আধুনিক ভাবনায় ছন্দ কবিতার একটি ফ্রেমমাত্র, অপরিহার্য কিছু নয় । যদি ফ্রেমে ধরা ছবিটি ফ্রেমের কারনে কৃত্রিম হয়ে পড়ে বা প্রকাশের স্বাধীনতা খন্ডিত হয়ে পড়ে তবে ছন্দের ফ্রেম এক সঙ্কীর্ণতা কারণ সৃজনশীলতাকে যদি কেবলমাত্র নির্ধারিত কোন ছক মেনে চলতে হয় তবে তার সতীত্বহরণ হয়ে যায় । আধুনিক ভাবনা তাই স্বাগত জানায় মুক্ত গদ্যকে । স্বাগত মুক্তগদ্য । স্বাগত অবারিত আকাশ। কেউ কেউ ছন্দ ও মুক্তগদ্য নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন,  আমি তারও কোন কারণ দেখি না । সাহিত্যে যত প্রকরন, যত ধারা তৈরি হবে সাহিত্য তত সমৃদ্ধ হবে । ছন্দ, গদ্য, সনেট,  লিমেরিক,  হাইকু, Acrostic, অবরোহী প্রভৃতি সাহিত্যের এক একটি অলংকার । এগুলো সুশোভিত করেছে কবিতার অবয়বকে । কবিতার আসল জায়গা হল তার ভাবের গভীরতা, প্রকাশের ব্যঞ্জনা, সময়, জীবন ও জগতকে ধারণ করার আকুলতা, ব্যক্তি কবির ভাবনা যখন মানুষের মন ছুঁয়ে শাশ্বত হয়ে ওঠে তখন তা কবিতা হয়ে ওঠে, এগুলোই আসল, কবিতার ধারা বা ব্যকরন নয়, এ যদি থাকে যে কোন ধারাই কথা বলবে, যদি এ না থাকে তবে যত ব্যকরন বা প্রকরণ মেনেই চলুক সে লেখা হয়ে যাবে স্রেফ শব্দ জঞ্জাল ।


তবে ছন্দ যেহেতু বহুকাল ধরে চলে আসা এক কাব্য প্রকরন তাই ছন্দ ভাঙার কাজটি ছন্দ জেনে বুঝে করাটাই সমীচীন । ছন্দ থাকুক একটি প্রকরন হিসাবে, যারা ছন্দ মেনে লিখতে বা ছন্দ পড়তে চায় তারা তা করুক, আজ আমরাও তাই সহযাত্রী হব প্রচলিত ছান্দসিক ভাবনার । ছন্দ মানে শুধু অন্ত্যমিল নয়, কবিতার বিন্যাসে ছন্দ একটি সামগ্রিক কাব্য ছক ।

বাংলা কবিতার প্রচলিত ছন্দ প্রধানত তিন প্রকার  
                   ১. স্বরবৃত্ত ছন্দ।
                   ২. মাত্রাবৃত্ত ছন্দ।
                   ৩. অক্ষরবৃত্ত ছন্দ।
ছন্দের এই ধারাগত নামগুলো সম্ভবত আমাদের সবারই কমবেশী পরিচিত । কিন্তু এদের যথাযথ ব্যবহার অনেকেরই ভালমত জানা নেই। তাই চলুন, আজ এ সম্পর্কে জানার যৌথ যাত্রা শুরু করি ।


ছন্দ সম্পর্কে জানার আগে প্রসঙ্গিক কিছু বিষয় জেনে নিতে হবে কারন, এগুলোর ব্যবহার ছন্দের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । এগুলো একেক ছন্দে একেকভাবে ব্যবহার হয়, আর এদের সুষ্ঠু ব্যবহার ছন্দ রীতির কবিতাকে করে তোলে সার্থক ও শ্রুতিমধুর। এগুলো হল, ‘‘অক্ষর”, ‘‘মাত্রা”, ‘‘মুক্তাক্ষর”, ‘‘বদ্ধাক্ষর বা যুক্তাক্ষর”, ‘‘পর্ব”, ‘‘অতিপর্ব” ইত্যাদি। আপাতত এই কয়টি জানলেই চলবে। এখন এগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।


অক্ষরঃ
সাধারণ ভাবে আমরা বুঝি, প্রতিটি বর্ণই একেকটি অক্ষর। কিন্তু, বাংলা ব্যকরণের ভাষায় তা প্রকৃতপক্ষে সঠিক নয়। আমরা জানি, মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য মুখ থেকে যে সকল শব্দ বা আওয়াজ বের করে তাই ধ্বনি। আবার, ধ্বনির লিখিত রূপই হল বর্ণ। কিন্তু, মানুষ কোন শব্দ উচ্চারণ করার সময়, একবারে যতগুলো বর্ণ উচ্চারণ করে, তাদের একেকটিকে একেকটি অক্ষর বলে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরা যাক । এ জন্য আমরা ‘‘সকাল” শব্দটি ব্যবহার করবো । ‘‘সকাল” শব্দটিতে ‘‘স’’ ‘‘কা” ‘‘ল’’ এই তিনটি অংশে ভাগ করা যায় । আর এই প্রতিটি ভাগই হল একেকটি অক্ষর।


