লম্বা লাইন—অধিকতর শৃঙ্খলায়
ব্যাঙ্ক, ট্রাস্ট আর কর্পোরেশনের দরজায়,
অপেক্ষারত কারো হাতে কচি ডাব, কেউ বা
সুখটানে ছাড়ছে আইন অমান্যের নীল ধোঁয়া,
পাকাচুল, পুরু কাঁচে কেউ দেখে ঈষৎ ঝুঁকে
আচমকা খসে পড়া আঁচলের প্রান্তে আবেদনময় বিভাজিকা
মুখে সেনসেক্সের ওঠা-পড়া।
ভিতরে জমা হয়ে চলেছে পুঁজিতান্ত্রিক দেশের পুঁজি।


হ্যাঁ, এটা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক;—আমি সায় দিলাম,
টোকেন হাতে ধুলো ঝেড়ে বসলাম সিঁড়িতে,
চোখ মেলে দেখলাম কিংশুক ফোটেনি, বুঝলাম
ভালোবাসার দখিনা বাতাস এখনো বৈষম্যের গর্জনশীল
বাতাসে থমকে আছে—বসন্ত ঢের দেরী!


বাইরে গলছে পিচ;--কালোধোঁয়া
অদ্ভুত শিল্পে বস্তার পাদুকা বানিয়েছে একটা ছেলে—বয়স পনেরো-ষোলো
প্রানপনে ঠেলছে কাঁটা আঁকশিতে গলা পিচ আর পাথর-কুচি,
ও বোঝে সময়; কখন নগ্নতা ঢাকতে হয়
নির্লজ্জের মতো দাঁত বের করে হাসা সভ্যতার পথে,
রোলার গড়িয়ে আসে, গলা পিচ অন্ধকারে
ঢাকা পড়ে পথ, চেনেন এদের?—এরা মেহনতী
সভ্যতার বাহক, ওদের হাড়েই গড়া সভ্যতার যন্ত্র!


ঠাণ্ডা ঘরে পুঁজিবাদের রক্ষক—পাকামাথা ,
কুক্ষিগত বাঁচার উপায় হয়ে চলে পাহাড়-প্রমান,
ওরা গাইতি হাতে অবুঝের মতো পাহাড় কেটে চলে,
ওদিকে ঝলমলে মলে ক্ষীণকটি, পীন-পয়োধরা
ভ্যালেনটাইনের উপঢৌকন কিনতে ব্যস্ত, মুখে যৌনতার ভাষা,
পাকা কাঁঠালের গন্ধময় অন্তর্বাসে মাছির ভনভন,
অস্থির পায়চারি করছে নির্জনতা প্রিয়
বুকে আমেরিকার পতাকা সাঁটা প্রেমিক।
এইমাত্র রং-বেরঙের পতাকায় মিছিল গেলো
অনেক বড়—কিন্তু মৃতের,
আমি খই আর রেজগি ছুঁড়ে মারলাম রাস্তায়
এক বুদ্ধিজীবির হাত অজান্তে কপাল ছুঁলো।


আমি এসেছি পেনশনের টাকা তুলতে
হাঁপগ্রস্ত বাবাকে টেনে-হিঁচড়ে,
বাবা মেহনতি ছিলেন;--রাষ্ট্রের সেবক,
বয়লারে কয়লা ঠেলতেন—রাষ্ট্রীয় সংস্থায়,
রাষ্ট্র বাবার জীবনপন কাজে খুশী, নিয়েছে বাকী জীবনের
দায়ভার খাতায়-কলমে,
কারন, বাবা জ্বলন্ত সূর্যকে অঞ্জলি-পুত্রের মতো
বাহুমুলে নয়; বুকে ধারন করতেন!
বড় সাহেব ঠাণ্ডাঘরে বসে হাত নেড়ে বাবাকে বাহবা দিতেন,
বয়লারের তাপে উৎসাহে রাঙা হয়ে উঠত শরীর।


এবার আমার কথা বলি,--আমি বেকার;
না, কোনও বুদ্ধিজীবি আমাকে ওদের দলে ঠাঁই দেয় নি,
বলেছে ওদের নৌকা ছোট;--ডুবে যাবে!
মাকে ভালোবাসি, মায়ের ভাষাকেও,
ভালোবাসায় যে এতো বারুদের গন্ধ আগে বুঝিনি,
স্বপ্নে কোঁকিয়ে উঠি যন্ত্রণায়,-- মা-এর শরীর থেকে
কারা যেন কাপড় কেড়ে নিতে চায়,
টুকরো কাগজে ঢেকে দিতে চায় শরীর—ওরা কারা!
মা! ওরা কারা!
ঘর্মাক্ত উঠে বসি বিছানায়,
একটা পেঁচা কর্কশ চিৎকারে উড়ে যায় জারুল গাছ থেকে,
এক চিলতে চাঁদ আমায় আদর করে
ঘুম পাড়ায়--- আমি ঘুমিয়ে পড়ি--- আমি ঘুমিয়ে থাকি
আমার একচেটিয়া ঘুমের রাজ্য
তোমাদের একচেটিয়া রাজ্য থেকে অনেক দূরে......


হঠাৎ আমার ডাক আসে.........