গোলকি বাড়ি কবরস্থানের পাশেই পরীক্ষার হলে ডিউটি করছিলাম
কবরের মতোই পরীক্ষার হল রুমেও প্রায় একই ধরনের নীরবতা,
কেবল মাঝে মাঝে দুই একজন পরীক্ষার্থী চোখে চোখে কথা বলে,
আঙুলে আঙুলে সত্য-মিথ্যার জানান দেয় এক, দুই, তিন, চার; এই
কক্ষে আমারও ঈশ্বরের মতো শকুন চোখ, হাতের হালুতে নগদ
পৃথিবী, এখানে চোখের পলক ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়, কথা বললেই,
ঘাড় ঘুরালেই অতিচেনা স্যারও তখন একেবারে অচেনা হয়!


এরচেয়ে বরং কবরের মানুষ গুলোই বেশ আছে, শিয়াল-কুকুরের
উৎপাত ছাড়া আর কোনো ভয়-ভীতি নেই, উঠতি মাস্তানের চোখ
রাঙ্গানি নেই, প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে মান-অভিমান নেই, রোদ-বৃষ্টি-
ঝড়-ঝাঁপটার কোনো তোয়াক্কা নেই, সর্বোপরি মতিউর স্যারের মতো
কোনো পরীক্ষা বিশেষজ্ঞ নেই!


তবুও পৃথিবীর মানুষ গুলো যেনো কেমন কেমন পরীক্ষার পর পরীক্ষা
দেবে, অথচ মৃত্যুর নাম শুনলেই ভুরু কুচকাবে; এমন ভাবে চলবে-
ফিরবে যেনো পৃথিবীর মাটিতে কোনো কবর স্থান নেই, শশ্মানও নেই,
চটকদার মোহের উপর মোহ আছে, রমণীয় কামনা-বাসনা আছে!


আমার মাঝে-মধ্যে মনে হয়, কবরের মানুষ গুলোও কি পৃথিবীতে
ফিরে আসতে চায়--- পরীক্ষার হলে বসে বসে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে
চায়? আমি নির্বাক চোখে দেখি, কিছু কিছু মানুষ নিজেকে এতো জ্ঞানী
ভাবে---তখন আমার কাছে খুব করে মনে হয়, আমি মানুষ না!


কামরুননাহার মেম বেশ সুন্দর লুজ শিট ফেরি করতে পারেন, আর
কার কার লাগবে নিয়ে নাও --- নিয়ে নাও, এখনি সেলাই শুরু হবে;
এরপর আর কাউকে লুজ শিট দেয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না,
আমি ভাবি ভিন্নরকম- হলের পরীক্ষা আর জীবনের পরীক্ষার ফারাক
কোথায়?
সময় কেবল ফুরিয়ে আসে ধুন্ধুমার, এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার
চুক্তিতে রাজি হননি তাতে কি? কোনোদিন না কোনোদিন এই চুক্তি
হবেই; কিন্তু ঈশ্বরের সাথে আমাদের চুক্তির কী হবে---------???