কবিতাঃ এলিয়েন
কবিঃ কবীর হুমায়ূন


আসরে সকল কবিবন্ধুদের যথাযোগ্য ভালোবাসা, আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আবার শুরু করছি আজকের আলোচনা- কবিতাঃ এলিয়েন। চলুন বন্ধুরা আজ মনটাকে মহাবিশ্বের গ্রহ-গ্রহান্তর থেকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি আলোচনার মধ্যদিয়ে। আশাকরি ভালো লাগবে।  


মাননীয় সুনামধন্য বরেণ্য কবি কবীর হুমায়ুন মহাশয়ের কবিতা “ এলিয়েন” আমার কাছে একটি ভিন্ন ভাবনার কবিতা বলে মনে হল। কবিতাটা আমাকে কাব্যিক ও আধ্যাত্মিক ভাবে বেশ ভাবিয়েছে । কবিতাটা যত বার পড়েছি ততবার মন যেন মহাবিশ্বের গ্রহ-গ্রহান্তরে ছুটে বেড়িয়েছে। কারন কবিতার মানটায় যে এলিয়েন। এলিয়েন বললেই বুঝি বহির্জাগতিক প্রাণ বা ভিনগ্রহী প্রাণ, যাদের উদ্ভব এই পৃথিবীতে হয়নি। এই প্রানের উদ্ভব হয়েছে পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও। যদিও এই ভূলোকের বাইরে  প্রাণের  অস্তিত্ব আছে বলে অনেক বিজ্ঞানী দাবি করেছেন আবার এই দাবি নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। যাই হোক আমরা এখন আর বেশি বিজ্ঞান বিষয়ক ব্যাপারটাকে নিয়ে মাথা ঘামাবো না, এটা না হয় বিজ্ঞানীদের হাতেই ছেড়ে দিলাম, কেমন। আমরা এখন এখানে আলোচনায় নিমগ্ন হবো এই “এলিয়েন” কবিতাটির কাব্যিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়টা নিয়ে। কবিতাটি পড়ে আমি যতটুকু নিজের অন্তরে অনুভব করতে পেরেছি, সেই অনুভুতির প্রকাশটা আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি কেবল মাত্র। এটা কবিতাটির আলোচনা বলতে পারেন, ব্যাখ্যা বলতে পারেন বা ভাললাগার প্রকাশ বলতে পারেন। এবার তাহলে চলুন বন্ধুরা কবিতায় প্রবেশ করি…  


প্রিয় কবি লিখছেন-
স্বর্গ থেকে আদম-হাওয়া এলো ধরার ‘পরে’
এই পৃথিবীর সন্তান নয় তাঁরা, জেনো, ওরে!
তাই বলা যায় মানুষেরা হলো ‘এলিয়েন;
কর্ম শেষে আপন দেশে আবার যাবেই ফিরে।


এই ‘আদম’ ও ‘হাওয়া’ মহান ইসলাম ধর্মের ধর্মাবলম্বীদের মতাদর্শ অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম পুরুষ ও নারী। এই মানব প্রজাতির বিস্তার তাঁদের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের মাধ্যমেই সমগ্র মানব জাতিকে একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করা হয় কাজেই এখানে ‘আদম’ ও ‘হাওয়া’ আদি পিতা ও মাতা (তথ্য নেট থেকে সংগৃহীত)। আর যেহেতু আদি পিতা ও মাতা স্বর্গ থেকে এই ধরণীতে এসেছেন তাহলে তাঁরা এই পৃথিবীর নয় বা এই পৃথিবীতে তাদের জন্ম হয় নি। তাদের জন্ম হয়েছে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও। তাই কবি কাব্যিক ও আধ্যাত্মিক ভাবনায় কবিতাটিকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তিনি মধুর ভাবে বলতে চেয়েছেন এই অর্থে পৃথিবীর কোন মানুষেই এই পৃথিবীর সন্তান নয়। সব মানুষেই হল ‘এলিয়েন’। আবার, শ্রদ্ধেয় কবি শেষ  লাইনে সুন্দর ভাবে আমাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন আধ্যাত্মিক ভাবনার গভীরে। তিনি লিখলেন “কর্ম শেষে আপন দেশে আবার যাবেই ফিরে”। অর্থাৎ সকল মানুষের আত্মা স্বর্গ থেকে এসেছেন আর মানুষের মরণ হলেও আত্মার মৃত্যু হয় নাই(আধ্যাত্মিক ভাবনায়)। ফলে মানুষের মৃত্যুর পরে আত্মা ফিরে যাবে সেই স্বর্গে যেখান থেকে সে এসেছিল। তাহলে আত্মার পার্মানেন্ট বাসস্থান কথায়? সেই স্বর্গে। আর সেই আত্মার জন্ম যেহেতু এই পৃথিবীতে হয় নি তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াল কি?। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, তাদের জন্ম হয়েছে মহাবিশ্বের অন্য  কোথাও। এই অর্থে সকল আত্মা ‘এলিয়েন’। এখানে তারা আসেন কর্ম করতে আর কর্ম শেষ হয়ে গেলে ফিরে যান আপন দেশে। বন্ধুরা শেষ লাইনে দেখুন কবি কি সুন্দর একটা চিরন্তন সত্য কথা ব্যাক্ত করেছেন   “ আবার যাবেই ফিরে”। একটু লক্ষ্য করুন কবি লিখছেন “যাবেই ফিরে”। যাবে ফিরে নয়। “যাবেই ফিরে”। অর্থাৎ জন্ম যখন হয়েছে তখন মৃত্যু অবধারিত। একদম চিরন্তন সত্য। এখানে বিখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের “বঙ্গভূমির প্রতি” কবিতার কয়েকটা লাইন মনে পড়ে গেল-
জন্মিলে মরিতে হবে,
অমর কে কোথা কবে,
চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে?
    


