আমি সর্বদাই নিরুত্তর, নির্বাক অক্লান্ত এক মানব
প্রশ্নের যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক আমি
ভবিষ্যৎবাদী প্রশ্নে আমি অতীতের স্বপ্ন ভাঙার শব্দ শুনি,


যখন মা জিজ্ঞেস করে-কিরে খাওয়াদাওয়া করিস না হলে?
শুকিয়ে গেছিস একেবারে,
চেহারা মলিন কেন?রোদে ঘুরিস বেশি বেশি
চোখের নিচে কালি কেন?রাতে ঠিকমত ঘুমাস না নাকি
আমি মৃদু হেসে ফিরিয়ে দেই প্রশ্ন,
উত্তরের আশ্বাস না পেয়ে মা চিরুনিহীন চুলে হাত বুলিয়ে দেয়,
স্নেহের সম্পৃক্ত ছোয়ায়।


বাবা যখন সংবাদপত্র হাতে চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে বলেন,
পড়ালেখা কবে শেষ হচ্ছে, চাকুরির বাজার কেমন এবছর,
ভাল একটা চাকরি হবে ত, আমার ত অবসরের সময় হয়ে এল,
ছোট বোনটার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে
আমি নতমস্তক নিয়ে পাশ কাটিয়ে যাই সপ্রশ্ন হতাশা,
বাবা চোখ নামিয়ে আনেন সংবাদপত্রে,
চোখে সন্তানের অনিশ্চিত জীবনের সুপ্ত আশংকা।


প্রেমিকা যখন কফির কাপে আলতো চুমুক দিয়ে
ঠোটের গাঢ় লাল লিপস্টিক ঠিক করতে করতে বলে,
শোন, যা করার তাড়াতাড়ি কর,বাবা পাত্র দেখছেন,
বিলেতফেরত ডাক্তার,বেশিদিন দেরি করতে পারব না,
বাবা ত আর বেকার ছেলের কাছে মেয়ে দিবেন না,
আমি বুঝতে পারি প্রেমিকার শব্দের তীব্র অনিচ্ছা
আমার অনিশ্চয়তার আকাশ,গুমোট মেঘের কবিতা
সবকিছু থেকে হারিয়ে গেছে চিরন্তন প্রেমের আগ্রহ,
দুঃসহ অতীত থেকে প্রেমিকাও ফিরতে চায় শান্তির বাহুবন্ধনে
আমি তখন গালের খোঁচা দাড়িতে নোখের আচড় চালাতে চালাতে
এক টুকরো মন ভেজানো হাসি উপহার দেই,
যার কোন অর্থ নেই,উপসংহার নেই
পেরিয়ে যাই একটি চিরন্তন ব্যার্থতার প্রশ্ন।


স্কুল বন্ধু আসে গাড়ি নিয়ে,কলেজ বন্ধু এসি অফিসে বসে
দেখা হলে নাক কুঁচকায় অল্পসল্প,পরিচয় খাতিরে প্রশ্ন করে
কিরে আর কতদিন,পড়ালেখা শেষ কবে,চাকরি কবে নিবি,
বিয়ের বয়স ত পার হয়ে যাচ্ছে,মাথার চুলে পাক ধরেছে,
আড়ালে হয়ত আমি হাসিঠাট্টার উপকরণ,
আমি সেখানেও নির্বাক,
চুপচাপ পালিয়ে আসি অসম বন্ধুত্বের দৃঢ় আভাস থেকে
চোখের কোণে হয়ত জমে অভিমানী অশ্রুবিন্দু,


আহা সময়,হে নিঃস্পৃহ সময়
আমার এই শব্দহীন জীবন কবে ভরিয়ে দেবে সবাক উল্লাসে,
মুখরিত হবে আমার সব লোকজ শব্দ,নিজস্ব জনসভার ভাষণে
সকল উচ্চারিত শব্দকে চুপ করিয়ে দিয়ে,
আমি কবে জেগে উঠব শব্দের বিজ্ঞাপন হয়ে,
কবে হৃদয় গহীনের সকল মৌনতা ফেলে দিয়ে
সবার চোখে চোখ নিবন্ধ করে বলতে পারব,
আমি শব্দহীন মানব দৃষ্টান্ত নই,
আমি ব্যার্থ সময়ের মানব দৃষ্টান্ত নই।