যতদিন বাঁচব, তার দুটা দিন
দুটা দিন পরস্পরকে দিলাম l
দিন হিসাবে দুটাই, ঘন্টা বা মিনিটে
হিসাব করলে সংখ্যাটা নেহাত মন্দ নয় l
কি হল এই দুই দিনে ? কিই বা
হবার ছিলো ? তিরিশ বছর পর দেখা,
ঠিক তিরিশ বছর এক পরিবেশে বাঁচার পর l
আমার শৈশব কেটেছে মামাবাড়ীতে,
দিদিমার কাছে l তোরটা তোর দিদিমার কাছে l
গ্রামের মধ্যে বাড়ি দুটো তো পাশাপাশি l
মনে পড়ে, সেই আমবাগানে ছুটোছুটি ?
ঝড়ের মধ্যে আম কুড়ানোর ধুম ?
বাল্যশিক্ষা, কৈশোর তারপর কলেজ জীবন l
মাস্টার্স হল ভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে, কিন্তু তখনও তো
যাওয়া-আসা ছিলই l তারপরেও কয়েক বছর l
জীবনের প্রথম তিরিশ বছর আর
সে সময়ের দস্যুপনা l শৈশব এবং তারপরের
দিনগুলি নিয়ে অনেক অনেক গল্প, উপগল্প
মাঠ জমি বাগান পূজামণ্ডপ নদীর ধার
সব জুড়েই কত সব আজব কাণ্ড l বিগত
তিরিশ বছরে কোথায় ছিলো সেই স্মৃতি ?
এতদিন পর যখন বসলাম, কিছু তুই ভুলেছিস
কিছু আমি l কিছু আমার মনে আছে, কিছু তোর l
কিন্তু সব মিলে যেটা হল, দু দিনে আমরা
তিরিশ বছর আগে খোয়া যাওয়া স্মৃতিটাকে
ঠিক খুঁজে বার করলাম l তাহলে
দু দিন এর সঙ্গে তিরিশ বছরটা যোগ কর,
এতটা সময় আসলে আমরা একে অন্যকে দিলাম l


আমাদের দুজন ছাড়াও আরও অনেকে তো
সে সময় আমাদের মতো করে বেঁচেছিল l
অন্তত আমরা তো সেটাই মনে করতাম l
কিন্তু কি জানিস,এদের অনেকের সঙ্গে এর মধ্যে
দেখা হয়েছে, কিন্তু ওরা কেমন যেন পাল্টে গেছে l
আর ওদের সঙ্গে দেখা হলে আমিও যেন আর আমি
থাকি না, ওদের মতো একজন হয়ে যাই l ভাবি,
অতীত পুরো ভুলে গিয়ে ওরা নিজেদের বর্তমানকে
বাঁধছে কোথায় ? আবার এটাও মনে হয় জানিস,
ওরা অতীতে বাঁচেই নি, শুধু শীতঘুম দিয়ে ছিলো
আজকের বাঁচাটা বাঁচার জন্য l
সে যা হোক, ওরা ওদের মতো বাঁচুক, গত দু দিনে
তিরিশ বছরের সেরা সময়ে বেঁচে আমরা কিন্ত
আমাদের বয়সটাকে অনেকটা বাড়িয়ে নিলাম l


সময় দোলে কালের কোলে
আমরা আজ ঋণী বুড়ো অতীতের কাছে l
তিরিশ বছর তো একটা উপলক্ষ্য
ধার জমে আছে আবহমান কালের কাছে l