সম্মানীয় কবি রীনা বিশ্বাস-হাসি (মৈত্রেয়ী কবি)- তিনি একজন সাধারণ ঘরোয়া মহিলা , ঘর-সংসার নিয়ে তাঁর জীবন । ছ’বছর তিন মাস হল কাব্য আসরে আছেন । ১৪৫০তম কাব্য লিখেছে, সাহিত্য চর্চার সাথে এক সমাজসেবী, নৃত্য- গান-বাজনায় বেশ দখল, নজরুল ও রবীন্দ্র সংগীতে পারদর্শী । আমার এই প্রথম তাঁর কাব্য সমালোচনার সাহস হ’ল । এর আগেও অনেক সুন্দর সুন্দর কাব্য লিখেছেন । এই কাব্যে একটা মহতি দিক নজর কাড়ল ,লোভ সংবরণ করা গেল না, কিছু লিখে দিলাম ।
প্রথম ছত্র ----
মনে রেখ ----
"জুতো বিক্রি হয় এসি ঘরে / আর বই বিক্রি হয় পথ পরে । / দুরনীতি বাজ থাকে পাঁচতলায় / আর সৎ গুণীজন গাছতলায় ।"
কত সহজ সরল কথা , চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া । হে সমাজ তোমরা দেখ- বাস্তব সত্য । যাঁরা এ,সি,ঘরে জুতো কেনে তাঁরা মনে হয় ভাবতে পারে না এই জুতো বড়ো না বই  ! হয়তো তাঁদের বই এর এত দরকার না ও হতে পারে তাই বই নিয়ে তাঁদের মাথা ব্যথা নাই ! কিন্তু কবি বলতে চাইছেন বাস্তবে কোথায় আমরা আজ ! কথাটা বাস্তব সত্য, এ দু’টোর মাঝে কার এ সময়ে মূল্য ও কদর বেশি ? জুতো আর বইয়ের !!
“দুরনীতি বাজ থাকে পাঁচতলায়”
কত সহজে কতাগুলো বলে গেলেন , একজন ঘরোয়া মহিলা হয়ে এত দুঃসাহসের কথা বলা ! উঁচুতলার সমাজ কক্ষনো মেনে নেবে না তাঁকে, যতো পারে অপদস্থ করবেই । আমরা শিখে রেখেছি পাঁকাল মাছের মত বাঁচতে ! গায়ে কাদা জড়াব না । কিন্তু কবির অকাট্য রূপক ভাবনা অসতের পয়সায় আজ উঁচুতলার লোক ।  সৎ পথের লোক ও দিন মজুরা পরিশ্রমের দ্বারা যারা সমাজ দেশ নির্মাণ করে, তারা ! “আর সৎ গুণীজন গাছতলায় ।"
থাকে গাছতলায় , সমাজের এ বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন ।
দ্বিতীয় স্তবক---
কিছু যদি নিতে চাও / প্রাণ ভরে জ্ঞান নাও,/ যদি মন উঁচু হয় / দান করো, নেই ভয় ।
সহজ কথা কোন কথার ঘুরপ্যাঁচ নাই , জলের মত সহজ বলা । সংসারে অমূল্য কোন রতন যদি থাকে সে- জানার, শেখার, বিষয়-জ্ঞান , জ্ঞান থাকলে কর্ম জীবনে কোন বিশেষ বাঁধার সম্মুখিন হতে হয় না ।
এক উদাহরণে জানাই ----
একবার বলিরাজার দানের উপর খুশি হয়ে নারায়ণ দর্শন দেন ও বলেন, “তোমাকে দু’টো বর দেব , তার মধ্যে কোনটা নেবে ? প্রথম বরে, স্বর্গ যদি চাও তবে শতমূর্খ সাথে দেব আর নরক যদি চাও পাঁচজন গুণী পণ্ডিত দেব । এখন বল কোনটা চাই ।“ কাল বিলম্ব না করে বলিরাজা বলেন ,”আমি নরক যেতে চাই । নারায়ণ বলেন, কেন ? লোক তো স্বর্গ চায় ,আর তুমি নরক ! বলিরাজা হসে বলেন,”প্রভু ঐ পাঁচজন পণ্ডিত দ্বারা আমি নরককে স্বর্গে পরিণত করব ।“ নারায়ণ বলেন, “সাধু ! সাধু ! সত্যি ‘বলি’ তুমি মহা বিদ্বান !!
“যদি মন উঁচু হয় / দান করো, নেই ভয়”
কথায় বলে দানে ক্ষতি হয় না ,আত্মসম্মান বড়ে, তবে সুপাত্রে হওয়া চাই , বিদ্যাদানে তো শতগুণ বাড়ে . দান মানুষের এক মহান কাজ ।
তৃতীয় স্তবক---
"যদি ধারণের কথা বল / ধৈর্য ধরে পথ চলো ,"
মানবের আগে বাড়ার এক শ্রেষ্ঠগুণ ধৈর্য-সহিষ্ণুতা , এ গুণ ব্যাতিরেখে মানুষ আগে বাড়তে পারে না । প্রতিটি কাজে ধীর-স্থির ধৈর্য চাই । অলংকার-বস্ত্র-অর্থ-সম্পদ, ধারণের চেয়েও বড়ো ধারণ সে গুণ ধৈর্য । । এ গুণ বিনা জীবনে মূল্যবান অপর দ্রব্য টেঁকে না ।
“যদি কিছু ত্যাগ করো / অহমকে আগে মারো”
কাব্য সমাপ্তিতে সুন্দর বলেছেন, অহম -অহং -আত্মকেন্দিক বিচার, মানুষের জীবনের বড়শত্রু তাকে সাথে নিয়ে বেশী দূর যাওয়া যায় না ।
যদি কাউকে মারতে হয় তাকে মার, যে অহং নিজ মধ্যেই নিজের খেয়ে পরগাছার ন্যায় বিরাজ করে , সমূলে তাকে ত্যাগ দেওয়ার ধর্মই বড়ধর্ম ।
পরিশেষে আমি মানি এ হেন কাব্য বিচারে মনকে নিয়োগ করা ,সংসার ধর্ম পালন করেও এক সাধারণ মহিলা কবির অসাধারণ ক্ষমতা ও বিচার , মুগ্ধ করে মন ।
জীবনবোধকে নিয়ে, মানবতাবাদী সুন্দর কাব্য ।
প্রবুদ্ধ প্রিয় কবি ভগিনীকে শুভকামনা শুভেচ্ছা অশেষ । ভাল থেক সদা ।