আমার মনটাকে কেউ যেন
চুরি করে নিয়েছে
কারণ আমার মনটাকে আর
খুঁজেই পাচ্ছিনা ।
গল্পের বই পড়তে গিয়েও
পাইনা খুঁজে আমার মনকে ।
কিছু লিখতে গিয়েও দেখি
মনে কিছুই আসছে না ।
হ্যাঁ ,মনই বোধহয় নেই, তাই
লেখা আসবে কোথা থেকে ।
যাই একটু বেরিয়ে আসি
দেখি, মনটাকে যদি খুঁজে পাই ।
মিষ্টির দোকানে এসে বসি ।
খিদে পেয়েছে ,
কিছু একটা খেয়ে নিই ।
আরে, আরে,
এই তো আমার মন
এই যে দেখো, দেখো,
আমার হারিয়ে যাওয়া
মনটাকে না আমি
আবার খুঁজে পেয়েছি ।
মন এসে বলছে-
কালাকাঁদ খাবো,
ক্ষীরের পানতুয়া খাবো ,
আরো কত কি ।
মনকে জিজ্ঞাসা করি –
‘হ্যাঁরে, আমার প্রিয় মন ।
দশটা নয়, পাঁচটা নয়,
সবেধন নীলমণি
আমার একটা মাত্র মন ।
এতক্ষণ তুই কোথায়
লুকিয়ে ছিলি রে ?
নে,নে, তুই যা চাস
প্রাণভরে খেয়ে নে ।
কোন কিছু পড়ার সময়
তুই কিন্তু ধৈর্য ধরে
আমার কাছেই থাকিস ।
আর লেখালিখি করার সময়
লক্ষ্মীসোনার মতো সবকিছু
আমাকে জানিয়ে দিস ।’
চা-মিষ্টি খাওয়ার পর
মনটাকে একটু সতেজ
বলে মনে হলো ।
হোটেলের বিল মিটিয়ে দিয়ে
বাইরে বেরুলাম ।
রাস্তায় আমার চেনাজানা
কত মানুষকেই তো দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু তাদেরকে ডাকতে বা
তাদের সাথে কথা কইতে
আমার আর একটুকুও
ইচ্ছে করছে না ।
আরে,আরে,আমার মনটা
আবার গেলো কোথায় ?
এই তো মিষ্টি খাওয়ার সময়ে
বেশ উত্ফুল্ল হয়ে ছিল ।
হঠাত্ এক বন্ধুর সাথে দেখা ।
সে জিজ্ঞাসা করলো- ‘কি রে
খুব মনমরা, মনমরা
লাগছে যে তোকে ।
খুলে বল তো দেখি,
তোর কি হয়েছে ?’
‘-যাঃ, আমার মনটা
মরতে যাবে কোন দুঃখে ?
এমনি ভালো লাগছে না
তাই একটু রাস্তায়
ঘুরতে বেরিয়েছি ।
আর আমার মনটা না
তোর থেকেও বেশি চাঙ্গা, বুঝলি ।’
‘-বাহ্‌, বেশ ভালো, ভালো,
তোর-ই তো সময়,
চালিয়ে যা, চালিয়ে যা ।’
‘-আচ্ছা যাই বন্ধু, বিদায় ;
পরে আবার দেখা হবে ।’
বলে এসে বসি পার্কে ।
তাকিয়ে থাকি অস্তগামী সূর্যের দিকে ।
একা একা বসে মনকে জিজ্ঞাসা করি
‘–হ্যারে আমার প্রিয় মন
মাঝে মাঝে তোর কী হয় রে ?
তোকে খুঁজেই পাওয়া যায় না ।’
হঠাৎ আবিষ্কার করি
মন এখন আর
আমার মধ্যে নেই ।
পাখির মতো দুই ডানা মেলে
নীল আকাশে পাড়ি দিয়েছে ,
মেঘের আড়ালে গিয়ে
আমার সাথে লুকোচুরি খেলবে বলে ।
তুলার মতো সাদা সাদা,
রাশি রাশি মেঘ দেখে
আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠি ।
মেঘের ফাঁক দিয়ে দেখি
মনটা গাইতে আরম্ভ করেছে –
কোথাও আমার হারিয়ে
যাওয়ার নেই মানা ।
আচমকা মনে হলো কেউ যেন
একমুঠো আগুন এনে
মনটার দিকে ছুঁড়ে মারলো ।
মেঘগুলিকে লালচে হয়ে উঠতে দেখে
চিত্কার করে চেঁচিয়ে উঠি-
‘ওই-রে আমার হতভাগা মন
তাড়াতাড়ি চলে আয় ।
সূর্যের কিরণে ঝলসে যাবি যে ।
এই আমি চললাম ঘরে ।’
রাতে খেয়ে দেয়ে বিছানায় শুয়ে
বুকে হাত দিয়ে দেখি
কেমন কেমন যেন লাগছে ।
মনটা যেন পাথরে চাপা পড়ে রয়েছে,
বিরাট বড় একটা দুঃখের পাথর ।
উদাস হয়ে মনটা
কবির মতো যেন বলছে –
‘আমি যা চাই, তা ভূল করে চাই;
যা পাই, তা চাইনা ।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি বলে উঠি –
‘ওরে আমার প্রিয় মন
তোর জন্যে আমি কি করতে পারি রে ?’
সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে
স্মরণ করি বন্ধুদের ।
মনে অজান্তেই বলে উঠি
‘ওগো আমার সুদিনের বন্ধুরা
আমার মনটাকে সতেজ ,সবুজ
চিরনবীন করে তুলতে
তোমরা কি আমাকে
সাহায্য করতে পারো না ?’