পরে প্রিয় কবি লিখেছেন-
বৃক্ষ-লতা, পশু-পাখি, যত জানোয়ার
তাদের সাথে এই মানুষের মিল পাওয়া যে ভার;
বাঁচার তরে অভিযোজন নিত্য করে তারা,
মানুষ যে ভিন-জগৎ প্রানী! এই হল যে সার।


কবি এখানে কাব্যিক ও আধ্যাত্মিক ভাবনায় বলতে চেয়েছেন অন্যান্য জীবজন্তুর সঙ্গে মানুষের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না যেহেতু মানুষ ভিন্ন জগতের প্রানী তাই (আত্মার অবস্থান অনুযায়ী)। মানুষ ভিন্ন জগতের প্রানী (এলিয়েন) হওয়ার জন্য অন্যান্য জীবজন্তু বেঁচে থাকার জন্য যেমন অভিযোজিত হতে হচ্ছে দিনের পর দিন সেই রকম কিন্তু মানুষকে তা করতে হয় নি বা মানুষের তা তেমন ভাবে পরিলক্ষিত হয় নি। কারন আত্মাকে পরিবর্তন হতে হয় না যেমন এসেছিল তেমনেই ফিরে যাবে তার আপন দেশে। তাই অভিযোজনের কোন প্রশ্নই নেই।        


কবি আবার লিখছেন-
মহাবিশ্বের গ্রহে গ্রহে আছে এলিয়েন
আমরা সবাই পরস্পরের বন্ধু বা ফ্যান!
লক্ষ বছর পরে হলেও, দেখা হবে জানি!
চিরন্তন এই সত্যবানী ভুলে যাও ক্যান?  
  
যেহেতু ‘এলিয়েন’ শব্দটা বৈজ্ঞানিক ভাবে এসেছে তাই মহাবিশ্বের গ্রহে গ্রহে ‘এলিয়েন’ থাকলেও থাকতে পারে, আর তার মধ্যে আছে এক আত্মা। আর সেই আত্মা স্বর্গ থেকে সেই গ্রহে প্রবেশ করেছে যেমন এসেছে এই গ্রহে। আর যদি বৈজ্ঞানিক ভাবে ‘এলিয়েন’ নাও থাকে তাহলেও ক্ষতি নেই, আত্মার বিচরণ সর্বত্র (আধ্যাত্মিক ভাবনায়)।  সেই অর্থে মহাবিশ্বের গ্রহে গ্রহে ‘এলিয়েন’ আছে। “আমরা সবাই পরস্পরের বন্ধু বা ফ্যান!- এখানে কবি আবার আমাদের সিক্ত করলেন গভীর আধ্যাত্মিক চিন্তায়।  ধরুন কোন একজনের কোন প্রিয়জন বা বন্ধু মারা গেলেন। কিছুদিন পর সে নিজেও মারা গেলেন। তাহলে সেই দুই আত্মার দেখা হল অন্য কোন গ্রহে বা স্বর্গে। এই ভাবে যত পৃথিবীর লোক মারা যাবে তাদের আত্মা উপরে গিয়ে কে কোথায় কোন গ্রহে গিয়ে বসে থাকবে বলা মুস্কিল। ফলে এক এলিয়েনের সঙ্গে আর এক এলিয়েনের নিবিড় বন্ধুত্ব এই ভাবে জড়িয়ে আছে।  সেই জন্যই কবি লিখছেন- আমরা সবাই পরস্পরের বন্ধু বা ফ্যান। কবির গভীর ভাবনাকে কুর্নিশ জানাই। কবি আবার লিখছেন “লক্ষ বছর পরে হলেও, দেখা হবে জানি। হে প্রিয় বন্ধু আবার দেখা হবে।  পৃথিবী থেকে আগে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন ঠিকই কিন্তু আমিও যেদিন যাবো আমিও ঘুরবো আপনার মতো গ্রহ-গ্রহান্তরে। আর ঘুরতে ঘুরতে আবার দেখা হবে আপনার সঙ্গে কোন না কোন গ্রহে। দেখা হবেই, সে লক্ষ বছর পরে হলেও। দেখা হবে বন্ধু! ভুলে যেও না আমায়, আবার দেখা হবে।  


মাননীয় বরেণ্য কবিকে আমার শ্রদ্ধা জানাই। এমন সুন্দর একটা গভীর মননশীল চিন্তার কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য।


[কবিতা পড়ে আমার একান্ত নিজের অনুভূতির প্রকাশ করলাম। আপনাদের সকলের মুল্যবান মতামতের অপেক্ষায় রইলাম ]
সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন । সুন্দর থাকুন। এই কামনা করি।
==========================================