ছেলেবেলায় মেলায় গিয়ে  বন্ধুদের কেউ চরকিতে চড়ত
কেউ হাওয়াই মিঠাই কিনতো
কেউবা সার্কাসে খেলা দেখেত,
অথচ সেই ছেলেবেলা থেকেই বন্ধু শাহেদ মেলায় গিয়ে শুধু ঘুরত
আর মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত,
কাউকে একবার দেখলেই মনে রাখতে পারতো
কোথায় কবে দেখেছে মানুষটাকে-
সে এক আশ্চর্য গুণ!


“মানুষের মুখে এমন করে কী দেখিস?”
যুবক বয়সে একদিন জানতে চেয়েছিলাম।
খুব চিন্তা করে শাহেদ বলেছিলো,
“ মানুষ পড়ি,
সুখ দুঃখ দেখি,
রাগ ,অভিমান আর অপমান দেখি,
ভালোবাসা সাথে ঘৃণা একমুখেই দেখি,
বিশ্বাস আর প্রতারণার ঘর দেখি,
দোযখ আর বেহেশতের ঠিকানা দেখি,
সমুদ্র, নদী, পাহাড় , আর বন জঙ্গলের বসবাস দেখি,
অমানুষ আর দানবও দেখি,
আমি চেহারা দেখে পড়ে ফেলতে পারি
কে কী পালছে বুকে।"


এই কথা শোনার পর
এক অচেনা ভয়ে
আমি চট করে আমার মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেললাম,
শাহেদ যেন আমার মুখ কোনোভাবেই দেখতে না পায়।
শাহেদের হালকা হাসির শব্দে ভেসে এলো  কানে,
-যাইরে।


শাহেদের পায়ের আওয়াজ যতক্ষণ হারিয়ে না গেল
ততক্ষণ মুখ ঘুরিয়ে তাকানোর সাহসও হয়নি আমার।
তারপর থেকে আমি ওর কাছ থেকে লুকিয়ে থাকমাতাম সব সময়।


সেদিন বাড়ি ফিরেই দ্রুত আয়নার কাছে ছুটে গেলাম,
দুশ ওয়াটের বাতি জ্বালিয়ে নিজের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ।
একসময় শাহেদের কথামতো চেহারায় সবই পেলাম,
অবাক হয়ে দেখলাম আমার চেহারায় কোথাও মানুষ নাই।
আজকাল শাহেদের মতো কেউ যেন আমাকে আর পড়তে না পারে
সেই ভয়ে ঘর থেকে বের হবার পর সারাক্ষণ
চোখ ঢেকে রাখি রোদ চশমায়।


শাহেদের সাথে অনেকদিন দেখা হয়নি আমার,
শুনেছি বিয়ে করেছিল
সংসার করতে পারেনি বেশিদিন।
বউেয়ের চেহারায় নাকি সবসময় সে প্রচন্ড ঘৃণার ছবি দেখে।


একদিন রাস্তায় হঠাৎ করেই আবার দেখা,
আমি চট করে মুখ লুকাতে গিয়ে দেখি শাহেদ‌ই মুখ আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করছে।


শাহেদের চেহারায় সেই লাবন্য নেই।
‌অনকটা পাগলের প্রলাপের মতো করে
নিজেই বলে উঠলো,
“ জানিস,
আমি জানতাম আমার চেহারায় কোন মানুষ নে‌ই,
শুধুই গভীর বন জঙ্গলের বসবাস।


বউটাও টের পেল,
এই জন্য সে চলে গেল আমাকে ছেড়ে
এক প্রচন্ড ঘৃণায়”।
——————-
র শি দ   হা রু ন
১৪/১০/২০২২