গল্পটা কি ভাবে শুরু হলো তাই বলছি-
বয়স তখন বাইশ হবে হবে
বড়ই বিপদের বয়স ছিলো
সব কিছুতেই কেমন যেন তাচ্ছিল্য করতাম,
আর বুকের মধ্যে পুষতাম বিপ্লব,
যাচ্ছিলাম নদী পথে
‘সোনার তরী’ নামক স্টীমারে করে
চাঁদপুর থেকে ঢাকা শহরে,
মেয়েটিও তাই ।


বয়স আনুমানিক আঠারো হবে,
হঠাৎ চোখ গেলো  মেয়েটির দিকে,
কাঁদছে মেয়েটি ,
স্টীমারের রেলিং ধরে নদীর দিকে তাকিয়ে,
আমার সব ছিনতাই হয়ে গেলো মুহূর্তেই,
একেবারে সব কিছু
সময় , মন , ভালোবাসা,  স্বপ্ন, আর বিপ্লব
অথচ মেয়েটি জানলোই না,
বাইশ বছরের আমার জমানো
সব কিছু নিয়ে গেলো মেয়েটি।


কেনো কাঁদছে মেয়েটি?
খুব জানতে চাইছিলো আমার মন
বাবা মা’র বকাঝকা সহ্য হয়নি?
নাকি আপনজন কাউকে
‘বিদায়’ বলতে হয়েছে?
অথবা নদীর জলে
চোখের জল মিশিয়ে দেখতে চাইলো
কার জলে ভাংগন বেশী,
বুকের জলে না নদীর জলে?।


কতো কিছু ভাবছি তখন
তারপর হঠাৎ করেই মেয়েটি
স্টীমারের কেবিনে ঢুকে গেলো
মেয়েটি একবারের জন্যও
আমার দিকে তাকায়নি,
অথচ আমার বাইশটি বছর নিয়ে চলে গেলো,
স্টীমার থেকে নামার সময় মানুষের ভিড়ে
আর দেখাই হলো না মেয়েটির সাথে।


গল্পটা এখনো শুরু হলো না
কতো কিছু বলার ছিলো আমার
মেয়েটির দেখা  না পেলে
এমন কি আর ক্ষতি হবে পৃথিবীর?
ক্ষতি যা হবার হয়ে গেলো আমার,
আমার রাতের ঘুম ছিনতাই হলো
কেউ জানলো না ,
কার কাছে নালিশ দিবো
পুলিশের কাছে গিয়ে বলবে
“ নাম না জানা একটি মেয়ের চোখের জল
আমার সব ছিনতাই করেছে?”
মা বললো
“ কিরে বাবা, রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়তো?
চোখের নিচে এতো কালো দাগ কেনো ?”
বাবা বললো
“ আজেবাঝে আড্ডায় পড়েছে হয়তো”
আমি কি ভাবে বলি
একটি মেয়ে কেনো কেঁদেছিলো
আমি কেনো জানলাম না?
যদি তখনই জানতে চাইতাম তা হলে
আমি অন্তত রাতে ঠিকমতো ঘুমাতাম
অথবা আরো বড় কষ্টে পড়তাম।


তারপর থেকে প্রতিদিন
স্টীমারের ঘাটে গিয়ে দাড়িয়ে থাকি
‘সোনার তরী’ যখন ঘাটে ভিড়ে
তার কিছুক্ষন আগে থেকে,
কিন্ত্তু সাতশত দিনেও যখন
মেয়েটির দেখা যখন পেলাম না
তখনই বুঝলাম নদীর জলের থেকেও
বুকের জলের ভাংগন বেশী।


তারপর কি ভাবে যেনো টিকেট চেকার
এর একটা চাকুরী যোগার করে ফেললাম
‘সোনার তরী’ তেই।
সুবিধা হলো প্রতিটি যাত্রীর সাথে
প্রতিদিন দেখা হয় তখন আমার ।
বিশ্বাস করুন আমি একদিন ও ছুটি নিতাম না,
ঝড় বৃষ্টি, অসুখ বিসুখ কোনও কিছুতেই না,
তারপর ঠিক উনিশো পনের দিন পর
মেয়েটির দেখা পেলাম,
ঠিক আগের জায়গায় দাড়িয়ে হাসছে
প্রান খুলে হাসছে,
সাথে সিনেমার  নায়কের মতো দেখতে
একজন যুবক হাত ধরে আছে,
আমার দিকে আজও তাকালো না একবারও।
যে ভাবে শুরু হয়েছিলো, ঠিক সেই ভাবেই
হঠাৎ করেই বুকের ভাংগন থেমে গেলো।


গল্পটা শুরু না হতেই শেষ হয়ে গেলো,
আমি সে দিনই চাকুরী ছেড়ে দিলাম,
আমি আবার আমার কিছু কিছু  ফিরে পেলাম
আর অনেক কিছুই ফিরে পেলাম না,
সময়, বিপ্লব,স্বপ্ন আর পেলাম না।


আমি এখন আর কোন
নারীর চোখে তাকাই না,
বয়স বেড়েছে তাই
‘বুকের ভাংগন’ বোধ সহ্য হবে না।
————————————————-
রশিদ হারুন
২৮/০৪/২০১৮