আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি
থাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।
পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,
সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।
ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,
সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,
হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।
আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে
ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।
ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।
পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।


সূত্র ও কিছু কথা:
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের এই ‘আসমানী’ কবিতাটি ১৯৪৯ সাল তাঁর ‘এক পয়সার বাঁশি’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এই কবিতা মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্য বইয়েও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।কবিতার একটি চরিত্র থেকেই ফরিদপুরের রসুলপুর গ্রামের অতি সাধারণ এই আসমানী বেগম সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন অতি পরিচিত একটি নাম।
কবিতার বর্ণনায় পাওয়া হত দরিদ্র আসমানী যে বাস্তবেরই এক চরিত্র তার সন্ধান মেলে কবিতাটি লেখার অনেক বছর পর।
আসমানী বেগমের পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে জেষ্ঠ্য কন্যা আলেয়া বেগম বলছিলেন, “আমার মা তখন অনেক ছোট, নয় যখন বয়স, তখন জসীমউদ্দীন আমাদের গ্রামে আসেন। তবে অনেক পরে আমরা জানতে পারি, জসীমউদ্দীন আমার মাকে নিয়েই এই কবিতা লিখেছেন।
মূলত কবি জসীমউদ্দীনের ভাই সরকারী রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ এর শ্বশুর বাড়ি ছিল আজকের ফরিদপুর সদরের ইষান গোপালপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে। সেখানে একবার বেড়াতে গিয়ে এই আসমানীর দেখা পান জসীমউদ্দীন।


ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের মফিজ ইমাম মিলন জানান, জসীমউদ্দীনের ‘জীবন কথা’ বইয়ের প্রথম সংস্করণে এই তথ্যটি ছিল। তবে ফরিদপুরের একজন জেলাপ্রশাসক জালাল আহমদে উদ্যোগ নিয়ে এই আসমানীকে খুঁজে বের করেন।
আসমানী বেগম মারা যান ১৮ আগস্ট ২০১২ সালে।