কবিতা হল বিস্তৃতরূপ । আর কবি অপরূপ । তাই কবির হাত থেকে কবিতা যখন বেরিয়ে যায় তারপর সেই কবিতা সম্বন্ধে কবির নিজস্ব কোন বক্তব্যই থাকতে পারে না । কবি কি প্রেক্ষাপটে কোন ভাবনাকে সামনে রেখে তাঁর কাব্য রচনা করেছেন সেটা কখনই বিবেচ্য নয় ।


বাদ বাকী ভাবনা বিন্যাস ভাবার্থ বিশ্লেষণ মনন ইত্যাদি সবই পাঠকের । পাঠক তার নিজস্ব মতামত দেবে অথবা দেবে না । তার কবিতা কাব্যিকতা ভাবনা মনন মিলতেও পারে অথবা নাও মিলতে পারে । তাই বলে কাব্যের ভাবনা কখনই শেষ হয়ে যায় না । কেউ যদি ভাল নয় বলে অন্য পাঠক সেটা যে ভাল বলেছে তা বুঝিয়ে দেবে । অথবা যে যার মত করে কাব্য পাঠের রসাস্বদন করবে । সেখানে কবির কিছু করার থাকে না । কেন না ভুল ঠিক কাব্য কাব্যিকতা ইত্যাদি নির্ণায়ক কেউ একা হতে পারে না । কেননা যারা এই চর্চার সঙ্গে যুক্ত তারা কখনই ভাল কবি , মন্দ কবি ইত্যাদি হতেই পারে না ।


কবির কাব্যে যে যাই বলুক তার উত্তর কবির কেবলমাত্র ধন্যবাদ জ্ঞাপন (যদি সম্ভব হয় ) ছাড়া আর কিছু করা উচিত নয় । কেউ যদি খারাপ বা বিরূপ মন্তব্য করে তার উত্তর দেওয়ার জন্য অন্য পাঠক আছে । যেহেতু বর্তমানে অনলাইন সিস্টেম তাই এই ইন্টারঅ্যাকশন চলতেই পারে । যে পাঠকের ভাল লেগেছে সেই-ই জানতে চাইতে পারে কেন খারাপ লাগল অথবা কেন ভাল লাগল । সেখানে কবির ধন্যবাদ জ্ঞাপন ছাড়া নিজস্ব অন্য কোন বক্তব্য থাকা উচিত নয় ।


যদি কোন কবি আবার কবিতাটি বোঝাতে থাকেন তাহলে তাঁর কাব্যে তিনি নিজে বক্তব্য ঠিক পরিস্ফুটণ করতে পারেননি । কেননা কবির হাত থেকে কাব্য বেরিয়ে গেলে ভাবনারও পরিবর্তন ঘটে । সেই অন্য ভাবনায় কে কিভাবে অবগাহন হবে সেটা তার ব্যাপার । যেহেতু কবির সেই পৃষ্ঠায় কোন পাঠক এসেছে তাই সেই পাঠককে যদি সম্ভব হয় কেবলমাত্র ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা উচিত । যদি না সম্ভব হয় করবে না । কিন্তু এর বাইরে কোন বক্তব্য রাখা উচিত নয় । কাব্য সংক্রান্ত তো একেবারেই নয় ।


অন্যে কি বলবে তার জন্য কাব্য বা কোন রচনা লেখা হয় না । যা লেখা বা বলা হয় সবেরই উল্টো পিঠ আছে । বিভিন্ন রকম মানুষের উপস্থিতি , তাই সার্বজনীন ভাল বা মন্দ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পারে । অন্যের কথা যদি শুনবোই না বা জোর করে ভাল বলতেই হবে বা বলাতেই হবে , তাহলে আর অনলাইনে আসার কি দরকার ?


আর একটা কথা কিছু রচনা গল্প ইত্যাদি লেখক ছাড়াও অন্যের পক্ষে সংশোধন করা গেলেও কাব্য সংশোধন করা যায় না । কাব্য আসলে এক সূক্ষ্ম অনুভূতির আলাপন । তাকে অন্যের পক্ষে সংশোধন করে দেওয়া যায় না । কিছুদূর সাথে থেকে কিছু কাব্যপাঠে তা সে নিজেই ঠিক বুঝে নেবে । এই অনুভূতি যে ধরতে পারবে না সে কবি হতেই পারে না ।


দেখা গেছে অনেক জ্ঞানী গুণী কাব্য অনুরাগী এক লাইনও কবিতা লিখতে পারেন না । আবার টিন এজ কি সুন্দর করে গুছিয়ে কাব্য লিখছে ।


তাই কাব্য সম্পর্কে কবির কোন বক্তব্যই থাকতে পারে না । সে কেবল ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবে । অথবা করবে না । অন্য ভাল মন্দের ডিবেট পাঠকরা করবে । কেননা পাঠকের জন্যই কাব্য লেখা হয় সেটা তাদের সম্পত্তি তাই তাতে তারা তাদের মত করে মন্তব্য করবে । তারাই বুঝে নেবে তারা কিভাবে সেই কাব্যকে গ্রহণ করবে ।
ভাল মন্দ থাকবেই । সেখানে পাল্টা বক্তব্যে কবির নিজস্ব কোন ভূমিকা বা অবস্থান থাকতেই পারে না । যদি থাকে তাহলে কাব্যতা সম্পর্কে কবি নিজেই সন্দিহান ।