রচনা কাল – ০৪-১২-২০১২


কোমল বরণ, লাজুক একটু, সতত মৃদু হাসি মুখে তার,
তারার মতন চক্ষু, সাদাসিধা মেয়ে, বয়স কেবল ষোল হোল পার,
নম্র ভদ্র, শীতল শান্ত মেজাজ, পাত্তা নাই কোন রুক্ষতার ।
সকাল বিকাল একই পথে চলে পুস্তক হাতে, ফারজানা আক্তার।    


সহসা এক মধ্য রাতে, এসিডের হিংস্রতার ছোবল পরল তার মুখে,
ক্ষণিকের তরে মনে হোল মৃত্যু বুঝি এলো; ঘুমন্ত চোখে -
নিমেষে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বিস্ফোরিত হোল, দেহ জ্বলে হোল ছারখার,
ক্ষণিক বজ্র-সম ক্লিষ্ট চিৎকারে তার, জাগরিত হোল সমগ্র পরিবার।


অসহ্য বেদনায় কাতর শয্যাশায়ী ফারজানা, ভুগছে ঊর্ধ্বশ্বাস,  
কিসে কি হয়ে গেল পেলোনা  কিছুই বুঝার অবকাশ।
চর্ম-হীন ব্যাথা ভরা গা দাহিত মুখে শব্দহীন চিৎকার,
পোড়া-নিস্পলকিত  চক্ষুতে শুধু গাঢ় অন্ধকার!


আশা ছিল বড় হবে, বিকশিত করবে জ্ঞানের ভাণ্ডার,
আলো ফোটাবে চারিধারে, কিন্তু ঊষার শুরুতেই  হোল তার দুনিয়া আঁধার।
পশু-সম সে, না; পশুর চেয়েও নীচে স্থান তার, নিশ্চিত এক দুরাচার!
তারই হাতে, অকালে মৃত্যু হোল ফারজানার।


হে প্রভু! সৃষ্টি করেছ মানুষ, সকল জীবের ঊর্ধ্বে!
আবার ফেলেছ তাকে সর্ব নিকৃষ্টেরও নীচে।
জানি, এটা তোমার সোজা নির্ভুল দৃঢ় শপথ ও প্রতিজ্ঞা,
আরও জানি, তুমি কোরছো মানুষকে পরীক্ষা সর্বদা।


ক্ষুদ্র মানুষ আমি; তব ভৃত্য, রক্তে মাংসে গড়া,
রক্তাক্ত মন সহ্য-হীন , প্রত্যাহত, ক্লেশিত, উদাম রোষে ভরা!
যদি ঐ দুরাচারের প্রতিটি হাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ করি পাটার পাথরে,
এতে কি হবে মোর অপরাধ তব দরবারে?

হে প্রভু, তুমিই আল বাসির, আল সামির,
নিশ্চয়ই তুমি কুল্লে শাইয়িন কাদির!
হে আল কারিম, বেহেস্ত নসিব কর ফারজানাকে,
হে আল হাকিম, বিচার ঠিকই করবে ঐ দুরাচারকে!


(বিঃদ্র – অতি সম্প্রতি দুষ্কৃতকারী কর্তৃক এসিড নিক্ষেপের ফলে ফারজানা আক্তার নামের একটি মেয়ের নির্মম মৃত্যুর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন)