বাড়ীর পাশেই থাকতো আমার দাদী,
উঠানে যেতেই খেতে দিত গুড়মুড়ি।
কখনো আলুভর্তা ভাত, কখনো শুকনো রুটি,
কখনো গাছের পেয়ারা কিম্বা দুধ-মিষ্টি।
মৃদ কণ্ঠে বলতো, কালো চাঁদ তুই এলি?
ঘামছিস, বস্‌ কাঠের পিঁড়িতে পা দুখানা মেলে।
তালের পাখায়  বাতাস দিতে দিতে
বোলতো আমায়; কি খাইছে তোর মা?
মুখখানা যে শুকা গেছে তোর,
বাড়ায়া গেছে শরীরের সব হাড়,
চোখটা এহ্যারে গ্যাছে খালে
এতো রুগা অইছিস ক্যামনে ?
শত আদরের দাদী আমার! স্নেহে ভরাতো প্রাণ,
ক্ষুধা থাকলেও খাবারের প্রতি ছিল না তার টান।
তার হাজার কথার মাঝেও ছিলনা  তিরস্কার,
শুধুই পেতাম আদার আর ভালবাসার উপহার।
দেখতে দেখতে হোল এক যুগ পার,
সময় আসলো কলেজে পড়ার।
গ্রাম ছেড়ে ছুটলাম শহরের পানে,
যেখানে বিভিন্ন ব্যস্ততায় যান্ত্রিক বনে –
ভুলে গেলাম সব বাল্যকালের সৃতি,
ভুলে গেলাম দাদীর সকল স্নেহ-প্রীতি।
বিশ বছর পরে, বেইজিং-লন্ডন ঘুরে,
মনস্থ করি গ্রামের বাড়ি যাব ফিরে।
বাল্য কালের সব হারানো অন্তর্জ্ঞান
সহসা সজ্ঞান হোল তছনছ করি প্রাণ।
উঠানে পা দিতেই, মনে পরল দাদীর মুখ,
ত্বরা কোরে ছুটে গেলাম দাদীর বাড়ি।
ভাঙা দেহ, ছিন্ন মলিন স্যাঁতসেঁতে বিছানায়,
স্বরহীন, অন্ধ, শান্ত, নিথর শুয়ে নিরালায়।
তাকে দেখতেই আঁখি দুটি জলে গেল ভরি,
দাদীর সব আদরের কথা মনে উঠলো জ্বলি।
নীরব দাদী, আজ কয় না কেন কথা?
স্নেহের হাত কেন মাথায়  বুলায় না;
আদর কোরে কেন  ডাকে না আমায়।
হাজারো প্রশ্ন আজ মনমাঝে ঝড় তোলে,
কেমনে ছিলাম এতকাল দাদীরে ভুলে!
হায়রে মানুষ! হায়রে ব্যস্ততা!
যান্ত্রিক বিশ্বে বেঁচে আছি হয়ে আধা-মরা।
অন্তর মোদের যন্ত্রের মতো, সকল দরদ হারা,
যদিও আবেগপূর্ণ মানুষ মোরা মাটিতে গড়া;
কিন্তু হয়ে গেছি একেবারেই শিকড় ছেঁড়া –
চিত্তহীন বিত্তশালী এক দূরন্ত আত্মহারা!