শব্দের নিস্তব্ধ হাহাকারে মাঝ রাতে ঘুম ভাঙে আমার
আমি অপেক্ষায় থাকি।
সেই কবে একদিন আমার হাত ছুঁয়ে বলেছিলে,
রাতের শেষ প্রহরে যে ট্রেনটি ছেড়ে যাবে মধুখালী জংশন থেকে
সে ট্রেনেই তোমাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হব আমি!
শিউরে উঠেছিলাম সেদিন; নির্বাক নির্নিমেষে দেখছিলাম তোমার চোখ।


রাতের অন্ধকার মিইয়ে আলো ফুটলো,
দিন গিয়ে আবার সন্ধ্যা হলো, মাস আরও কতগুলো—
বছরও পেরিয়ে গেল নিয়ম করে।
তুমি আজও এলে না শ্রী,কেন এলে না
সে উত্তরটাও জানা হলো না আমার,


শুধু অমীমাংসিত কিছু শব্দ আর অজানা এক সমীকরণের সখ্যতায়
এখনো বেঁধে রেখেছি নিজেকে।


মাঝে মাঝে জানাতে ইচ্ছে করে—
কেনই বা বেঁচে আছি এখনো! উত্তর পাই না
কেবলই মনে হয় তুমি আসবে এই মধুখালী জংশনে।
এ আমার জীবন কাটে সাগর-নদী-জোৎস্না দেখে
তোমার কথা ভেবে ভেবে অশ্রু ঝরে বুকের মাঝে।


ওগো,তোমাকে হারাবার কোনো ভয় ছিল না আমার
শুধু ভয় ছিল তোমাকে পাবার, জানি—
মরু হাওয়াকে বেঁধে রাখা যায় না কোনো ভাবেই,
না খাঁচায়; না শিকলে, না দেহে ; না ভালোবাসায়— তবুও
তোমাকে ধরে রাখার আমার এই নিবেদন ছিল তোমারই প্রত্যাশিত।


শেষ বার তোমার হৃৎস্পন্দনে শুনেছিলাম—
অনন্ত লোকের গান,
যে হুতাশনের অন্তিমে থাকে মহাপ্রেম আর অবিনশ্বর ভালোবাসা—
তারই পূর্ণ স্নানে চেয়েছিলাম ধন্য হতে, এ ছিল আমার ব্রত।
বিশ্বাস করো—তোমাকে ভেবে ভেবে নিবিড় কোনো রাতে
উত্তাল করে রাখিনি; রোমাঞ্চিত যমুনা আমার—
কোনো জৌবিক বা বাহুবাসের মধুরতায়, ধন্য হতে চাইনি কোনো দিন।


সে রাতে সব ছেড়েছুড়ে পথে নেমে এসেছিলাম তোমাকে পাবার আশায়
সন্ধ্যা তারাগুলো পথ চিনিয়েছিল আমাকে, আর
তুমিই চিনিয়েছিলে ওই সব নক্ষত্রদের একদিন।
রাত নামাতে শুরু করল, স্টেশনে একা আমি
তুমি একবারও বুঝতে চাইলে না শ্রী,


কতটা বিড়ম্বনায় কেটেছিল সে রাত


তার পর ছোট একটি ঘর ভাড়া নিলাম


মধুপুর জংশনের পাশেই
কারণ, বাড়ি ফিরে যাবার আর কোনো উপায় ছিল না আমার,
সেই থেকেই এই আমি অপেক্ষমান দিনরাত!


তোমার স্মৃতিগুলো অদ্ভুত অনুশীলনে ঘিরে থাকে আমায়
কিছুতেই তাড়িয়ে নিতে পারি না দূরে
মনে হয় পরিশীলিত,জীবন্ত


এখন আমার কালো চুলের আড়ালে


দাঁত কেলিয়ে হাসতে শুরু করেছে সাদা চুলের বহর
নন্দিত তনুর অলিগলিতে দেখি বয়সের ভাঁজ
এখনও নিবিড় রাতে ট্রেনের হুইসেল শুনে ছুটে যাই স্টেশনে
দুচোখে অবিরাম অশ্রুর খেলা চলে, আমার—


দিন কাটে না, রাতে কাটে না, কেবলই মনে হয়
কখন যেন তুমি এসে বলবে—


চলো আমি এসেছি
সেদিনের পর থেকে আর একটি রাতও ঘুমোতে পারিনি আমি
তুমি আর কবে আসবে,ততদিনে কি চিনে নিতে পারবে আমায়
ফিরে এসো, ফাগুনের রাতে সন্ধ্যামালতি হাতে
ফিরে এসো এই মধুপুর জংশনে
তুমি বুঝবে না কেমন করে এক একটি দিন হয়ে ওঠে সহস্র দিনের সমান
ফিরে এসো শ্রী, ফিরে এসো।