ইটের উপর পা দিয়ে
আমার বয়সী অনেকের সাথে
ঠেলাঠেলি করে মিয়া বাড়ীর জানলায়
দাঁড়িয়ে থাকতাম  অনেকক্ষন ধরে।


বয়স কতো হবে আর আমাদের,
দশ অথবা এগারো, না হলে আরেকটু বেশি,
সবাই কি উত্তেজনা নিয়ে ছোট সাদাকালো টেলিভিশনটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম,
কখন শুরু হবে বাংলা ছিনেমা,
তারপর একসময় যখন শুরু হতো,
নাম দেখে উত্তেজনা আরো বেড়ে যেতো,
প্রধান চরিত্রে "নায়ক রাজ রাজ্জাক"
আর "মিষ্টি মেয়ে কবরী"।


মশার কামড়ে  পা ফুলে যেত,
তবুও নড়তাম না
খোলা মাঠে গান গাইতে গাইতে,
রাজ্জাক যখন কবরীর পায়ের উপর
মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত,
আমার কেমন যেন খুব লজ্জা লাগত,
মাথা ঘুরত, আর তাকাতে পারতাম না,
ভাবতাম বিশাল একটা অন্যায় করেছি,
আর রাজ্জাক যখন  কবরী কে বলতো,
"আমি তোমাকে ভালোবাসি"
তখন আমার কান গরম হয়ে যেত,
তারপর বাসায় ফিরে সারা রাত ঘুমোতে পারতাম না,
স্বপ্নে সারারাত শুধু রাজ্জাক কবরী গান গাইত আর বলতো "আমি তোমাকে ভালোবাসি"
তখন স্বপ্নের মাঝেও আমার লজ্জা করতো।


ভালোবাসা কি জিনিষ
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করতো,
"আমি তোমাকে ভালোবাসি" বোধহয় খোলা মাঠে
নায়িকার পায়ের উপর শুয়ে,
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে হয়।


পাশের বাসার নীলা আপাকে দেখলেই
আমার নায়িকা কবরীরমত লাগতো।


আমার খুব ইচ্ছে করতো খোলা মাঠে
উনার পায়ের উপর শুয়ে বলবো
"নীলা আপা আমি তোমাকে ভালোবাসি"
নীলা আপা আমার চেয়ে ছয় সাত বছর বড় হবে,
কলেজে পড়তো বোধ হয়।


উনার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারতামনা,
মনে হতো এই বুঝি ধরা পরে যাবো,
উনি যদি আমার মনের কথা বুঝে যায়
তাহলে কি লজ্জার কথা হবে,
অনেক খারাপ ছেলে ভাববে,
বাবাকে বলে দিলে বাবা অনেক মারবে,
আর টেলিভিশন দেখতে দিবেনা।


একদিন শুনলাম নীলা আপাকে
আর খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।


বড়োরা সবাই ফিসফিস করে আলাপ করেতো,
নীলা আপা নাকি তার প্রাইভেট টিউটর এর
সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছে।
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করতো,
উনারা কি রাজ্জাক,কবরীর মত মাঠে গান গেয়ে ছিল,
তারপর কি প্রাইভেট টিউটর
উনার পায়ে মাথা রেখে বলেছিল
“আমি তোমাকে ভালোবাসি “
তা না হলে যে নীলা আপা যে সুখী হবে না।


অনেক দিন মন খারাপ ছিলো আমার।
বিকেল হলেই আমি মাঠে গিয়ে শুয়ে থাকতাম
আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতাম
“নীলা আপা আমি তোমাকে ভালোবাসি”
ঠিক রাজ্জাক যে ভাবে কবরীকে বলতো।
----------------------------------------------------
জি এমম হারুন অর রশিদ
১৯/০৮/২০১৭