মা তোমা চোখে করুণাশ্রু
আমার মনে বেদনা, দেহে অসহ্য যন্ত্রনা
আমি মৃত্যু শয্যায় শায়িত-
শীয়রে বসে তুমি করুণ চোখে চেয়ে আছ ৷
কত কবিরাজ, মন্ত্র, মন্ত্র পড়া তেল
পীর ফকিরের দোয়া-তাবিজ, মসজিদে সিন্নি
অতিরিক্ত নামাজ- আরও কত কি
কামনা মান্নত যেন তোমার খোকা ভাল হয় ৷
কই মা ঐ সব মন্ত্র তন্ত্র বলে বিধাতা
তোমার খোকাকে কি ভাল করে দিলে ?
যখন ছোট্ট ছিলাম-
তুমিই মোরে সিখায়েছিলে-খোকন
অন্ধকার রাত, ঝর বৃষ্টি বজ্রপাত,
জ্বেন ভূত কোন কিছুই তোকে  
স্পর্শ করতে পারবে না, জানিস কেন ?
আমি বুঝি নাই তোমার কথা তাই
আদরে কান স্পর্শ করে দেখায়ে বলে ছিলে
এই যে তোর গলায় তাবিজ-
জানিস কার দেওয়া দোয়া ৷
তোর দাদার দাদা তার দেওয়া
যুগ যুগের ঐতিয্য
বংশের রক্ষা কবজ তোর গলায় ৷
সত্যি মা সেদিন তোমার কথা শুনে
গর্বে আমার বক্ষ স্ফিত হয়েছিল
আর তুমি খুসিতে হয়েছিলে আত্ম হাড়া ৷
কই মা আমার দাদার দাদা তার দেওয়া দোয়া
চৌদ্দ পুরুষের রক্ষা কবজ
যদি আমাকে সুস্থ্য করে তুলতে না পারে-
এ জন্য দায়ী কে ?
তুমি না বংশের ঐতিয্যবাহী ঐ রক্ষা কবজ ৷
আমার শহুরে বন্ধু যতিন বলেছিল
খোকন শহরে চল ডাক্তার দেখা,
তোর পায়ের ক্ষত ভাল হয়ে যাবে ৷
রক্ষাকবজের ভরসায় তুমি বলে ছিলে-
না বাবা থাক, বিধাতা দিয়েছেন অসুখ
বিধাতাই সারায়ে তুলবেন ৷
আরও বলে ছিলে-
মুখ যিনি দেন অন্নও তিনি দেন,
যিনি জন্ম দেন তিনিই বাঁচায়ে রাখেন
বিপদ দাতা ও উদ্ধার কর্তা তিনিই ৷
আমি এখন বুঝি তুমি কেন বলে ছিলে,
তোমার ভয় ছিল কিন্তু বিশ্বাস ছিল না-যে
অস্ত্র-পোচারে আমার পা ভাল হয়ে যাবে
আমি সুস্থ্য হব ৷
কেন মা ! তুমি এ যুগের হয়েও
এ যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞান, ধ্যান ধারণার প্রতি
তোমার এত ঘৃণা ও অবজ্ঞা কেন ?
অন্ধ বিশ্বাসের ফলে-
যুগের প্রতি জ্ঞানের প্রতি
তোমার আত্ম বিশ্বাসের অভাব-ফলে
তোমার চোখে তো বেদনাশ্রু গড়াবেই ৷
অনুরোধ-মা-
এর পর আমার সহোদর যদি কেহ আসে
তার গলায় তোমাদের বংশের
ঐতিয্যবাহী ঐ রক্ষা কবজ আর দিও না,
তাকে এ যুগের মত করে গড়ে তুলো ৷
তার হাতে দিও সাবল, পেট ভরে দিও খেতে
অন্ধকারে আলো হাতে নিয়ে চলতে বলো ৷
বজ্রপাত হবে মৃত্যুও হবে
প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলো ৷
জ্বেন ভূত ও সব কিছুই নাই-
সব পঁচা নুংড়া বাতাসের কারসাজি,
ঠিক ঠিক এই যুগের কথা সিখাবে-
মন্ত্র না দিয়ে হাতে যন্ত্র দিবে-দেখবে
তোমার চোখে আর বেদনাশ্রু গড়াবে না ৷