বর্ণবাদ ও দাশপ্রথার আমল ১৮৮৪ সালে সাদা কালোর বৈষম্যের দেয়াল ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তুমুল বিতর্ক, আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলেছিল মার্ক টোয়েনের ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হ্যাকলবেরি ফিন’ । এক নাগাড়ে পড়ে যাবার মত একটি বই এটি, আমি বইটি হাতে নিয়ে শেষ না করে উঠতে পারিনি । এই বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র হাক বা হ্যাকলবেরি ফিন, যে আদতে অভিযান প্রিয় বুনো স্বভাবের এক কিশোর, হাককে দত্তক নিয়ে ভদ্রমানুষ বানানোর এক প্রয়াস নেন উইডো ডগলাস, হাক ও তার বন্ধু টম সয়ারের অভিযান থেকে পাওয়া গুপ্তধনের টাকার কারনে উইডো ডগলাসের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় হাকের বাবা প্যাপ । প্যাপের কাছ থেকে সুকৌশলে পালিয়ে এক দ্বীপে গিয়ে ওঠে হাক । আর সেখানেই সে খুঁজে পায় পলাতক কালো চামড়ার ক্রীতদাস জিমকে যার মাথার বিপরীতে ঘোষণা করা হয়েছিল অর্থমুল্য । দুই প্রতারকের সাথে দেখা সহ অনেক ঘটনা প্রবাহের পর জিম ধরা পড়ে যায় এক কৃষকদের গ্রামে । সেখান থেকে হাক ও তার বন্ধু টম অত্যন্ত সুকৌশলে উদ্ধার করে জিমকে নিয়ে এক দ্বীপে পালিয়ে যায় কিন্তু জিমকে উদ্ধার করতে গিয়ে গুলবিদ্ধ হয় টম। টমের চিকিৎসার জন্য হাককে আবার ফিরতে হয় শহরে এবং টমের জীবন বাচাতে গিয়ে আবার স্বেচ্ছায় ধরা পড়ে যায় জিম । জিমের সৎ, বন্ধু বৎসল ও মহানুভব মনোভাবের কারনে তাকে মুক্ত করে দেয় গ্রামের মানুষ । জাতি ও বর্ণবাদের বৈষম্য ভেঙে  ঘোষিত হয় মানবতার জয় । কালো কৃতদাস ও সাদা মানুষের সহ অবস্থান ও ভালোবাসাবাসি এই উপাখ্যান জাতিবৈষম্য ও দাশ প্রথার সেই আমলে মানুষের চিন্তায় ভিন্নতা ও স্বাধীনতার ভাব সৃষ্টি করে যা মেনে নিতে পারেনি তৎকালীন অর্থ ও ক্ষমতাসীন শ্বেতাঙ্গরা । কালোরা তো তখন নিছকই কৃতদাস তাই তাকে এই বইয়ের জন্য তাকে তৎকালীন শ্বেতাঙ্গ শাসকদের বিরাগভাজন হতে হয়। শাসন ব্যবস্থার রোষের মুখে নিষিদ্ধ হয়েছিল ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হ্যাকলবেরি ফিন’।


মার্ক টোয়েন ছদ্মনামেই গোটা বিশ্ব যাকে চেনে তার আসল নাম স্যামুয়েল লংহর্ন ক্লিমেন্স। পেশায় ছিলেন প্রভাষক কিন্তু নেশায় লেখক । ১৮৩৫ সালের ৩০ নভেম্বর মিসৌরীর ছোট এক শহরে জন্ম নেন স্যামুয়েল তথা মার্ক টোয়েন । তার সৃষ্টির ভেতর রয়েছে ‘দ্যা প্রিন্স আন্ড দ্যা পপার’, ‘এ কানেকটিকাট ইয়াংকি ইন দ্যা আর্থারস কোর্ট’, ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব টম সয়ার’, কিন্তু সেই সময়ে তাকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছিল তার ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হ্যাকলবেরি ফিন’ কারন আগেই বলেছি এই অ্যাডভেঞ্চার ধর্মী বইয়ের মুল উপজীব্য মূলত  হ্যাক বা হ্যাকলবেরি ফিন নামের শ্বেতাঙ্গ ছেলের সঙ্গে জিম নামের কৃষ্ণাঙ্গ একজন কৃতদাশের বন্ধুত্বের গল্প যা সে সময়ে ছিল অবাঞ্চিত । যদিও এটি মার্কিন এই লেখকের সেরা সৃষ্টির একটি তবে এই বইতে তিনি গেয়েছিলেন তৎকালীন নিয়ম ভাঙার গান তাই এই বইটি জনপ্রিয়তার পাশাপাশি তাকে তখন তাকে একটি শ্রেণীর কাছে সমালোচিতও করেছিল। ১৮৮৪ সালে বাজারে আসার পর বইটি বর্ণবাদের অভিযোগে তখন নিষিদ্ধও হয়েছিল।  একসময় ঠিকই সাম্যের সূর্য উঠেছিল। সমতাও ফিরেছিল। আর মার্ক টোয়েনের উপন্যাসটি নিষেধাজ্ঞার শৃঙ্খল ভেঙে হয়ে উঠল কালজয়ী সুপাঠ্য এক উপন্যাস। ১৯১০ সালে ধরাধাম ছেড়ে চলে গেলেও মার্ক টোয়েন নামটি এখনো শুধু মার্কিন মুলুক নয় সারা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীদের মুখে মুখে ।


( চলমান )