কবি কবিতা লেখেন ? নাকি পরিবেশ কবিকে দিয়ে কবিতা লেখায় ? দিনভর নিজের কাজে কর্মে ব্যস্ত থাকেন কবি l জীবন যুদ্ধের তাড়না তাঁরও থাকে l সারাটা দিন, দিনের পর দিন জীবিকা সংগ্রহের ও আনুষঙ্গিক নানা কাজের ঝক্কি তাঁকে পোহাতে হয় l কিন্তু এই বিভিন্ন ধরনের কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে, বহু বহু মানুষের সঙ্গে সংযোগের কারণে, বহুবিচিত্র পরিবেশ, পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে মনের মণিকোঠায় সঞ্চিত হয় অমূল্য সব উপাদান, যা কবিতা সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় l কিন্তু এই উপাদানগুলো মনের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে l যেন সুপ্ত আগ্নেয়গিরি l প্রয়োজন হয় উপযুক্ত পরিবেশ, পরিস্থিতির l প্রয়োজন মনের এক প্রশান্ত অবস্থার যখন মনের মধ্যে নানা সময়ে সঞ্চিত এই উপাদানগুলি উপযুক্ত মনন সহায়তা পেয়ে বিকশিত হয় এবং কবিতা সাহিত্যের জন্ম হয় l


কবি সৈকত পাল (নীরব দুপুর) "আলাপী রাত" কবিতায় এমনই এক পরিবেশ, পরিস্থিতির সন্ধান পেয়েছেন যখন পারিপার্শ্বিক রোমান্টিক প্রকৃতির মধ্যে তাঁর কবিকল্পনা জাগ্রত হয়েছে এবং তাঁর মনের মধ্যে সঞ্চিত যাবতীয় ভাব ভাষা পেতে শুরু করেছে l
দিনের শেষে ক্লান্ত মানুষ শান্তির অবসর পায় l মনের প্রশান্ত অবস্থায় কবিমন প্রকৃতিকে ভিন্নচোখে নিরীক্ষণ করে l ধীরে ধীরে প্রকৃতির কোলে রাত্রি নেমে আসে l আকাশ জুড়ে তারাদের মেলা বসে যায় l চাঁদ ওঠে l ধীরলয়ে উড়ে যাওয়া মেঘেদের সাথে চাঁদের খেলা শুরু হয় l জ্যোৎস্নার মায়াবী আলো ঠিকরে পড়ে পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর ওপর l যেন নতুন রূপে নতুন পরিচয় পায় সবকিছু l মন খুশিতে নেচে ওঠে l রাত্রিকালীন এই মিষ্টি অনুভূতি কবির মনে সঞ্চারিত করে এক সৃজনপ্রেরণা l কবির কল্পনার চোখ সবকিছুকে ঘিরে এক সৃজনখেলায় মেতে ওঠে l
চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ে পৃথিবীর কোণে কোণে l
জোনাকিরা সব সেই জোছনা গায়ে মেখে এই আনন্দমেলায় যোগ দেয় l আকাশের এক কোণে ফুটে থাকা ধ্রুবতারা কবির মনে সঞ্চার করে একের পর এক স্বপ্নের সব ছবি l চাঁদের রূপালি আলোতে ফুলেরা সব পাপড়ি মেলে l তার সৌরভে বাতাস অনুভবি হয় l সেই অনুভব কবির কল্পনাকে আন্দোলিত করে l
দৃষ্টিপথ প্রসারিত হয় l ছায়াপথ ছুঁয়ে ছুঁয়ে কল্পনারা হাঁটতে থাকে l রূপকথাসম কবিতা, গল্পের জন্ম হয় কবির মনে l লেখা হয় পাতায় l শান্ত মনে সৃজন-সাধনা চলে l রাত্রিকালীন নীরব প্রকৃতি কবির সাথে আলাপ জুড়ে দেয় যেন l সেই আলাপ নথিবদ্ধ হয় কাব্যরূপে l
কল্পনারূপ রাত পাখিরা ইচ্ছে খুশি কবিকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় অমর সব কাব্য, গল্প l পাতায় পাতায় তা লিপিবদ্ধ হয় l একক বিষন্নতা ছাড়িয়ে, সার্বিক বিষন্নতা পেরিয়ে কবির অমর সৃষ্টি এক অনুপম সুখের সন্ধান দেয় জগৎবাসীকে l জগতের কালজয়ী সব কাব্য, সঙ্গীত যুগযন্ত্রণাবিদ্ধ মানুষের সুখের ঠিকানা হয় l সৃজনশীলতার এই সুখস্পর্শ মানুষের মনকে পরম আনন্দে ভাসিয়ে দেয় l
ছোট কবিতাটিতে কবি সৈকত পাল (নীরব দুপুর) মেলে ধরেছেন সৃজনশীলতার সেই রসায়ন যা একজন কবিকে নতুন সৃষ্টিতে উদ্দীপিত করে l
সুন্দর কবিতাটিতে ছন্দের ব্যবহার অধিক যত্ন দাবি করে l সরব পাঠে বিষয়টি বোঝা যায় l কবিতার তৃতীয়-চতুর্থ পঙক্তিটি এমন হলে কেমন হয় ?
"মন মেখেছে খুশির রেনু
এমনই এক মিষ্টি রাতে l"
অন্য দু-একটি স্থানেও স্বচ্ছন্দ পাঠ বাধা পাচ্ছে বলে মনে হলো l কবি নিজে কবিতাটির সরব পাঠ করলে বুঝতে পারবেন l


অনুপম এক রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা l