প্রায় এক যুগ পর অবশেষে সত্যিই আবার ফিরে এলাম,
এই খানে ঝুপড়িমত চা সিগারাটের একটি দোকান ছিল,
এক বুড়ো চা ওয়ালা আর তার ঝগড়াটে দুই বউ ছিল,
একটি বউ আবার কড়কড়ে যুবতী ছিল, তার হাতের কড়া
লেবু চা ছিল তার চেয়েও, তার অহেতুক বাধভাঙা হাসির,
তার দুধেল খুনসুটির চেয়েও তরতাজা ও উত্তেজক,  
দোকানময় তাই তখন অনেক খদ্দেরের ভিড়ও ছিল,
এখানে কেটেছিল অনেক বন্ধুময় লেবুগন্ধি বিকেল ।
এখানে সময় থমকে যেত গন্তব্যহীন মানুষের মত ।

রমিজ বুড়োর চায়ের দোকানের কথা জানতে চাইলে
আজ আর কেউ বলতে পারলো না, চিনলও না কেউ,
স্মৃতিময় পুরনো শহরতলিতে মনে হয় এত দিন পর ফিরে
আসা একটি কষ্টকর ভুল, এভাবে হয়তো কখনো ফিরতে
হয় না ফেলে আসা মৃত স্মৃতির কাছে, সামনে এগিয়ে
মৃন্ময়ের সেলুনের খোঁজ নিলাম, যদি জানা যায় কিছু,
সে তো আর কাঁচা ঝুপড়ি দোকান নয়, রীতিমত কংক্রিট
আর চুন সুরকির পাকা দালান বাড়ি, তাই চিনল কেউ কেউ,
ইন্ডিয়া চলে গেছে যুদ্ধের বছর, এর বেশী কিছু জানা গেল না,
মৃন্ময়ের নাদুস নুদুস ফর্সা বউ ও গণ্ডাকয় ছেলে পুলেও ছিল,
তাদের নাম নিশানাও আরও অনেকের মত হারিয়ে গেছে
এই শহরতলীর পরিবর্তনশীল আলো ঝলমলে দিনপঞ্জি থেকে ।  

জানা গেলো না গলির মোড়ের বুড়ো হরিহর ময়রার মিষ্টির
দোকান, নন্দীলাল পণ্ডিতের পুথিঘর লাইবেরি, কিম্বা মিহিরের
ছাপাখানার কোন হদিসও, কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এইসব
অপ্রয়োজনীয় মানুষদের এই শহরের কেউ আজ আর চেনে না,
এরা আজ আর বদলে যাওয়া শহরের হাঁসি কান্নার অংশ নয় ।

বিদ্রঃ দুই পর্বে সমাপ্য, আজ প্রথম পর্ব প্রকাশিত হল, সামনে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আসবে । এই কবিতাটির প্রেক্ষাপটে অনেক আগে পড়া একটি কবিতার কিছুটা প্রভাব আছে, সেই কবিতাটি কার লেখা বা কি তার নাম তা আজ আর মনে নেই। তবে আমার এই কবিতার ঘটনা প্রবাহ এবং ভাষা ঐ কবিতা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও মৌলিক।