মাত্রাঃ
সাধারণভাবে কোন একটি শব্দের প্রতিটি অক্ষরকেই, একমাত্রা বলে বিবেচনা করা যায় । উদাহরণে আমরা ‘‘সকাল” শব্দটি উচ্চারণ করি ‘‘স’’, ‘‘কাল’’ এভাবে। আপনি নিজে একবার বলার চেষ্টা করুন। খেয়াল করুন, আপনি কিন্তু ‘‘স’’ ‘‘কা” ‘‘ল’’ এভাবে বলছেন না। ‘‘স’’, ‘‘কাল’’ এভাবেই বলছেন। সুতরাং ‘‘স’’ একটা মাত্রা এবং ‘‘কাল’’ একটা মাত্রা। আসলে অক্ষরের সাথে উচ্চারণের মিলিত ধারনা থেকেই মাত্রার স্বরবৃত্ত ধারনার উৎপত্তি । মাত্রার স্পষ্ট ধারনা নিতে আমরা আরও কিছু শব্দ পর্যবেক্ষণ করি। যেমন, পাতা = পা, তা ; কলম = ক, লম ; ক্যালকুলেটর = ক্যাল, কু, লে, টর ; হাইফেন = হাই, ফেন ইত্যাদি। এখানে, পাতা দুই মাত্রা, কলম দুই মাত্রা, ক্যালকুলেটর চার মাত্রা, হাইফেন দুই মাত্রা। আশাকরি, আমরা মাত্রা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেছি । আসলে স্বরবৃত্তে মাত্রা বর্ণের পরিমাণের উপর না, উচ্চারণ বা বাচন ভঙ্গির উপর নির্ভর করে।    
  
মুক্তাক্ষরঃ  
মুক্তাক্ষর নিয়ে আলোচনা করা যাক। যখন একটি অক্ষরে একটিই বর্ণ থাকে, তখন তাকে মুক্তাক্ষর বলে। যেমন, ‘‘সকাল” শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে দুটি অক্ষর ‘‘স’’, ‘‘কাল’’ পাওয়া যায়। এতে, ‘‘স” একাই একটি অক্ষর, সুতরাং এটি মুক্তাক্ষর।


বদ্ধাক্ষরঃ        
যদি একাধিক বর্ণ মিলে একটি অক্ষর বুঝায়, তাকে বদ্ধাক্ষর বলে। সুতরাং, ‘‘সকাল” এর ‘‘কাল’’ হল বদ্ধাক্ষর। এখন, একটি বড় শব্দের ক্ষেত্রে বোঝার চেষ্টা করি। যেমন, প্রত্যুৎপন্নমতি = প্রত্, তুৎ, পন্, ন, ম, তি। এখানে, ন, ম, তি এই তিনটি মুক্তাক্ষর এবং প্রত্, তুৎ, পন্, এই তিনটি বদ্ধাক্ষর।


পর্বঃ  
এবার পর্ব নিয়ে আলোচনা শুরু করছি। এক নিঃশ্বাসে যতগুলো সংখ্যক শব্দ পড়া যায়, তাদের সমষ্টি হল একটি পর্ব। যেমন,
                  
                      ঐ খানে তোর / দাদির কবর /
                      ডালিম গাছের / তলে /
এখানে, প্রতিটি ( / ) চিহ্নের মধ্যের শব্দ সমষ্টিই এক একটি পর্ব। যেমন, (ঐ খানে তোর, দাদির কবর, ডালিম গাছের) এই তিনটি একেকটি পরিপূর্ণ পর্ব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পর্বতো বুঝলাম, তাহলে শেষের ‘‘তলে” কথায় গেল ? এটাও বলছি, তার আগে অতিপর্বের সংজ্ঞায় যেতে হবে ।
    
অতিপর্বঃ    
যখন একটি শব্দ নিয়ে একটি পর্ব বুঝাবে, তখন তাকে আমরা অতিপর্ব বলব। সুতরাং, এখানে ‘‘তলে” হল, অতিপর্ব। একে অপূর্ণ পর্বও বলা যেতে পারে। এখন চলুন আমরা আরেকটি কবিতা দেখি,
                      
