জন্মক্ষণে দেহ সৌষ্ঠব, রূপচ্ছটা হেরি
রত্নাকর নাম রাখেন পিতা আগ্রহ করি।  
ধীরে ধীরে চাঁদের মত যৌবন প্রাপ্তি হয়
দেহে যত শক্তি ধরে, মনে তার বেশী রয়।
গরীব ঘরের সন্তান, হয় না রত্নের বিকাশ
দেহের শক্তি সম্বল করি, হয় দস্যু রত্নাকর।
যাহা যাহা লাভ করে দস্যুবৃত্তি করি  
তাহা আনি দেয় মাতায় অতি যত্ন করি।
এই ভাবে দিন কাটে, নাই অভাব বোধ
বিক্রমে যোগায় অন্ন, নাই পাপ বোধ।
একদা জালে ধরা পরে দুই মুনিবর
যাহা সম্পদ আছে দাও, বলে রত্নাকর।
একরাশ হাসি হেসে কন এক মুনিবর
হবে হবে যাহা আছে সব তোমারি সম্বল।
রত্নাকর বিস্ময়ে ভাবে এরা কেমন মানুষ
ভয় নাহি করে মোর প্রবল-বিক্রম।
মুনিবর কহেন বাছা, কেন কর এই কাজ
অপরের ক্ষতি করা, তার নাম পাপ।
পাপের ভার মহা ভার, মহা কষ্ট তার
কার লাগি কর ইহা, কে লইবে ভার।  
যাহার ক্ষতি কর তুমি সে করে গালা-গাল
কে জানে কেমন করে তাহা হয় প্রত্যাঘাত।  
শোন মুনিবর, কহে রত্নাকর, না  পাত ইন্দ্রজাল
যাহা আছে দাও, দিয়ে হও, আজির তরে উদ্ধার।  
পাপ যদি করে থাকি, পাপের ফল সবে ভাগ করে খাই
পাপের বোঝা সবে ভাগ করে নেব, কোন শঙ্কা নাই।
সোহাগ ভরে কহেন মুনি, শোন বলি তোমায়
পাপের বোঝা ভাগ নাহি হয়, যে করে তাহার।
যদি চাহ শুধিতে পার, গৃহের সকল জনে
লয় কিনা কেহ, এই বোঝা ভাগ ক’রে।  
রত্নাকরের এবার বুঝি হইল মহা সঙ্কট  
একদিকে শিকারের ভয় অন্য দিকে পাপ।
মনের ভাব লক্ষ্য করি কহে মুনিবর
নির্ভয়ে যাও গৃহে, মোদের করিয়া বন্ধন।  
শক্ত লতা লয়ে, বন্ধন করি, দুই মুনিবরে  
নিশ্চিন্ত হইয়া দস্যু যায় গৃহ-অভিমুখে।  
একে একে শুধেন সবে মাতা-পিতা-ঘরণীরে
উত্তর শুনে, যেন সকল পাপ ধরে রত্নাকরে।  
বিলম্ব নাহি করি, ভয়ে-শঙ্কায় দ্রুত চলে বনে
মুক্ত করে আগন্তুকে, মুক্তি চাহে পাপ হতে।
শোন কথা মোর, কহে মুনিবর, সমব্যথী হয়ে
মানুষই পাপ করে, মানুষই পুণ্য লভে।
এই পৃথিবীতে পুণ্যদাতা আছেন শ্রী রাম
তাঁর পুণ্য-নামে নাশ হয় যত আছে পাপ।  
অতিকষ্টে, অতি যত্নে, রাম নাম জপ করে
পদ্মাসনে বসি, একান্তে চিন্তে, শ্রীরাম-পদে।      
রাম-ভক্তিতে চিত্তে হইল প্রেমের অভ্যুদয়  
প্রভাবে যার হইল মনের সকল পাপের ক্ষয়।
রত্নাকরের গর্ভ হইতে সকল রত্নের হইল প্রকাশ
দস্যুরাজ হয়ে যায় বাল্মীকি কবি-মহারাজ।  
জয় জয় প্রভু রাম, জয় রাম-নাম
তোমার কৃপায় হয় রত্নের বিকাশ।।