আমার ঘরের দক্ষিণের জানালার ধারে
বুড়িগঙ্গা নদী, যদিও অনেক গুলো বাড়ি আড়াল করে থাকে
ঠিক দেখা যায় না,
তথাপি জানালা খোলা পেলেই সেই আড়াল করা বাড়ি গুলোকে
পাশ কাটিয়ে বুড়ি গঙ্গার বাতাস ঠিক আমার ঘরটা ভরে ফেলে!
ভীষণ সুখের একটা ব্যপার হয়তো হতে পারত
যদি আমি জানালাটা খোলা রাখতে পারতাম
যদি বুড়িগঙ্গার পানিতে নর্দমার দুর্গন্ধ না হত,
যদি আমারা ঐ নদীটাকেই আমাদের জীবন নদী ভাবতে পারতাম।


কিন্তু আমাদের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে ঠিক চিনতে শিখিয়েছিল
বর্জ্য পরিশোধন না করে বুড়িগঙ্গার পানিতে ফেললে
আমার টাকার অংকে কত লাভ হবে তা আমি ঠিকই হিসেব করতে শিখেছিলাম
যদিও এই নদী আমার সকল অন্যায় বুকে করে সাগরে নিয়ে ফেলছিল
তা আমি দেখতে শিখিনী, নদীরও যে ভার বহনের সীমা আছে
বুঝতে শিখিনী, আমার মত অন্য সকলেও যে একই শিক্ষায় আলোকিত
একি নদীর কুলে বাস! নদী আর কত বইতে পারে?
কত অত্যাচার সহ্য করা যায়?
কত ব্যভিচার বিচারহীন চলতে পারে?


আমাদের শিক্ষা আমাদের অর্ধ শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছে
বুঝতে শেখায়নি আগামী কালের পরে যে দিন আসবে
তাও আমাদের ভবিষ্যৎ।।
স্থাপত্য কলার চর্চা তুলে ধরে নগরের দৃষ্টি নন্দীয় ইমারত
কিন্তু সেই ইমারতের নীচে ভূগর্ভে
দ্রুত নেমে যাচ্ছে পানির স্তর আমাদের সম্মিলিত শোষণে,
কে জানে তার পরিণাম,
অথচ আমাদের অহংকার আধুনিকতার, শিক্ষার, শিল্পের
যখন ভূমিকম্পে এই নগর দুলে উঠবে
আর চুর চুর করে ভেঙ্গে পড়বে ইমারত আমাদের মাথার উপর
তখন আমাদের স্বার্থ জ্ঞান, অর্জিত সম্পদ, আমাদের অহংকার
কে আমাদের বাঁচাবে?
প্রকৃতি বিরূপ হলে কে ক্ষমতা রাখে তাকে প্রতিরোধের?


আমার দক্ষিণের জানালা বলে দেয়, হে নগর বাসী
তোমরা নির্মাণ করে চলেছো এক মৃত্যুপুরী
প্রকৃতির স্বাভাবিকতা কে বিনষ্ট করে,
এরপর সে যখন তার রূপ ফিরে পেতে বিরূপ হবে
তখন তোমরা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে এবং হবেই!