                      এই নেয়েছে / ঐ নিল যাঃ / কান নিয়েছে / চিলে /
                      চিলের পিছে / মরছি ঘুরে / আমরা সবাই / মিলে /
নিশ্চই বুঝতে পারছেন, ‘‘চিলে” এবং ‘‘মিলে” হল অতিপর্ব, বাকি গুলো পর্ব। সুতরাং, এই দুটি লাইনে ছয়টি পর্ব এবং দুইটি অতিপর্ব আছে।


প্রারম্ভিক আলোচনা শেষে চলুন এবার বাংলা কবিতার ছন্দের ভুবনে প্রবেশ করি ।
    
স্বরবৃত্ত ছন্দঃ
সাধারণত ছড়া জাতীয় কবিতাগুলো স্বরবৃত্ত ছন্দের হয়। কিন্তু, এটা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য নয়। প্রকৃতপক্ষে স্বরবৃত্ত ছন্দের কবিতা হল, যে সকল কবিতার মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষরে একমাত্রা হয়, তাকে স্বরবৃত্ত ছন্দের কবিতা বলে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি লাইনে সাধারণত মাত্রা সংখ্যা সমান থাকে। যেমন, এই কবিতাটি হয়তো বা ছোটবেলায় আমরা সবাই পড়েছি,
                    
                      ‘‘খোকন খোকন ডাক পারি
                               খোকন মোদের কার বাড়ি”



চলুন কবিতাটি বিশ্লেষণ করি।
                       ।      ।     ।   ।          ।    ।  ।    
                      খো কন খো কন /  ডাক পা রি /
                       ।      ।     ।    ।        ।   ।  ।      
                      খো কন মো দের / কার বা ড়ি /


এখানে, ( খোকন খোকন, খোকন মোদের ) পরষ্পর আনুসঙ্গিক পর্ব এবং দেখুন প্রতিটি পর্বই চারমাত্রা করে। আবার, ( ডাক পারি, কার বাড়ি ) পরষ্পর আনুসঙ্গিক পর্ব এবং এরা প্রত্যেকেই তিনমাত্রা করে। এখন খেয়াল করে দেখুন, প্রতিটি লাইনে ৪ + ৩ = ৭ মাত্রা। সুতরাং, আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, এটা স্বরবৃত্ত ছন্দ।
        
তাহলে বোঝা গেল, ছন্দ চেনার জন্য আগে পর্বে ভাগ করতে হবে, তারপর মাত্রায় বিভক্ত করতে হবে। এরপর মাত্রা গুনে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।


মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ
সাধারণত গীতিকবিতা গুলো মাত্রাবৃত্ত ছন্দের হয়ে থাকে। যে সকল কবিতায়, বদ্ধাক্ষরে দুই বা ততোধিক মাত্রা এবং মুক্তাক্ষরে একমাত্রা হয়, তাদের মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা বলে। বদ্ধাক্ষরেও যে দুই বা ততোধিক মাত্রা হয়, মাত্রাবৃত্ত ছন্দ তার প্রমাণ। এখানে বদ্ধাক্ষর, মুক্তাক্ষরের আগে, মধ্যে বা পরে যেখানেই থাকুক না কেন, বদ্ধাক্ষরে দুই মাত্রা হবে। যদি বদ্ধাক্ষরে একমাত্রা হত তাহলে এক্ষেত্রে তা হতো স্বরবৃত্ত ছন্দ। আগের কথাগুলো সবার সুবিধার্থে আরও একবার ঝালাই করে নিলাম। আমার মনে হয়, আপনারা স্বববৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দের পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। তাহলে চলুন, আমরা একটা মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা দেখি। যেমন, পল্লী কবি জসীমুদ্দীনের ‘‘কবর” কবিতাটি দেখতে পারি। এটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা।
                    
                     ‘‘ঐ খানে তোর দাদির কবর
                                 ডালিম গাছের তলে
                     তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি
                              দুই নয়নের জলে”।


কবিতাটি এভাবে বিশ্লেষণ করে দেখানো যেতে পারে  


                     ।।    ।  ।    ।।        ।  ।।   ।  ।।    
                    ওই খা নে তোর / দা দির ক বর /
                               ।  ।।      ।  ।।      ।  ।    
                              ডা লিম্ গা ছের / ত লে /
                      ।    ।।  ।    ।।   ।    ।     ।     । ।  ।
                     তি রিশ ব ছর / ভি জা য়ে রে খে ছি /
                             ।।     ।।    ।।      ।  ।
                             দুই নয় নের / জ লে /
এখানে বদ্ধাক্ষরেও দুই মাত্রা পড়েছে। শুধু তাইনা, কোথাও কোথাও বদ্ধাক্ষর মুক্তাক্ষরের আগে আবার কোথাও কোথাও পরে। ক উভয় ক্ষেত্রেই দুইমাত্রা পড়েছে। এটিই মাত্রাবৃত্ত ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য।


আচ্ছা, লাইন দুটিতে দুটি শব্দ আছে ‘‘তলে”, ‘‘জলে”, এদেরকে কি বলা হয় মনে আছে ? এরা হল অতিপর্ব!


