ধরা যাক, কুড়ি বছর পরে,


ফাগুন বেলার রৌদ্র ছায়ার খেলা
প্রায় সাঙ্গ হওয়ার শেষে কিংবা পাতা ঝরার শুরুর মুহূর্তে,
হঠাৎ যদি হই মুখোমুখি, সে এবং আমি;


হয়তো কোনো দূরপাল্লার দারুন গতিময় ট্রেনের কামরায়,
অথবা ব‍্যস্ত শহরের কোনো ব‍্যস্ততম চৌরাস্তার মোড়ে--
যেখানে নিত‍্য স্বপ্ন কুড়োতে আসে কয়েক হাজার নিরেট মাথা,
নাহয় কোনো নির্জন স্রোতহীন নদীর ধারে,
হঠাৎ দেখা, কুড়ি বছর পরে।


ততদিনে বাহারী সালোয়ার কামিজের অভ‍্যেস ছেড়ে ,
দিব‍্যি গায়ে তুলে নিয়েছি ,সদ্য মাড় ভাঙা তাঁত কিংবা তসরের চওড়া পাড়ের শাড়ী।
হাই পাওয়ারের একখানা চশমাও উঠেছে চোঁখে।
ওর চুলেও পাক ধরেছে, মুখে বয়সের ছাপ।


ঠিক যেন,
"চেনা মানুষকে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।"
চেনা আর অচেনার মাঝে ফারাক যে খুব সামান্য!
চেনা জানা হয় কত কিছুই, সব কি রয় মনে?
কিছু রয়ে যায়, কিছু বয়ে যায়, হারায় কতজনে।
হারিয়েছিল বসন্ত, সবটুকু রঙ নিয়ে----
সমস্ত ফুল নিয়ে , হারিয়েছিল কৃষ্ণচূড়া।


হারিয়েছিল জলপাই রঙা মুগ্ধতার বসন্ত বিকেল,
কতকাল আগে,
যেখানে , রাঙা ডালিয়ার মতো পাপড়ী মেলে
ফুটে উঠতাম প্রতিদিন।
আর দূরন্ত একফালি কাঁচা সোনা রোদ্দুর হয়ে,
সে আছড়ে পড়ত দলমন্ডল জুড়ে।
তার তোলপাড় করা দৌরাত্মে,
সোনালী আলোয় মোড়া ভ্রুকুটি কেঁপে উঠত আমার------
আমি খিলখিল করে হেসে উঠতাম ;সব সমাজ বিধি জলাঞ্জলী দিয়ে।
সে বলত,--" তোর 'মিষ্টি' নামটা কিন্তু সার্থক!"


আজ চোখাচোখি হতেই থমকে দাঁড়াল সে--
হয়ত বা সময়টাই থমকে গেছে কুড়িটা বছর পর।
কয়েক মুহূর্ত সব স্তব্ধ, ধ্বনিত শুধুমাত্র দুটো পোড়া হৃদস্পন্দন।
সে এগোতে থাকে ধীরে।
নিঃপলকে কী একটা যেন খুঁজে বেড়ায় লেন্স ভেদ করে আমার ক্ষীণ দৃষ্টিতে।
নিষিদ্ধ অসস্তিতে চোখ নামিয়ে নি,সে কাছে আসে।


আমি জানতে চাই, --"কি খুঁজছো?"
সে বলে-- " কুড়িটা বছর! "


আমি আবার জানতে চাই, --" মেয়ের নাম কী রাখলে? "
সে হেসে বলে,-- "মিষ্টি!"