- আসপাশে অনেককে তো দেখলাম, শুনলাম, কাজ
শেষে তোমাদের এই বাইরের লোক দেখানো ন্যাকা
ন্যাকা ভালোমানুষী ভাবটা আর থাকে না, শেষকালে
পৈত্রিক মান সন্মান বাচাতে তোমরা যা যা চাও,
যা যা পেলে খুশী হও সেসব মেনে নিয়ে বেজার
মনে তোমাদের খুশী হওয়া দেখতে হয় ...।


- আপনি দেখি লোকজনের কাছ থেকে আমাগো নামে
খালি খারাপ খারাপ কথাই শুনছেন ! পেটের দায়ে এই
লাইনে আছি বইলা আমরা সবাই কিন্তুক খারাপ না... ।


- শুনেছি তোমাদের পাল্লায় পরে অনেকে সর্বস্ব খুইয়ে
শুধু কোনমতে লজ্জা ঢেকে ঘরে ফিরেছে ... ।


- তিন বছর হয় এই লাইনে আছি, কম তো আর দেখলাম
না, আপনাগো ভদ্রলোকের পাড়ার ফুলের মত পবিত্র
অনেক বাবুকেই তো দেখলাম আমাদের ছাদনা তলায়
আসতে, রাতের ফুর্তি শেষে আমাদের সাথে দুই পাঁচ টাকা
নিয়ে ছ্যাছড়ামি করতে, শুনেছি পরে এইসব বাবুরাই নাকি
নিজেদের গা বাচিয়ে বিভিন্ন পরিচিত জনের নাম দিয়ে উলটো
আমাদের নামে মিথ্যে বদনাম গেয়ে বেড়ায় ......
ভালো মন্দ সব জায়গায়ই আছে, আমি জানি না আপনি কি
শুনছেন, তবে ঐ সব ভালমানুষের ভান ধরা বাবুদের বানানো
কান কথা শুনে থাকলে আমি একটুও অবাক হব না ।


- কি করে বিশ্বাস করি তোমার কথা ............... ?


- আমাদের লাইনের সবাই যে ভালো তা দাবী করবো
না কারন ভালো খারাপ মিলেই তো মানুষ কিন্তু একটা
কথা মনে রাখবেন আপনাগো শহরের লোকের মতন
আমাদের মিথ্যা বলার খুব একটা দরকার পরে না কারন
আমরা খারাপ তা সবাই জানে তাই চরিত্র নিয়ে আমাদের
লুকানোর কিছুই নাই, আর কখনো কারো কাছে শুনছেন
নাকি এই কাম কইরা লাইনের মাইয়ারা কেউ কোন দিন
রাজা রানী বা বিরাট পয়সাওলা হইছে ? যারা আমাগো দিয়া
কাম করায় তারা কেউ কেউ হইলে হইতে পারে, আমাগো
বেশীর ভাগ মাইয়ার এই কাম করতে হয় পেটের দায়ে আর
যেহেতু একদিন কইরাই আমাগো কাম শেষ হইয়া যাইবো না,  
নতুন পুরনো মানুষের লাগে বারবার করতে হইবো এই কাম
তাই টাকা পয়সা নিয়াও বেশীর ভাগ লাইনের মাইয়াই তেমন
ছ্যাঁচড়ামি বা ছলচাতুরী করে না, তাইলে তো লাইনে নাম খারাপ
হইয়া যাবে, তবে কেউ কেউ আছে সুযোগ পাইলে কাজে লাগায়
না তা বলবো না, আমাদের লাইনেও এমন অনেক মাইয়্যা
আছে যারা হয়তো পেটের দায়ে বা কপালের ফেরে এই লাইনে
আইছে কিন্তু মনের দিক দিয়ে আপনাগো ঐ ভদ্র শহরের মেকি
রং চং মাখা সাদা চামড়া ও কালো মনের অনেক লোক দেখানো
মাইয়ার চাইতে ভালো তা অনায়াসে বলতে পারি .... ।    


বিদ্রঃ আজ প্রকাশিত হল “নিশিকন্যা” সিরিজের অষ্টম পর্ব । আমার ভাবনা যাকে এই লেখার কেন্দ্রীয় চরিত্র আমি হিসেবে দেখা যাবে এবং একজন কল্পিত অন্ধকারের মেয়ে যাকে নিশিকন্যা বলে জানে সমাজ, ভেতর তার পেশাগত কিছু বিষয়ের কথোপকথন বা dialogue ঘরানার এই লেখার মাধ্যমে কিছু সত্য উদঘাটনে ব্রতী হয়েছি । আমাকে বেশ কয়েকটা এন জি ও র সাথে বেশ কিছু যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন মুলক প্রকল্পে কাজ করতে হয়েছে, সেই সুবাদে এদের জীবনধারা খুব কাছ থেকে সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছে, সে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে এই লেখা প্রথমে এই এই সিরিজটি আমার কাছে লেগেছে গল্প ও কবিতার মাঝা মাঝি, ভাষা ও গঠনে আছে গল্পের ছোঁয়া, পরিবেশনায় আছে কবিতার আমেজ, আমার মুল ইচ্ছের যে জায়গাটি ছিল তা হল সাধারণত কথোপকথন যেমন হয় ঠিক তেমন অবিকৃত ভাবেই এই তাকে তুলে আনা, অনেকে হয়তো এই লেখায় কাব্যিক ঢং প্রত্যাশা করতে পারে কিন্তু আমার মনে হয়েছে ওরকম কিছু আরোপ করলে লেখা কৃত্রিম হয়ে যাবে, কাব্যিকতা দিতে গিয়ে তার বক্তব্যের সাবলীলতা হারাবে, তাই ঐ পথে হাটি নাই । প্রথমে ১৫ পর্ব হবার কথা থাকলেও অবশেষে চূড়ান্ত ভাবে ২০ পর্বে ৫৫০ লাইনের দীর্ঘ এই লেখাটি দুইটি ধাপে আসবে । ১৪০ থেকে ১৪৯ নং পোস্ট হিসেবে আসবে এই লেখার প্রথম দশটি পর্ব । তারপর আসবে ১৫০তম লেখা “অনন্ত বাসনা” । এরপর আবার সুবিধামত সময়ে আসবে বাকি ১০ টি পর্ব । সবাইকে পড়ার আমন্ত্রন রইল । আশা করি ভালো লাগবে।
কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ এম বি এ ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষার কারনে আসরে ঠিকমত সময় দিতে পারছি না বলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ।  সবার দোয়া ও শুভ কামনা প্রার্থনা করছি । পাশে থাকার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা রইল আসর ও বন্ধুদের সবার প্রতি।