অক্ষরবৃত্ত ছন্দঃ
বাংলা কবিতার ছন্দে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ছন্দ হল এই অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। এটি যত বৈচিত্র্যে  নিজের অস্তিত্ব তুলে ধরেছে, আর কোন ছন্দই তা পারেনি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রকার ভেদের অভাব নেই। কিন্তু, এ লেখাতে আমরা এর প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করতে যাবনা। এই লেখাতে আমরা শুধু ছন্দ চিনব এবং এর ব্যবহার শিখব।


যে সকল কবিতায়, মুক্তাক্ষরে একমাত্রা ও বদ্ধাক্ষর যদি শব্দের শুরুতে বা আদিতে বা মধ্যে থাকে তাহলেও এক মাত্রা হয়। কিন্তু, বদ্ধাক্ষর যদি শব্দের শেষে থাকে তাহলে দুইমাত্রা হয়, তাকে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলে। আগে এ সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে নেই, তারপর আমরা উদাহরণে যাব। এর সাথে মাত্রাবৃত্তের সামান্য মিল আছে। এ দুটি ছন্দে একটি প্রধান পার্থক্য হলো, মাত্রাবৃত্ত ছন্দে সর্বদাই বদ্ধাক্ষরে দুইমাত্রা। কিন্তু, অক্ষরবৃত্ত ছন্দে শুধুমাত্র শব্দের শেষের বদ্ধক্ষরে দুইমাত্রা, বাকিগুলো একমাত্রা। তবে হ্যাঁ, যদি একটি পূর্ণ শব্দ একাই একটি বদ্ধাক্ষর হয় তাহলে, অক্ষরবৃত্ত ছন্দের বেলায় ও দুইমাত্রা হবে। এখন আমরা উদাহরণে যেতে পারি। যেমন, আমরা মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘‘বঙ্গভাষা” কবিতাটি দেখব,


                     ‘‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন
                       তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি”
এখন বিশ্লেষণে আসি,
                     ।    ।     ।   ।     ।   ।  ।  ।   ।  ।   । ।  ।।
                     হে বঙ্ গ ভান্ ডা রে ত ব / বি বি ধ র তন /
                     ।   ।    ।  ।     ।।    ।    ।      ।  । ।    ।  ।  ।
                     তা স বে অ বোধ আ মি / অ ব হে লা ক রি /


কবিতাটিতে মুক্তাক্ষরে একমাত্রা করে আছে। বদ্ধাক্ষর শব্দের শুরুতেও আছে আবার শব্দের শেষেও আছে। কিন্তু এতে মাত্রাবৃত্তের মত শব্দের শুরু বা মধ্যর বদ্ধাক্ষরে দুইমাত্রা হয়নি বরং শুধু শব্দের শেষের বদ্ধক্ষরে দুইমাত্রা হয়েছে। আশাকরি, আপনারা মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রাগত পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বহুবিস্তৃত এবং সনেট এই বিস্তৃত অংশের একটি অংশ মাত্র । আসলে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দের একটি অংশ । যখন দেখা গেল কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন কোন কবিতার প্রতিটি বদ্ধাক্ষরেই দুইমাত্রা পড়ছে, কিন্তু এতে ছন্দের বা কবিতার লয়ের কোন পরিবর্তন হচ্ছেনা, তখন একে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ থেকে আলাদা করে ফেলা হয় এবং এই বিশেষ বৈশিষ্টের কারনে নাম দেয়া হল মাত্রাবৃত্ত ছন্দ। এভাবেই মাত্রাবৃত্ত ছন্দের উৎপত্তি হয়।


এতক্ষন বাংলা কবিতার ছন্দ সম্পর্কিত কিছু সাধারণ বিষয় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। উপরোক্ত উদাহরণগুলো পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য কবিতা দেখুন। এরপর কবিতাটি নিয়ম অনুসারে বিশ্লেষণ করুন এবং নিজে ছন্দ নিরুপন করার চেষ্টা করুন। সেই সাথেনিজের লেখায় তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন। এতে ছন্দ সম্পর্কে ধারনা আরো স্পষ্ট হবে। ছন্দ বোঝাটা অভিজ্ঞতার উপরও নির্ভর করে। ছন্দ শিখতে চাইলে বেশি বেশি কবিতা পড়ুন এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করার অভ্যেস গড়ে তুলুন । পাশাপাসি নিজে ছন্দ রীতি মেনে কবিতা লেখার প্রয়াস নিন । ভালোবাসা সবাইকে ।