আমি, একটা পরিত্যক্ত বাড়ী
আর সাথে একটা বট গাছ,
আমরা তিনজনে একসাথেই থাকি
অথচ আমরা তিনজেনই একা,
সম্পূর্ন একা।


এটাকে বাড়ী বললে ভুল হবে
দেড় রুমের ভাংগা মাটির ঘর,
গ্রামের একেবারে শেষ মাথায়।
আশে পাশে কোন কিছুই নেই।
অনেকে ভূতের বাড়ী বলে।
আমাকেই হয়তো ভূত মনে করে অনেকে।
শুধু একটা বটগাছ বোকার মতো দাড়িয়ে আছে বাড়ীটির উঠোন জুড়ে।


আমাদের মধ্যে এক অদ্ভুত মিল আছে,
আমরা তিনজনই পরিত্যক্ত,
তিনজনেরই বয়স হয়েছে,
অথচ তিনজনই অপেক্ষায় থাকি একজনেরই,
একজন নারীর
-যে একসময় কিশোরী ছিলো,
এই বাড়ীর বউ ।


নারীটি নিজ হাতে মায়া মমতায় লাগিয়ে ছিলো বটগাছটি,
অনেকে হেসেছিলো,
বলেছিলো-
“মানুষ বুঝি বটগাছ লাগায় উঠোনে?
অমঙ্গল হবে তোর”
মাটির ঘরটি ও ছিলো তার হাতের।
আর আমাকে,
আমাকে পুরুষ বানিয়েছে তার শরীর।


একদিন,
           দুই কুড়ি বছর আগে
“আসি”- বলে
             সে চলে গেলো,
গেলোতো তো গেলো
                আর কখনোই আসলো না।


আমাকে কতোজন বলে,
“তোমার বউ আর এই জীবনেও আসবেনা,
ও তো শহরে নতুন সংসার পেতেছে,
সেই সংসারে এখন নাতীপুতি ঘুরে বেড়ায়,
ভূতের মতো এখনো কার জন্য বসে থাকো এই ভাঙ্গা বাড়ীতে?”


প্রতিদিন অন্ধকার হলেই আমি বটগাছের নিচে বসে পড়ি,
মনে হয় আজ বোধহয় সে আসবে,
‘আমাকেতো বলে গেছে,
-“আসি”
যদি আজ আসে,
দুই কুড়ি বছর
যদি এসে আমাকে না পায়,
আহারে,
এই ভেবে তার মন খারাপ হবে.
কেউ তা অপেক্ষায় নেই।


যতো রাত বাড়তে থাকে
আমি অস্হির হয়ে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে
রাতর সব তারা গুনে শেষ করে ফেলি।
একসময়ে যখন মনে হয় আজও আসবেনা,
তখন আমি কাঁদতে থাকি,
বুকের ভিতর চিৎকারে করে কাঁদি,
নিঃশব্দে, একেবারে নিঃশব্দে,
বাতাসও যেনো টের না পায়,
এমনকি ঘর আর বটগাছটিও।


আমি কিন্তু টের পাই
বাড়ীটি আর বটগাছটিও প্রতিদিনই অপেক্ষা করে তার জন্য আমারই মতো।
তারাও একসময় বুঝে যায় আজ আর সে আসবেনা,
তারাও আমার মতো কাদঁতে থাকে বুকের ভিতর,
একেবারে নিঃশব্দে,
আমারই মতো তারাও চেষ্টা করে কেউ যেনো টের না পায়।


আমার ইদানিং মনে হয়
গাছটি আর বাড়ীটিও
আমার মতই পুরুষ গাছ আর পুরুষ বাড়ী।
তা নাহলে এতো নীরবে,
লুকিয়ে বুকের ভিতর কি ভাবে কাঁদে?
পুরুষ হলে বোধহয় শব্দ করে কাঁদতে নেই,
চোখের জল বুকে ফেলতে হয়।


রাতের আকাশের তাঁরারা শুধু দেখে
তিনজন পরিত্যক্ত পুরুষ কাদঁছে,
নিরবে চিৎকার করে নিজেদেরই বুকের ভিতর,
কেউ কাউকে টের পেতে দেয়না।
——————————————
রশিদ হারুন
০১/১০/২০১৯