
.
.
.
মাসীর মেয়েতে আজ ছেয়ে গেছে পেনেটি টেরেটি
এ বয়সে আর কিবা পারি?
ভদ্র বেশ্যা বানানোর টিপস বলে দিই হপ্তায় হপ্তায়
যে ভাবে ঘোড়ার টিপস বলে দেয় দেউলে ঘোড়েল
সেইভাবে কচি কচি খুকিদের ব্যাবসা শেখাই।


ভাঙ্গী রমনীর ক্রোধে -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


ব্রাহ্মন বাটপার
ধরণীর মত কর্ষণে তাকে করেছে রজস্বলা
শাড়ীর সঙ্গে তার উড়েছে ভীরুতা
এখন ভিতরে তার শুধু ক্রোধ,শুদ্ধ ঘোর ক্রোধ,
মন্দিরে যায় নি নারী দেখেনি সে অবিকল
তারই
নগ্ন কালো রক্তজিহ্ব প্রতিমার
অদ্ভুত বিশাল
এলো চুলে কালো স্তর,খড়্গ জ্বলে লাল
স্পৃশ্যতার কূটকচাল আজ জেনে গেছে ভাঙ্গী রমনী।


আজীবন পাথর প্রতিমা -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


মা, আমি কি তেমন হব? রক্ষিতামন্যস্ফীত স্তনিত শঙ্খিনী,
মেডেলে পদকে স্বর্ণে ব্যর্থ বিজয়িনী
শয্যায় পুরুষহত্যা, পিতৃহত্যা শুদ্ধ নয় মাতা,
রণক্ষেত্রে দেখা হবে সম্মুখসমরে তীব্র ইস্পাতের অচিত্র অঙ্গদে।
আমি তো শিখিনি মাতা রমনীয় পশ্চাদপসারন।
.
.
.


হে আমার আদিপিতা, হে আমার আদিম প্রেমিক,
তোমার বিচ্ছেদ দষ্ট যেন কালসর্পদষ্ট দয়িতার ওই মুখ
কোনদিন তুমি দেখলে না,


এসো মা, তোমায় দেখি, আমি তোর ব্রাত্যকন্যা,
আজীবন পাথরপ্রতিমা।


সূর্যস্পশ্যা -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


উরুর কুলুপ ভাঁজ
খুলে যায়।সূর্যশেঁকা বায়ূ ছোঁয় প্রতি পরমাণু।
সূর্য কিভাবে তার ভ্রণগুলি শুক্রকণাগুলি
রক্তের বিম্বগুলি অবিকল সূর্যবিম্ব করে
ঘোরায় বিরলে।
কি ভাবে জগায় তাকে
কি ভাবে ভাসায় তাকে
কি ভাবেত্বকের নীচে গলেযায়, ছেয়ে যায় সোনালী রাঙতা,


সূর্যাস্তেরও পরে হিমরাত্রে নারী জ্বলে সে গূঢ় উৎসারে।


ভ্রূণা -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


আমরা ভ্রূণ না ভ্রূণা
আমাদের জন্ম দিও না মা
মা আমার জেনেশুনে কখনো উদরে
ধরোনা এ বৃথা মাংস
অযোচিত কখনো ধরোনা
.
.
.
হলুদ বসন্তপাখী ডাকুক নির্ভীক স্বরে হোক
গেরস্তের ঘরে ঘরে
খোকা হোক।খোকা হোক।শুধু খোকা হোক।


আলাত পুরুষ -- কবিতা সিংহ  (কিছু লাইন)


যে নারী পেরিয়ে যায় অসংখ্য শিখর
বাচেন্দ্রিপালের গাঢ় হৃদয় নিবেশে
সে কি পায়?
পায় না কিছুই
পাবার জন্য নয় কোন অতিক্রম
অতিক্রম কেবলই হারার পথে পথে লুট হয়ে যায়,
বন্ধু সখা প্রিয় নর পড়ে থাকে নিজস্ব একেলা।


তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট, বিভিন্ন পত্র পত্রিকা কবির লেখা বিভিন্ন বই।
ঋণ :  প্রমিতা ভৌমিক (কালী কলম)
( কবিতা পড়ুন, কবিতা ভালবাসুন, কবিতার বই কিনুন)