রাস্তার পাশদিয়ে  হাঁটছি, হঠাৎ করেই চোখজোড়া আটকে গেলো, ময়লার ডাস্টবিনের সামনে বসা একটা ছেলের দিকে। ছেলেটা অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
না জানি কি গভীর ভাবনায় ডুবে আছে।
.
আমি নিজেও আকাশ দেখতে  খুব ভালোবাসি, আকাশের বিশালতায় ডুবে যাই, নিজেকে আবিষ্কার করি সাদা মেঘের ভেলায়, কখনো বা ভাবি মুক্ত ডানা মেলে উড়ন্ত পাখি।
কিন্তু আমার আকাশ দেখা আর ছেলেটার দেখার মাঝে আমার কাছে মনে হচ্ছে বিস্তার ব্যবধান আছে।
.
আমি ওর কাছে গিয়ে ডাকলাম, এই ছেলে!ছেলেটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বলল, কিছু কইবেন আমারে?  আশ্চর্য আমি ছেলেটির মুখদেখে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
এত সুন্দর চাহনি, মাশা-আল্লাহ্ মুখটা এতই নিষ্পাপ যে একপলকেই মায়া জন্মে গেলো ছেলেটির উপর।
.
আমাকে ছেলেটা ডাকলো, আপা আমারে কিছু কইবেন?
আমি থতমত খেয়ে বললাম তুমি এখানে কেন?
পিচ্চি/ছেলেট: খাওন খুঁজি।
আমি বললাম উঠে এসো।
ছেলেটা উঠে এলো।
ছেলেটিকে বললাম চল আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো।
ছেলেটি ভুত দেখার মত অবাক হওয়া দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, আর বলল আমারে?
আমি বললাম হ্যাঁ, চলো।
.
তারপরে ছেলেটিকে সাথে নিয়ে এসে হোটেলে বসালাম যা খেতে চাইলো তাই খাওয়ালাম। খাওয়া শেষ
হওয়ার পরে ছেলেটিকে কিছু প্রশ্ন করলাম।
আমি:কী নাম তোমার?
ছেলেটির উত্তর ছিল : জানিনা।
তয় সবাই আমার পিচ্চি কয়।
আমি আবার বললাম তোমার বাসা কোথায়? পিচ্চি: বলল নাইক্কা।
আমি : তুমি কই থাকো?  
পিচ্চি: কমলাপুর ইস্টেশন।
আমি: তোমার বাবা মা কই থাকে?
পিচ্চি : আমার মায় পাগল আছিলো একদিন হঠাৎ কইরা কি জানি হইল কইতে পারিনা, নাক মুখ দিয়া রক্ত উইট্টা মইরা গেলো, আর বাপ কে কইতে পারিনা।
আমি অবাক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে।
ও জানেনা ওর বাবা কে?
পিচ্চি : জানেন মায় তো পাগল আছিলো বাপের কথা জিগাইলেই খালি কানতো আর নিজের শরীর নিজেই কামড়াইত, পড়ে হতাশ হইয়া নিজেই বাদ দিছি জিগান। মায় মরছে তাও আইজ পাঁচ বছর।এই রাস্তার ধারে বইয়া থাকি আর আকাশ দেহি,
অনেক কথা জানতে ইচ্ছাকরে, কিন্তু এই পৃথিবীর কারো কাছেই আমার প্রশ্নের উত্তর নাই।
.
কেউ কইতে পারে না আমার পরিচয় কি। আচ্ছা আপা আপনে কন তো কার কাছে গেলে আমার এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাইব? আমি ভাষাহারা হয়ে তাকিয়ে থাকি ওর মুখের দিকে, নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে এলো,দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো মাটিতে
.
ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল আফা কান্দেন ক্যা আমি একা না এই পৃথিবীতে, আমার মতো আরো অনেকেই আছে। হয়ত আমার চাইতেও আরো কষ্টে আছে। আমি ভালই আছি, নিজের খাওন নিজেই জোগার করি। তয় আফা একটা কষ্ট মনে,আমারে কেউ নাম ধইরা
ডাকেনা। আফা আপনে আমারে একটা নাম দিবেন?
.
আমি : অস্ফুট কণ্ঠে বললাম, রাজা।
পিচ্চি হেসে দিয়ে বলল আফা আপনে কি মশকরা করলেন আমার লগে?
আমি ওর হাত ধরে বললাম, না।
তুমি রাজা তোমার ভুবনের তুমিই রাজা।
তাই আজ থেকে তোমার নাম রাজা।
.
ছেলেটার চেহারায় কেমন এক অদ্ভুত আনন্দ খেলে গেলো, আমাকে বলল আইজ আমি অনেক খুশি, আইজ আমার নাম পাইলাম। তারপরে আমাকে সালাম দিয়ে আমার সামনে থেকে হাসতে হাসতে চলে গেলো,,
.
আমি অপলক তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার পথে। আমি ওরে কিছুই দেইনি তবুও ও প্রাণখুলে হাসতে পারছে।
কিন্তু আমি পেলাম কিছু প্রশ্নবোধক চিহ্ন?
যার উত্তর আমি কখনওই পাবো না।


২৬/১/২০১৮ সময় রাত ৩: ৫৮