যদি বস্তুবাচক ও প্রাণিবাচক অর্ধ-তৎসম শব্দের শেষে ই-কার থাকে তবে (ি)-কার হবে। যথা-


বস্তুবাচকঃ বাড়ি, গাড়ি, শাড়ি, চাবি প্রভৃতি।


প্রাণিবাচকঃ পাখি, হাতি, মুরগি প্রভৃতি।


দেশ, জাতি এবং ভাষার নাম লিখতে সবসময় ই-কার অর্থাৎ(ি)-কার হবে। যথা-


দেশঃ গ্রিস, গিনি, জার্মানি, ইতালি, হাইতি প্রভৃতি।


জাতিঃ বাঙালি, তুর্কি, জাপানি, পর্তুগিজ প্রভৃতি।


ভাষাঃ হিন্দি, আরবি, ইংরেজি, ফারসি, নেপালি প্রভৃতি।


তৎসম স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার অর্থাৎ (ী)-কার হবে। যথা-


স্ত্রী, জননী, নারী, সাধ্বী, যুবতী, তরুণী, মানবী প্রভৃতি।


বিদেশি শব্দের বানান বাংলায় লিখতে ‘ষ’ ও ‘ণ’ এর স্থালে ‘স’ ও ‘ন’ হবে। যথা-


ইসলাম, স্টেশন, ব্যারিস্টার, খ্রিস্টাব্দ, স্টুডিও,,স্টুডিয়ো, বামুন, ফটোস্ট্যাট, কর্নেল, কর্নার প্রভৃতি।


যে ব্যঞ্জনবর্ণের উপর রেফ (্‌) থাকে সেই বর্ণ দ্বিত্ব হবে না। যথা-


মাধুর্য, কার্তিক, নির্দিষ্ট, ধর্মসভা, পর্বত, কার্যালয়, কার্য প্রভৃতি।


যে কোন শব্দের বানানের শেষে যদি জগৎ, বাচক, বিদ্যা, সভা, ত্ব, তা, নী, ণী, পরিষদ, তত্ত্ব প্রভৃতি শব্দ থাকে তবে এর পূর্বে ঈ-কার এর পরিবর্তে ই-কার অর্থাৎ (ি)
-কার হবে। যথা-


প্রাণী+বিদ্যা= প্রাণিবিদ্যা।


মন্ত্রী+সভা= মন্ত্রিসভা।


প্রতিদ্বন্দ্বী+তা= প্রতিদ্বন্দ্বিতা।


কৃতী+ত্ব= কৃতিত্বব


সঙ্গী+নী= সঙ্গিনী প্রভৃতি।


বাংলা বানান লিখতে সর্বদা উর্ধ্বকমা এবং হস্‌চিহ্ন বর্জন করতে হবে। যথা-


হ’ল (অশুদ্ধ)= হল (শুদ্ধ),


দু’টি (অশুদ্ধ)+ দুটি (শুদ্ধ),


যেসব বাংলা বিশেষণবাচক শব্দের শেষে আলি থাকে সেসব শব্দের শেষে ই-কার অর্থাৎ (ি)-কার হবে। যথা-


সোনালী (অশুদ্ধ)= সোনালি (শুদ্ধ)।


রূপালী (অশুদ্ধ)= রূপালি (শুদ্ধ)।


মিতালী (অশুদ্ধ)= মিতালি (শুদ্ধ)।


খেয়ালী (অশুদ্ধ)= খেয়ালি (শুদ্ধ)।


বিস্ময়সূচক অব্যয় এর ক্ষেত্রে (যথা- বাঃ/ছিঃ/উঃ প্রভৃতি)ব্যতিরেকে বাংলা যেকোন বানানের শেষে বিসর্গ (ঃ) হবে না। যথা-


প্রথমতঃ (অশুদ্ধ)= প্রথমত (শুদ্ধ)।


প্রায়শঃ (অশুদ্ধ)= প্রায়শ (শুদ্ধ)।


বস্তুতঃ (অশুদ্ধ)= বস্তুত (শুদ্ধ)।


প্রধানতঃ (অশুদ্ধ)= প্রধানত (শুদ্ধ)।


কার্যতঃ (অশুদ্ধ)= কার্যত (শুদ্ধ) প্রভৃতি।


বাংলায় সন্ধি বানানের প্রথম পদের শেষে ম্‌ আর সন্ধিস্থ পদের মধ্যস্থিত ক, খ, গ, ঘ এর পূর্বে ম্‌ থাকলে অনুস্বর অর্থাৎ (ং) লেখা যাবে। যথা-


অহংকার (অহম+কার), ভয়ংকর, সংগৃহীত, শুভংকর, সংঘটন হৃদয়ংগম প্রভৃতি।


এছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে ক, খ, গ, ঘ এবং ক্ষ-এর পূর্বে নাসিক্য বর্ণ যুক্ত করার জন্য সর্বত্র ঙ লিখতে হবে। যথা-


অঙ্ক, আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি।


বাংলা বানানের অদ্ভুত-এর ভুত শব্দটি ব্যতীত অন্যান্য সকল বানানের ক্ষেত্রে ভূত হবে।


যথা- অদ্ভুত (এটি ব্যতীত), অভিভূত, অর্ভতপূর্ব, অঙ্গীভূত, একীভূত, দ্রবীভূত, প্রভূত, বশীভূত, পরাভূত, সম্ভূত, উদ্ভূত, আবির্ভূত প্রভৃতি।


ই-কার যুক্ত বর্ণের ক্ষেত্রে ‘ষ’ আর ই-কার যুক্ত বর্ণ ব্যতীত বা মুক্ত বর্ণ এর ক্ষেত্রে ‘স’ হবে। যথা-


ই-কার যুক্ত বর্ণঃ আবিষ্কার, পরিষ্কার, জ্যোতিষ্ক, নিষ্কলঙ্ক, নিষ্কর প্রভৃতি।


ই-কার যুক্ত ব্যতীত বা মুক্ত বর্ণঃ নমস্কার, পুরস্কার, তিরস্কার প্রভৃতি।


যে সকল তৎসম শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় যুক্ত শব্দ শুদ্ধ কেবল সে সকল শব্দে ই বা উ এবং তার কারচিহ্ন ি ও ু ব্যবহৃত হবে। যথা-


কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, পদবি, ভঙ্গি, মসি, লহরি, সরণি, সূচিপত্র, উষা, ধূলি, পঞ্জি, মঞ্জরি প্রভৃতি।


উপরিউক্ত বাংলা শুদ্ধ বানানের নিয়মাবলী যথাযথভাবে অধ্যায়ন করলে আপনি নিজে নিজেই শুদ্ধ বাংলা বানান লিখতে পারবেন


বর্ণালী (অশুদ্ধ)= বার্ণালি (শুদ্ধ) প্রভৃতি।


চট্‌ (অশুদ্ধ)= চট(শুদ্ধ),


চেক্‌ (অশুদ্ধ)= চেক (শুদ্ধ)প্রভৃতি।