সব মুখোশ খসে পরতো
মা’য়ের কাছে আসলেই
মা’ কিভাবে যেন বুঝে ফেলতো,
অবলীলায় বলে দিতো
“এতো মন খারাপ কেনো?
কি হয়েছে ‘বাবা’ তোর?”
অথচ, সারাদিন কতো রকম মুখোশ ছিলো যে মুখে
একজন মানুষ ও বুঝতে পারেনি,
আমার মনটা প্রচন্ড বিষন্ন,
বিষন্নতার পরতে পরতে নানা রংয়ের বিষন্নতা
আমি বুকে নিয়ে ঘুরেছি সারাদিন,
তখনই স্বার্থপরের মতো সব বিষন্নতা
মা’র বুকে দিয়ে দিতাম,
তারপর নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোতে যেতাম।


চেহারায় একেকদিন একেক রকম মুখোশ পরে থকি,
ভালো থাকার মুখোশ.
সুখি থাকার মুখোশ,
রাজনীতিবিদের মুখোশ,
মহাপুরুষের মুখোশ,
দয়ালু মানুষের মুখোশ,
নিষ্ঠুর মানুষের মুখোশ,
সাহসী মানুষের মুখোশ,
চরম ভীরুতার মুখোশ,
বোকা মানুষের মুখোশ,
দূর্ত মানুষের মুখোশ,
আবার নিঃসঙ্গতায় একাকী
কবি হওয়ার মুখোশ পরে থাকি।


সারাদিন কতো মানুষের সাথে ঘুরেছি,
কেউই বুঝলো না
বাবা’ও বুঝেতো না,
স্ত্রী,সন্তান,বন্ধু, পরিচিত ,অপরিচিত
কেউ বুঝেনি,
কোন মুখোশটা আমার নিজের।
সবাই বলে,“কি খবর, ভালোতো?”
অথচ, মা সোজাসুজি বলে দিতো
“এতো মন খারাপ কেনো.
কি হয়েছে ‘বাবা’ তোর?”
অথবা, ফোন করলে কন্ঠ শুনেই বলে দিতো,
আজোও সারাদিন না খেয়ে ঘুরাঘুরি করেছিস।


আমার মা’ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েনি কখনো,
পড়েনি কোন মনো বিজ্ঞান,
অথচ আমি যতোই লেখাপড়া করি
মা’ তারচেয়ে ও বেশী জ্ঞানী হয়ে যেতো কি ভাবে জানি!!


এখন মা’য়ের কবরের পাশে দাড়ালেই,
সব মুখোশ খসে পরে,
আমি স্পষ্ট শুনতে পাই
“এতো মন খারাপ কেনো.
কি হয়েছে ‘বাবা’ তোর?”
স্বার্থপরের মতো এখনো সব বিষন্নতা
মা’র কবরে দিয়ে দেই,
তারপর নিশ্চিন্ত মনে ফিরি মানুষের মাঝে।
---------------
এই কবিতাটি পৃথিবীর সকল মা’এর জন্য ------------
রশিদ হারুন
১৫/০৩/২০১৮