কবিতা:-একটা কথা হয়নি তোমায় বলা
কবি:- মনোজ ভৌমিক


জানলে রমা,
অনেকদিন থেকে একটা কথা হয়নি তোমায় বলা।
জীবনের অনেক কথা বলেছি তোমায় নানান অজুহাতে,
আজকে তোমায় এই কথাটি না বললে অপরাধ বোধ জাগে।
ভাবছো তুমি,কী এমন কথা বলছি আমি গভীর অনুরাগে!
শুনলে পারে সবই বুঝবে,বলবো না আমি আগে।
তখন আমি খুব ছোট্ট,চলতে শিখেছি টালমাটাল পায়ে,
মুখের থেকে কথাগুলি বেরোতো নাকি আধভাঙা সব স্বরে!
সেই বয়সেই মা আমায় এনেদিলেন বান্ধবী সরস্বতীটিরে।
সরস্বতীটা বড্ড চতুর,চুমুদিয়ে হেসে হেসে আমায় বলে,
"এই নে মুখে কথা দিলাম।মিতালী হলো আজ হতে দুজনে।
ভুলবি না আমায়,মনে রাখবি ছড়া-কবিতা আর গানে।"
তখন থেকেই প্রতিবছর একটু একটু করে,বেড়ে উঠি ওরই হাত ধরে।
প্রাইমারীটা যেই পেরোলাম,ওর সঙ্গে হতে থাকে দুস্মনী।
তানা মারতো যখন তখন।বলতো," কী করছিস ফাজলামি?
এবার তুই চল নিজের মতন,দূরে চললাম আমি।"
সত্যি বলতে সরস্বতী, সেদিন ছিল দুগলী-পাতলী জানি,
আজ এখান ও অনেক বড়,বডিটা ওর মস্তানি।
প্রতিবছর জন্মদিনে পাতাভরে লিখতাম ওর কাহিনী,
বলতাম ওকে কাতর স্বরে,"আগামী জন্মদিনটা না যায় যেন খালি! "
বেশ কয়েকটা জন্মদিনে হয়েছিল আমাদের দেখা।
তারপর ও অমনি উধাও, চলে গেল যেন কোথা!
উদাস হয়ে থাকতাম বসে,আমাদের গরীবের সংসার।
মা-বাবা,দাদু-ঠাম্মা আর ভাই বোন মিলে ছিলাম ছয়- চার।
হঠাৎ আমার বাবা বললেন একদিন খুব রেগে,
"সরস্বতীর প্রেমে পাগল হয়ে জুটবে কী ভাত পেটে?
অনেক হয়েছে,এবার ঘরের থেকে বেরোও,যাতে লক্ষী ঘরে জোটে।"
সেই থেকেই আমি সরস্বতীর খোঁজ নিইনি আর।
লক্ষীর অন্বেষণে ঘুরেছি অনেক- এ দুয়ার ও দুয়ার।
লক্ষী কী ভাই সহজে আসে? ওর যে অনেক সিকিউরিটি!
অনেক কষ্টে দেখা পেলাম,করে অনেক ছোটাছুটি।
ও দেখা কী দেখা রে ভাই! শুধু চৌকাঠে মাথা ঠোকা।
সেই থেকেই নুয়ে আছি, না আগে,না পিছে দেখা।
এখন কেন সরস্বতীটা মারছে উঁকিঝুঁকি?
লক্ষীটা কী তাড়াবে আমায়! এ কেমন বুজরুকী?