আমলাশুলি পশ্চিমবঙ্গের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি প্রত্যন্ত পাড়া গাঁ। ছোটনাগপুরের জঙ্গল ও পাহাড় ঘেরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা। ২০০৫ সাল অবধি এই গ্রামের  নাম দুনিয়া তো দূর মেদিনীপুরের লোক ও জানতো না। কাঁকড়াঝোড় ভ্রমণ পিপাসুদের একটি শীত কালীন গন্তব্য স্থল।অর্পূব প্রাকৃতিক সৌর্ন্দজ্য।ঘন শালের জংগল পাহাড়ে মেঘমালা,পাহাড়ী ঝরনা নদী হয়ে বয়ে গেছে।আমার পৈতৃক গ্রামের পাশাপাশি,কুড়ি কিলোমিটার মতো দূরে হবে। যখন গ্রামের স্কুলে পড়তাম,সহপাঠিদের সঙ্গে অনেক বার চড়ুইভাতি করার জন্য গিয়েছি।আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি দারিদ্রতা কাকে বলে। বুড়ো বাচ্চারা বসে থাকতো যেখানে রান্না করতাম তার পাশাপাশি।কখন এঁটোকুটোর সঙ্গে বাড়তি খাবার ফেলে দেব তা খবার জন্য।বাংলার একটি এলাকাতে আফ্রিকার খণ্ড চিত্র। যেন আদিম জাতির বাস ,পুরুষ বাচ্চারা সম্পূর্ন নগ্ন। মহিলাদের উর্ধাংগে কোন বসন নেই।আমলাশুলি এই একটি প্রত্যন্ত পাড়া গাঁ এখানেই অবস্থিত।এখানে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় লোক প্রায়ই মারা যেত। কেউ কোন খবর রাখত না। রুখা ও বঞ্জর জমিনের জন্য চাষ আবাদ  ভাল হয় না  । সকলেই ভূমিহীন বলা চলে।জঙ্গলের শুকনো পাতা কাঠ আরো কিছু বনজ সম্পদ বিক্রি করে সংসার চলে।অনাহারে মৃত্যুর একটি ঘটনা কোন ভাবে প্রচারিত হয়ে যায়।ঐ  সময়কার রাজ্য সরকার নিজেদের গরীব দরদি বলে প্রচার করতো। উন্নতি খতিয়ান দিত পশ্চিমবঙ্গ খাদ্যেস্বনির্ভরশীল।খাদ্য-শষ্য উদবৃত্ত, রপ্তানি করা হয় এই রকম একটা ইমেজ ।কিন্তু ফানুষ ফেটে যায়। মিডিয়ার দৌলতে সারা পৃথিবী ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্য সরকার ঘটনা চেপে যাওয়ার জন্য মরিয়া। কাগজ ওয়ালা এলো, ঘন ঘন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আসতে লাগল রাজনীতির রুটি সেঁকার জন্য। এক দিন মুখ্যমন্ত্রী এলেন।পুলিশের কড়া কড়ি যাতে বাইরের কেউ বেশী কিছু জানতে না পারে। এই সুযোগে মাওবাদী আন্দোলন মাথাচাড়া দিচ্ছে।যেন বড় একটা অপরাধ করে ফেলেছেন,অসহায়।এমনই এক পরিবেশে হতচকিত গ্রামবাসীর মুখ থেকে উনার উচ্চারিত বাংলায়, পরিবেশের বিবরন।


-মুখিয়া আইল্য আমলাশোলে
কত হাজার বসর পরে লেখাজোখা নাই,
আইল তবু,
আসুক দেখুক নিষেদ কুথা!
কেমন আছি জংলা খালে, কুথা  হামদের ঠাঁই।
তবে একটা কথা বলি,
হামরা নাকি পিঁপড়ে খাঁইয়্যে বাঁচি,
মিছা কথা,
পিঁপড়া ডিমের ওষুধ বনাই যখন কাশি-হাঁচি।


উ কথা থাক, রগড় শুন,
হপ্তা ধইরে  খাঁকি বালার রাঙা চৈখ্যের ডর,
হুকুম,শুধু হুকুম করে,উধার যদি যাস,
মুইখ্যার কাছে মুখ খুইল্ল্যে ছাড়াঁইন দিব বাস।


ঈ বাবা ত বইলব নাই কুঁইড়্যা ঘরের কথা,
নাঙ্গা গতর ছিঁড়া ত্যানা লইজ্জা টুকু ঢাকে।
ঈ কথাটা বইলব নাইত, বইলব বল কাকে।
রাইত-বিরাতে ওলাউঠা ওষুধ বদ্দি চাই,
খাইট্টের ডুলি, লদী পারের হাসপাতালে যাই ।
অদের হুকুম বলবি নাই, বলে,বইলতে হবেক
আগের চাইত্যে ভাল আছি অভাব ছিল আগে,
ডাক্তর আসে  হপ্তা বাদে রুগীর খবর লেয়
মাষ্টাররা পড়হায় খাওয়ায় ,পুলিশ রাইত্যে জাগে
মনের কথা মনেই থাকে বইলতে দিলে ত,
না বইললে কি বুইঝবেক, ভালই আছি সুখ্যে।
আর তবে কি!
‘সবাই ভাল থাকুন’ বইলে, বেড়াঁইন গেল হেথা।
আফিস বাবু চশমা টাইন্যে রপট লিবেক লিখ্যে।
হামরা আরহ সেই আঁধারেই দিন আসে নাই যার
রাইতেও  যেমন দিনেও তেমন সকইল একাকার।
ঈ বারেও ত সিটাই হইল্য,
সবাই বলে, ইটা দি সিটা দিব কুথাও কিছু নাই,
বেলা ডুইবল্যেই রাক্ষস ডাকে আঁও মাঁও খাঁই।