সদ্য পঞ্চাশ পার হওয়া ছয় বন্ধু কক্সবাজারে এসেছেন সমুদ্র দর্শনে।


তাদের মধ্যে একজন ব্যাংকার আর একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক,
এ  দু’জনেই - জীবনে এই প্রথম আসলেন সমুদ্রের কাছে!


ব্যাংকার সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আনমনে বললেন,
‘পৃথিবীর সব টাকা গোনার মেশিন দিয়েও এই ঢেউ গোনা সম্ভব না!’


শিক্ষক শুধু নিজেকেই শুনিয়ে বলল,
‘ছাত্রদের যা শিখিয়েছি পরিপূর্ণ হয়নি,
সমুদ্রের জলে ডুব না দিয়েই আমি ক্লাসে সমুদ্র নিয়ে কতো কথা বলছি,
সমুদ্রের কাছে আমার অনেক পাপ।'


বন্ধুদের মধ্যে দু’জন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে সমুদ্রের কাছে ‌অনেকবার আসতে হয়েছে,
সাথে প্রচুর লোকজন নিয়ে উনারা প্রতিবার শুধু হাঁটু পরিমান জলে দাঁড়িয়ে থাকেন;
এবার বন্ধুদের সামনে সমুদ্রের জলের দিকে উনারা এমনভাবে তাকালেন,
সমুদ্র যেন ঘরের বাথরুমে জলভরা বাথটাব,
অথচ উনারা দুজনের একজনও সাঁতার জানেন না,
ডুবে যাবার ভয়ে উনারা কখনো জলেভরা বাথটাবেও গোসল করেন না।


যিনি ব্যবসায়ী তিনি প্রায়ই একাই আসেন সমুদ্রের কাছে,
কেন আসেন তিনি নিজেও জানেন না!
সমুদ্রের জলে নেমে তিনি কোনোদিন পা’টুকু ছুঁইয়েও দেখেননি,
তিনি শুধু হোটেলের বারান্দায় বসে সারারাত ধরে সমুদ্রের জলের দিকে তাকিয়ে থাকেন ঘন্টার পর ঘন্টা
আর সিগারেট পোড়ান একটার পর একটা।


যিনি কবি তিনি জীবনে শুধু একবারই এসেছিলেন সমুদ্রের কাছে।
কবির এমন ভাব তারপর থেকেই তিনি এই সমুদ্রকেই বুকে পালছেন।


ছয় বন্ধু সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রের জলে একসাথে পা ডুবিয়ে
বুকে হাতরাচ্ছে তাদের শৈশব,
সমুদ্রের ঢেউ তাদের পায়ে স্পর্শ করে বারবার ফিরে যাচ্ছে।
ছয় বন্ধুরই মনে হচ্ছে এই সমুদ্রের জলই তাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব।
যতটুকু হারিয়ে যাওয়া শৈশবে তাদের পা ভিজছে
তা গুপ্তধনের মতো বুকে আগলে রাখতে গিয়ে
হঠাৎ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে সমুদ্র আর আশেপাশের সব মানুষকে ভয় দেখিয়ে
ছয় বন্ধু একই সাথে হেসে উঠে।


সংসার, স্বাস্থ্য,  চাকরি , নারী, রাজনীতি, যৌনতা, পরকীয়া, প্রেম
আর ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করতে করতে
সূর্যের সাথে তারাও ডুবে গেল তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি জীবনে।
দু’দিন পরেই তারা সবাই সংসারে ফিরলো সদ্য পার হওয়া পঞ্চাশ নিয়েই।


রাতের বেলা ঘুমোতে গিয়ে সবারই মনে পড়ল
তারা ছয় বন্ধু পৃথিবীর সব আলাপই
করে ফেলেছে প্রায় দু’দিনে,
শুধু একবারের জন্যও মৃত্যুর কথা কেউ বলেনি!
————————————-
র শি দ  হা রু ন
১৮/০২/২০২৩