মাতৃজঠরে ছিলে। সে এক প্রাক স্বর্গ। সে স্মৃতি কি মনে তোমার আছে?
কিছুই মনে নেই? মা খেলে খাওয়া হতো। মা ঘুমালে ঘুমানো হতো।
হেসেখেলে কেটেছে সময়। ভয় কাকে বলে জানতে না। অতঃপর
ভূমিষ্ঠ হয়েই আচমকা ভয়ে সুতীব্র চিৎকারে কেঁদে উঠলে!
কেনো এতো ভয়? কি দেখেছিলে সেদিন? কেনো আজ অবধি সে কথা চাপা রাখলে তুমি?  
প্রথমে ভেবেছিলাম, যেদিন কথা বলতে শিখবে, সেদিন এর কারণ জানতে পারব;
বললে না। অনন্তর যুক্তি শিখলে, তর্ক শিখলে, শিখলে কথা আড়াল করতে।
কথায় গিঁট দেয়া শিখলে, গাঁটছাড়া বাঁধতে শিখলে, শিখলে সত্যি-মিথ্যে আলাদা করতে
সত্যের স্বরূপ দেখেও মিথ্যের সংগে আপোষ করতে শিখলে নির্দ্বিধায়,  
অথচ কোনো ভয় পেলে না। কোথাও কোনো ভয় নেই। শংকা নেই।


অতঃপর একদিন তুমি ঝি’কে মেরে বৌকে শিখাতে শিখলে
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে শিখলে, শিখলে কৈয়ের তেলে কৈ ভাঁজতে  
পান থেকে চুন খসাতে শিখলে, শিখলে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভাঙতে
ল্যাঙ মারতে শিখলে, শিখলে গাছে তুলে মই কাঁড়তে  
পরের তরকারিতে নুন দিতে শিখলে, শিখলে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভাঙতে
পাকা ধানে মই দিতে শিখলে, শিখলে দূর্বলের রক্তে স্নান করতে
মানব ঢালে কামান দাগতে শিখলে, শিখলে পরের ধনে পোদ্দারি
তেলা মাথায় তেল দিতে শিখলে, শিখলে গরীবের ইজ্জতে ফুটবল খেলতে
অতঃপর শিখলে কেমন করে ভাইয়ের মাংস খেতে হয়;  
কোনো ভয় পেলে না কখনো !


এমনি করে চর দখল, বাক্স বদল ,মাছের মায়ের পুত্রশোক
গরু মেরে জুতা দান – কী শিখনি তুমি? অথচ
ভয় তোমাকে ছুঁতে পারেনি কখনো !


চিরদিন সমান যায় না। একদিন তীর ছুঁড়লে এক অচেনা পাখিরে।  
তীর বুমেরাং হলো। তুমি ভয়ে চিৎকার করলে। কেউ শুনলে না।
কবরের পাশে দাঁড়ানো একজনকে চিৎকার করে বললে,
হে পথিক, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আমি চিৎকার করেছিলাম কেনো, তুমি জানো কি?
বড়দের পাপের একটা উৎকট গন্ধ এসে টোকা দেয় নাকে –আর আমি  
ভয়ে আৎকে উঠি, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি- বাঁচাও, বাঁচাও-
কেউ কিছু বুঝে না, একই শব্দের ভিন্নার্থক প্রয়োগ হয় বার বার  …
পথিক হাঁটে স্রোতের টানে। সে কিছুই শোনে না। কিছুই শুনতে পায় না।