গল্প কবিতাঃ-গোধূলির রঙে
✍️ মনোজ ভৌমিক
তারিখঃ- ১৩/০৩/২০২৪


সূর্যের তেজ কমে এলে,নেমে আসে গোধূলি।পশ্চিমদিগন্তে রঙের খেলা আঁধার আহ্বানে।
সূর্য সেন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চাকাঙ্খী সন্তান। ছোটবেলা থেকেই হতাশা আর আফসোসকে বুকের বাম অলিন্দে দাবিয়ে রেখে,দূরন্ত রেসের ঘোড়ার মতো এগিয়ে চলছে। অনুসন্ধান করেছে পয়সা ও প্রতিপত্তি সম্পন্ন লোকগুলো জীবনে ভীষণ স্বার্থপর হয়। প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা,দয়ামায়াহীন,শুধু একটাই নেশা "পয়সা"। সূর্যও ওই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এগিয়ে চলেছে। কৈশোরের ভালোবাসাকে রোদ দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। যৌবনের প্রেমকে চৈত্রের দাবদাহ নিষ্প্রভ করেছে। আজ প্রতিপত্তির ঊর্ধ্বসীমা ছুঁই ছুঁই।বর্ধিষ্ণু শহরের বুকে দুটি ফ্লাট,একটি বাংলোবাড়ি ও শহর থেকে দূরে একটি চমকপ্রদ ফার্ম হাউসের মালিক। মা বাবা স্ত্রী সন্তানের প্রতি শুধু দ্বায়িত্ব কর্তব্যের রেশ ছুঁইয়েছে মাত্র।
   কিন্তু আজ! সূর্যের সে তেজ আর নেই। পিছনে তাকাতেই মনের অন্তঃস্থলে জাগে মহাশূন্যতা। ভালোবাসা হীন জীবনে কি হবে এই গাড়ি বাড়ি! কী হবে এই প্রতিপত্তি!
গোধূলির রঙ হৃদয়কে উদ্বেল করে তুলেছে। এক অদ্ভূত শিহরণ জাগছে মনের আকাশে। ভালোবাসা নতুনরূপে দানা বাঁধতে চাইছে। ক'দিন আগেই রজনী সেনগুপ্তের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় পরিচয়। মন্ত্রমুগ্ধের মত বন্ধুত্বের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে ও।শুরু হয়েছে প্রেমালাপ। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারে না, আদতেও সূর্য সেন তো! তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো রজনীর ফোনের প্রতীক্ষায় থাকে। কথা আছে এই ভ্যালেন্টাইন ডে-তে প্রথম প্রেমের সাক্ষাৎ হবে। সকাল থেকে ভীষণ উদ্দীপনা মনের অন্তরালে। বারবার আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করায়। ভীষণ ভালো লাগছে আজকের দিনটা।বিকেল যেন আসতেই চায় না। বারবার ফোন করে রজনীকে। ঘড়ির কাঁটায় চোখ রাখতে থাকে। ঘড়ির কাঁটা যখন চারের ঘরে হঠাৎ মার্সিডিজ বেরিয়ে গেল। হৃদয়ে এক মধুর আবেশের অনুরণন। গাড়ি থেকে নেমে সন্তর্পণে রবীন্দ্র সরোবরের দিকে এগিয়ে চলছে সূর্য। মনের দিগন্তে আজ নতুন রঙের নেশা। চোখের কোণে ঝিলিক দিচ্ছে এক অনাস্বাদিতপূর্ব আনন্দ। দিগন্তে সূর্যের শেষ আলোকমালায় সুসজ্জিতা পার্কের বেঞ্চে বসা এক অপরূপ সুন্দরী মহিলা  একরাশ রক্তিম গোলাপের মাঝে! সামনে এসে কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলো সূর্য।
--- হাই সূর্য! হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে।
চকিতে সূর্য জেগে উঠলো। ইতস্ততঃ করতে করতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ রজনীর হাতে দিয়ে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরলো দুজনে দুজনকে। অতিশয় আনন্দে বিহ্বল রজনী ঢলে পড়লো সূর্যের কোলে। সূর্য হতবাক! অনেকবার রজনীকে আলোকিত করার চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পেলো না। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে করে নিয়ে ছুটলো নিকটবর্তী নার্সিংহোমে। অনেক পরীক্ষানীরিক্ষার পর জানা গেলো রজনীর ব্লাডক্যান্সার লাস্ট স্টেজে। ধীরে সূর্য ডুবতে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে... তিমির অন্ধকারে রজনী....