"অকৃতার্থ আমি" কবি মাহমুদ সোহেল (মায়া নদীর মন মাঝি) - এর আসরে প্রকাশিত প্রথম কবিতা l প্রকাশের তারিখ ১৭-০২-২০১৭ l কবিতাটিতে কবি প্রকাশ করেছেন শোক দুঃখের প্রতি কবির আত্মীয়তাবোধের অনুভবের কথা l কবির ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ কষ্ট বেদনার স্মৃতি এখানে পটভূমি হিসাবে কাজ করে গেছে l শৈশবে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে কবির জীবন l চোখের সামনে শিশুবয়সে অভাবের তাড়নায় চলে যেতে দেখেছেন নিকটের মানুষদের l বালকবয়সেই কাঁধে পড়েছে দায়দায়িত্ব l সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে লক্ষ্য স্থির রেখে কবি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন l সুখের মুখ দেখেছেন l কবির ৫১ তম কবিতা "এখন অনেক সুখে আছি" রচনাটিতে তার উল্লেখ আছে l
আলোচ্য কবিতাটিতে কবি বলছেন, দুঃখের সঙ্গে, শোকের সঙ্গে দীর্ঘদিন সহাবস্থান করার ফলে তাদের সঙ্গে কবির এক আত্মীয়তার সম্পর্ক, মায়া মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল l তাদের জন্য অন্তর থেকে তিনি এক টান, এক আকর্ষণ অনুভব করেন l সেই দিনগুলিকে তিনি অনেক পিছনে ফেলে এসেছেন, যেন হাজার বছর, যেন কয়েক জন্ম l সেই দুঃখ শোকের দিনে কেউ তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি l অথচ আজ এই সুখের মুহূর্তেও সেই দিনগুলির স্মৃতি কবিকে আকর্ষিত করছে l বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, শন শন বাতাস বইছে, পোষ্য কাকাতুয়া পাখির ডাকে কবির ঘুম ভেঙে যায়, অতীত দিনের স্মৃতিতে বিনিদ্র রজনী কাটে কবির l আজ এত বছর পরেও সেই স্মৃতিগুলিকে কবি  ভুলতে পারেননি l
এখন যে দুঃখ শোক কবির থেকে দূরে থাকে, একদা তা তাঁকে ঢেউ হয়ে ছুঁয়ে যেত l নিকট থেকে তার স্পর্শ পেতেন কবি l এখনো তার স্পর্শ পেতে চান l কিন্তু কবির সেই চাওয়া পূরণ হয় না l
প্রতিটি জন্মে নানা রূপে, নানা বর্ণে সেই শোক দুঃখেরই কামনা করেন কবি l কল্পনায় ভর করে  কখনো ঘাসফুল, কখনো কাশফুল, কখনো শঙ্খচিল, বসন্তের কোকিল, কখনো বালিহাঁস হয়ে অচেনা পথে উড়ে যান তাঁর প্রার্থিত বস্তুর লক্ষ্যে l কবি অনুভব করেন যেন কখনো তিনি নীল-সাদা আকাশে সাদা কালো ধোঁয়াশায় মিশে গেছেন l যেন হাজার বছর পরে আজ জম্বুদ্বীপের কোনো ঘরে তাঁর পুনরায় মানবজন্ম হয়েছে l শোক দুঃখ তাঁর পরিচিত l তাকে দেখেছেন তিনি, স্পর্শ করেছেন l কিন্তু হায়, এই জন্মে শত কামনা সত্বেও তিনি তার দেখা পান না l সুখ যেন এক উচ্চ প্রাচীর তুলে শোক-দুঃখকে প্রবেশাধিকার দেয় না l নিজেকে অকৃতার্থ, অকৃতজ্ঞ মনে হয় কবির l


আসরে কবির প্রথম প্রকাশিত কবিতাকে স্বাগত করছি আজকের তারিখে যখন নাকি কবি ইতিমধ্যে ৫১ টি কবিতা ও একটি আলোচনা আসরে যোগ করেছেন l সবগুলো না হলেও কবির বেশ কিছু কবিতা পাঠ করলাম l কবিতাগুলির বিষয় সুন্দর, প্রকাশভঙ্গি ভালো, কবিকল্পনার প্রকাশ আকর্ষণীয়, বাস্তবতার গন্ধ আছে এবং কবিতা থেকে কবিতা বিষয়বৈচিত্র্যপূর্ণ l
আর যে দুটি বিষয় দৃষ্টিকটু লেগেছে তা হলো -
১) বাক্যে সাধু চলিতের মিশ্রণ
২) বানান ভুল
প্রথম কথা হলো সাধু চলিতের মিশ্রণ হলে বাক্য এত শ্রবণকটু হয়, যা রচনার মাধুর্য নষ্ট করে l আর কবিতার কথা যদি বলি, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সাধু ভাষায় কবিতা লেখা সমীচীন নয় বলে মনে হয় l আধুনিক কবিতা একেবারে মানুষের মুখের ভাষা ব্যবহার করছে l এতে করে কবিতার মধ্যে যে গতিময়তা এসেছে, কবিতা পাঠকের কাছাকাছি পৌঁছে যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তার মধ্যে সাধুভাষার অনুপ্রবেশ না হওয়াই বাঞ্ছনীয় l


আর দ্বিতীয়ত, বানান ভুল কবিতার বাহ্য সৌন্দর্য নষ্ট করে l কবিতা দৃষ্টিকটু হয় l কবিরা কবিতা রচনার মধ্যে দিয়ে ভাষা শিক্ষকের জায়গায় পৌঁছন l কারণ কবিতা শ্রেণীকক্ষে পাঠ্য হয় l ফলে কবিতা রচনার পর তা প্রকাশ করার আগে কবিতায় ব্যবহৃত শব্দগুলির বানানশুদ্ধতার বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে নেয়াটা জরুরি l
তবে পরবর্তীতে কবি বিষয়টি শুধরে নিয়েছেন নিশ্চয় l কারণ, কবির ৫০ তম কবিতা "আশংকা" ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে যেমন চিত্তকর্ষক, তেমনই দেখলাম শুদ্ধ চলিত ভাষায় লেখা, সাধু ভাষার বৈরী আক্রমণ এখানে ঘটে নি, এবং বানানের প্রশ্নে কবিতাটি ১০০ শতাংশ নির্ভুল l
এই কবিতায় কবি তাঁর রচিত প্রতিটি কবিতাকে যেন এক একজন ভিন্ন প্রেমিকা হিসাবে দেখেছেন বলে মনে হয়েছে l
কবির ক্রমাগত এই উন্নতির ধারাকে সাধুবাদ জানাই l সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শ দিব পুরাতন কবিতাগুলির পাতায় গিয়ে সেগুলিকে সংশোধন করে নেবার জন্য l
আজকের আলোচ্য "অকৃতার্থ আমি" কবিতায় সাধু চলিত সমস্যাটি মেটানোর পাশাপাশি যে বানানগুলি সংশোধন করা প্রয়োজন :


একাদিক -একাধিক
শুদু - শুধু
শঙ্কচিল - শঙ্খচিল
কুকিল - কোকিল
উরে - উড়ে
জাম্বুদ্বীপ - জম্বুদ্বীপ
বুজি - বুঝি


কবিকে জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা !!!