- গ্রামের লোকে সন্দেহ করে আমারে নিয়া, সঠিক জানে
না আসল খবর, তয় নানা রকম রটনা আছে গ্রামে আমার
নামে, মায় জানে আমি শহরে বড় গার্মেন্টসে ভালো চাকরী
করি, ভাই ভাবী মাস গেলে টাকা পায় তাতেই তারা বেজায়
খুশী, আমারে নিয়া, আমার কি হইল না হইল তা নিয়া
তাগোর অত ভাবনা ভাবনের সময় নাই ............।

- কখনো কি গ্রামে যাও, মাকে দেখতে ইচ্ছে করে না ?

- প্রথম দুই একবার গেছিলাম, গ্রামের মানুষ সন্দেহের
চোখে তাকায়, বাকা বাকা কথা কয় । অহন আর যাই
না। তাই মায়েরে বইলা দিছি আগের চাকরী বদলাইয়া
নতুন চাকরী নিছি, এই চাকরীতে বেতন আগের চেয়ে
বেশী কিন্তু নতুন মালিক অনেক কড়া, অসুখ ছাড়া আর
কোন ছুটিছাটা দেয় না ...।

- এখন তো মোবাইলের যুগ, কথা হয় না মায়ের সাথে ?

- আপনি আমার সময় তো নষ্ট করতেছেনই আবার একের
পর এক এতো ঘরের কথা জানতে চান ক্যান একটু তো কন
দেহি ? কেউ তো আমার কাছে এতো কথা জানতে চায় না ?

- ঐ যে বললাম আজ তোমার কপাল খারাপ ...।

- মোবাইল একটা কিনে দিছি মায়েরে, কিন্তু তারে আমার
মোবাইল নম্বর দেই নাই, আমি সুবিধা মত দোকান থাইক্ক্যা
ফোন দেই যখন মায়ের জন্য মন পোড়ে ।

- কেন কেন ? তোমার মাকে মোবাইল নাম্বার দাওনি কেন ?
তাহলে তো তোমার মা কখনো চাইলে তোমার সাথে ফোনে
যোগাযোগ করতে পারবে না ।

- আহ ন্যাকা নাকি আপনি, এতো কিছু বুঝেন আপনি আর
এইটা বুঝেন না যে আমরা লাইনের মেয়েরা কখন যে কোন
অবস্থায় থাকি তার কি আর কোন ঠিকঠাক আছে নাকি,
তাই যখন তখন ফোন দিলে তো বিরাট অসুবিধা ... ।

বিদ্রঃ আজ প্রকাশিত হল বিশ পর্বের “নিশিকন্যা” সিরিজের পঞ্চদশ পর্ব । আমার ভাবনা যাকে এই লেখার কেন্দ্রীয় চরিত্র আমি হিসেবে দেখা যাবে এবং একজন কল্পিত অন্ধকারের মেয়ে যাকে নিশিকন্যা বলে জানে সমাজ, ভেতর তার পেশাগত কিছু বিষয়ের কথোপকথন বা dialogue ঘরানার এই লেখার মাধ্যমে কিছু সত্য উদঘাটনে ব্রতী হয়েছি । আমাকে বেশ কয়েকটা এন জি ও র সাথে বেশ কিছু যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন মুলক প্রকল্পে কাজ করতে হয়েছে, সেই সুবাদে এদের জীবনধারা খুব কাছ থেকে সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছে, সে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে এই লেখা প্রথমে এই এই সিরিজটি আমার কাছে লেগেছে গল্প ও কবিতার মাঝা মাঝি, ভাষা ও গঠনে আছে গল্পের ছোঁয়া, পরিবেশনায় আছে কবিতার আমেজ, আমার মুল ইচ্ছের যে জায়গাটি ছিল তা হল সাধারণত কথোপকথন যেমন হয় ঠিক তেমন অবিকৃত ভাবেই এই তাকে তুলে আনা, অনেকে হয়তো এই লেখায় কাব্যিক ঢং প্রত্যাশা করতে পারে কিন্তু আমার মনে হয়েছে ওরকম কিছু আরোপ করলে লেখা কৃত্রিম হয়ে যাবে, কাব্যিকতা দিতে গিয়ে তার বক্তব্যের সাবলীলতা হারাবে, তাই ঐ পথে হাটি নাই । যারা আগের পর্ব গুলো পড়েননি তাদের ক্ষেত্রে বলব, ওগুলো পড়ে নিলে সিরিজটি বুঝতে সুবিধা হবে । এই সিরিজের পাশাপাশি থাকছে সিরিজ “লোকাল সার্ভিস” । পড়ার আমন্ত্রণ রইল ।