- তা কি করে হয়, এতো পশুর মত ব্যপার হল, মানুষ কি
আর পশুর মত, ধর্ম ও সামাজিক স্বীকৃতি, বৈধতা, সন্মান
এই সবের একটি ব্যাপার আছে না? তাছাড়া বিয়ের মত
একটি সমাজ ও ধর্ম স্বীকৃত পদ্ধতির মাধ্যমে মানবজাতীর
সন্মাঞ্জনক বংশ রক্ষার ব্যাপার আছে না ?


- আমরা অসহায় বইলা, দুর্বল বইলা আপনারা সবসময়
আমাগো সন্মান নিয়াই কেবল টানাটানি কইরা যাবেন বুঝি,
আমরা কি ইচ্ছা কইরা এই পথে আইছি, যারা আমাগো
এই পাপের পথে আনল, যারা রাত দিন আমাগো এই নরম
শরীরটারে শকুনের মত খুইচা খুইচা খায় তাগো সন্মানে
তো কখনো কোন টান পরে নাই!  


- হ্যা, তুমি ঠিকই বলছ, এই বিষয়ে আমাদের সমাজ খুব
একচোখা, সব দোষ মেয়েদের, পুরুষ একেবারে ধোঁয়া তুলসি
পাতা, আমাদের ভাষায়ও গনিকা, পতিতা, বেশ্যা – এইসব
শব্দের পুরুষ লিঙ্গবাচক কোন শব্দ নেই । তুমি কি স্কুলে
গেছ, পড়া লেখা করেছ, কতদূর পড়েছ ... ?


- ঐ রকম শব্দ থাকবো কি কইরা ভাষা আর শব্দ তো আপনারা
পুরুষ মানুষরাই বানাইছেন, ঐসব শব্দ রাখলে তো আপনাগো  
অনেকের আসল চরিত্র ফাস হইয়া যাইব তাই রাখেন নাই, ছোট
বেলায় গ্রামের ফ্রী প্রাইমারী স্কুলে যাইতাম, ঐ বিনা বেতনের স্কুল
থাইক্যা ক্লাস ফাইভ পাশ করনের পর টাকা পয়সার অভাবে
পড়াশোনা বন্ধ হইয়া যায় ।  


- তুমি হয়তো সত্যি বলেছ, তোমার কি কখনো আগের মত
আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না ?    
  
- আমার ইচ্ছে করলেই বা কি, কার কি আসে যায়, কে
আমারে ফিরাইয়া দেবে সেই সহজ সরল জীবন, দেবেন
আপনি, দিতে পারবেন ? আমি জানি পারবেন না, আমারও
কেউর কাছে আর কিছু চাওনের নাই, দেওনের নাই, শুধু
ঐ বুইড়া মার জন্য খুব মন কান্দে মাঝে মধ্যে ... ।


- আসলেই অনেক দুঃখের জীবন তোমার, যখন মার জন্য
মন কান্দে কি কর তখন ...... ?


- আমার দুঃখের জীবন আমার, যাইচা পইড়া কাউরে দয়া
দেখাইতে হইব না, কি আর করব, মাস গেলে বুইড়া মার
খরচের জন্য এই পাপের রোজগারের টাকা থাইক্যা কিছু
টাকা গ্রামে পাঠাইয়া দেই.......................................  
পাপের টাকা মায়ের কাজে লাগাইয়া কিছু পাপ নষ্ট করি ... ।


- তোমার পরিবারের আর সবাই, গ্রামের লোক, তারা কেউ
জানে না তোমার খবর? কেমন আছ তুমি, কি কাজ করছ,
কোথায়, কিভাবে, কার সাথে আছো ..................... ?


বিদ্রঃ আজ প্রকাশিত হল বিশ পর্বের “নিশিকন্যা” সিরিজের চতুর্দশ পর্ব । আমার ভাবনা যাকে এই লেখার কেন্দ্রীয় চরিত্র আমি হিসেবে দেখা যাবে এবং একজন কল্পিত অন্ধকারের মেয়ে যাকে নিশিকন্যা বলে জানে সমাজ, ভেতর তার পেশাগত কিছু বিষয়ের কথোপকথন বা dialogue ঘরানার এই লেখার মাধ্যমে কিছু সত্য উদঘাটনে ব্রতী হয়েছি । আমাকে বেশ কয়েকটা এন জি ও র সাথে বেশ কিছু যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন মুলক প্রকল্পে কাজ করতে হয়েছে, সেই সুবাদে এদের জীবনধারা খুব কাছ থেকে সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছে, সে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে এই লেখা প্রথমে এই এই সিরিজটি আমার কাছে লেগেছে গল্প ও কবিতার মাঝা মাঝি, ভাষা ও গঠনে আছে গল্পের ছোঁয়া, পরিবেশনায় আছে কবিতার আমেজ, আমার মুল ইচ্ছের যে জায়গাটি ছিল তা হল সাধারণত কথোপকথন যেমন হয় ঠিক তেমন অবিকৃত ভাবেই এই তাকে তুলে আনা, অনেকে হয়তো এই লেখায় কাব্যিক ঢং প্রত্যাশা করতে পারে কিন্তু আমার মনে হয়েছে ওরকম কিছু আরোপ করলে লেখা কৃত্রিম হয়ে যাবে, কাব্যিকতা দিতে গিয়ে তার বক্তব্যের সাবলীলতা হারাবে, তাই ঐ পথে হাটি নাই । যারা আগের পর্ব গুলো পড়েননি তাদের ক্ষেত্রে বলব, ওগুলো পড়ে নিলে সিরিজটি বুঝতে সুবিধা হবে । এই সিরিজের পাশাপাশি থাকছে সিরিজ “লোকাল সার্ভিস” । পড়ার আমন্ত্রণ রইল ।