প্রতিটা পূর্ণিমাই আমাকে আরও একবার করে মনে করিয়ে দেয়-
আমি একটি বিশেষ চাঁদের অপেক্ষায় আছি...
বহুল আকাঙ্ক্ষিত একটা চাঁদ।
আমি ভুলে গেলেও যেটা- আমার আজন্মের শত্রু,
প্রবল পরাক্রমশালী, অদম্য, অবাধ্য সাগরটার আমরণ ব্যার্থতার নান্দনিক উপাখ্যান লিখতে,
তার ধার করে আনা চকচকে সোনালী কালির শেষ ফোঁটাটাও খরচ করতে ভুলবেনা কখনোই।
প্রতিজ্ঞার প্রবল নেশায় আসক্ত যে সাগরটা-
এক যুগ ধরে প্রতিশোধের লেলিহান শিখায় নিজেকেই পুড়িয়ে ছাই করেছে,
এবং আরও একবার, একটা আনকোরা-নতুন ইতিহাস লেখার প্রচন্ড অভিলাষে-
আগের চেয়েও দ্বিগুণ উদ্দ্যমে জ্বলে উঠেছে অনায়াসে,
তীব্র লড়াইয়ের দুর্দমনীয় স্পৃহায় একের পর এক ঝড়ো আক্রমণের ভয়াল গতিতে মাতাল সেই জলরাশি, দানবীয় কোন দ্বিধার দেয়ালকে কোনদিনও পেতে দেয়নি এক মুহূর্ত প্রলম্বনের সুখ।
বারংবার হেরে গিয়েও বীরবিক্রমে লড়াই করতে ভোলেনি তো বটেই বরং আমারই চাঁদ নিংড়ানো আলোয় ঝলসানো মেঘ চিরে ঝলকানো বিজলি ছুঁয়ে করেছে প্রতিশোধের কঠিন শপথ।
অবধারিত পরাজয়ের লজ্জায় আরও খানিকটা নীল হয়ে গিয়ে বেনামী কোন বালুকাবেলার রূপালি কুরুক্ষেত্রে মুখ লুকায় নি যে সাগরটা আগে কখনোই।
হতাসার বিষাক্ত তরল কতো শতবার আকন্ঠ পান করেও, পোষ না মানা সেই অহংকারী সাগরটার কথাই বলছি...
হয়তো শেষ পরাজয়ের বিদগ্ধ গ্লানিবোধ তাকে-
আমার পায়ের পাতায় আছড়ে পড়তে বাধ্য করেছিল, হয়তো যে চোখে আমি চিরকাল কৌতুকমাখা তাচ্ছিল্যের হাসি দেখে অভ্যস্ত, সে অশ্রুসজল চোখের অসীম শূন্যতাই-
আমার গভীরে বপণ করেছিল মহাপরিকল্পনার বীজ।
তাই আমি আজ একটি বিশেষ চাঁদের অপেক্ষায় আছি।
যে বিশেষ চাঁদের আকর্ষণী ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অবকাশ নেই।
আন্তঃআণবিক বা নাক্ষত্রিক বন্ধনের মামুলী ক্ষমতা নয়,
আলোর কোলে ছায়া যেমন, কিংবা কায়ায় জড়ানো মায়ার মতোন দুনির্বার এক চৌম্বকীয় ক্ষমতার অধিকারী এক চাঁদ।
যেই ভরা চাঁদের অপার্থিব আকর্ষণে ফুলে-ফেঁপে উঠবে আমার প্রিয় শত্রুর প্রচন্ড আক্রোশ,
আকাশ ছোঁয়া প্রকান্ড ঢেউ এর ধেয়ে আসা গতি দেখে-
অবাক বিস্ময়ে ঘুরতে ভুলে যাবে নির্বাক ধরণী।
আর আমি, হিমালয়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পরোখ করবো-
শত্রু-মিত্রের সেই মহাপ্রলয় কাব্যের অভিনব চিত্রায়ন।আমার বিমুগ্ধ চোখ এমন একটা দৃশ্যের পানে অনন্তকাল চেয়ে থাকতে পারবে- সন্দেহ নেই,
কিন্তু আমাকে তখন দিতে হবে শ্বাসরুদ্ধকর এই নাটকের রোমাঞ্চকর যবনিকা।
আমার ঠোঁটের কোনায় হারানো মুচকি হাসিটাকে আতংক ভেবে আরও একধাপ পেরোবে শত্রুর উচ্ছ্বসিত অট্টহাসির পারদ।
তখন আমি চন্দ্রগ্রহণের সপ্তমী মন্ত্র পড়ে, সাতটা রক্ত জবার সাথে বৃদ্ধাঙ্গুলির সাত ফোঁটা রক্ত আরকে ডোবানো রুদ্রাক্ষের মালা পড়িয়ে দেবো প্রিয় চাঁদের গলায়।
চাঁদটার আকর্ষণী ক্ষমতা স্বযত্নে ছিনিয়ে নিয়ে মুহূর্তেই পালটে দেব দৃশ্যপটের রঙ।
ফুঁসে ওঠা উন্মত্ত আগমনী তরঙ্গ আচমকা গতি হারিয়ে থমকে যাবে।
আরও একবার মুখথুবড়ে লুটিয়ে পড়তে বাধ্য হবে চির অহংকারী স্বত্বা।
কিন্তু এবার আর অপমানের অন্ধকার মুখোশে নয়, কিঞ্চিৎ বিস্মিত আর অপরাধীর শঙ্কিত আধো-হাসি হেসে-
আমার প্রতিক্ষিত পদযুগলে আলতো চুম্বন এঁকে- দেবে সবিনয় আত্মসমর্পণের ঘোষণা।
আমার পরিতৃপ্ত প্রশ্রয়ী হাসি আর কৃতদাসের খিলখিল হাসিতে লেখা হবে নতুন ইতিহাস।