রবীন্দ্রনাথ এক বিশাল মহীরুহ l  অসীম তার ব্যাপ্তি l বহুমুখী তাঁর প্রতিভা l রবীন্দ্রনাথের এই বহুমুখী প্রতিভার দুটি ধারা আছে l প্রথম ধারায় দেখি সাহিত্য সঙ্গীত ও সংস্কৃতির নানা শাখা উপশাখায় তাঁর অবাধ, সাবলীল প্রতিভাদীপ্ত বিচরণ l আর দ্বিতীয় ধারায় পাই মানবজীবনের বিভিন্ন বয়সের নানা মানসিক অবস্থার  স্তর ঘিরে তাঁর অসাধারণ প্রেরণাময় সব লেখনী l মানবসভ্যতার নানা বিন্যাস, দেশে দেশে, কালে কালে - রবীন্দ্রনাথের লেখা সব ছুঁয়ে গেছে l এই ধারায় আরও পাই, বর্তমান কবিতাটিতে যার উল্লেখ করা হয়েছে,  একজন বাঙালী তার শৈশব থেকে শুরু করে তার বেড়ে ওঠার প্রতিটি পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথকে কিভাবে পান, কিভাবে কবিগুরু আমাদের জীবন যাপনের প্রতিটি স্তরে তাঁর প্রাণের স্পর্শে আমাদের জীবনকে রূপ রঙ রসে পূর্ণ করে তোলেন এবং সাধারন জীবন-যাপনকে সুরভিময় করে তোলেন l  কবিতাটিতে পাই তার কিছু পরশ l
ছোট্ট শিশু "সহজ পাঠ" আঁকড়ে ধরে তার কচি হাতে l সেই তার আলোর পথে যাত্রা শুরু l বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনে "জনগণমন" প্রার্থনা সঙ্গীত শুনে তার ধমনীর প্রতিটি অণুতে এক শিহরণ জাগে l সেই সুরের মৌতাতে তিমিরঘন নিশীথ পেরিয়ে অরুণোদয়ের শঙ্খ-ধ্বনি শোনে সে l সীমার গণ্ডি পেরিয়ে অসীমের পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান শোনে।
কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ওঠার পথে নানা সময়ে, নানা প্রলোভনে রবীন্দ্রনাথকে উপেক্ষা করার চেষ্টা থাকে l কিন্তু তা হবার নয় l কবিগুরু তাঁর কবিতা, গান এর মোহময়ী বাহুডোরে বেঁধে রাখেন সকলকে। কবির কবিতায় আঁকা চিত্রপটে ফুটিয়ে তোলা প্রকৃতির অপরূপ শোভার স্বাদ গ্রহন করতে করতে সে নিজের অজান্তেই  প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে ওঠে l ঋতু –বৈচিত্র্য’র পাঠ হয় রবীন্দ্রনাথের রচনা পড়ে l রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি থাকেন না l শিক্ষকরূপে পাই তাঁকে l একান্ত আপন, মানবজাতির শিক্ষক, মানবসভ্যতার শিক্ষক l  


রবীন্দ্রসঙ্গীতকে প্রেরণা রূপে পেয়েই সে প্রেয়সীর মনের দুয়ারে প্রবেশ করতে পারে l  প্রেমের ভেলায় সুখবিহার করে l প্রানের স্পর্শ পায় রবীন্দ্রনাথেই l
বিরহ প্রেমেরই এক অনুসঙ্গ l সেই বিরহবেলায় ভাষাহারা বিজন রোদনে অশ্রু মুছিয়ে দেন, তিনিও রবীন্দ্রনাথ। তাঁর অসাধারণ সব রচনা বিরহ মুহূর্তকে অনাবিল কাব্যিক মহিমা দেয় l ঘুমের ঘন গহন হতে  যেন স্বপ্নের রূপে প্রেম, তার নানা অনুভব দু –হাত ভরে  প্রেরণা নিয়ে আসে l বিশ্বকবি পরিচয় রবীন্দ্রসত্তার একটি দিক l এর মধ্যে পুরো রবীন্দ্রনাথকে পাই না l জীবনজুড়ে সুখ দুঃখের নানান অভিঘাতে সর্বদা তিনি নতুন আলোর দিশারী l বেড়ে ওঠার প্রতিটি স্তরে রবীন্দ্রনাথ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে অবস্থান করেন l


এভাবেই এক বাঙালী শিশু তার বেড়ে ওঠার সকল পর্যায়ে কবি রবীন্দ্রনাথকে সর্বদা তার পাশে পায় l ভাবজগতের নানা অভিঘাতে রবীন্দ্রনাথ তার আশ্রয়, প্রেরণা l রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের সাধারণ দেখাকে দৃষ্টিতে পরিণত করেন l  সকলের জন্যই তিনি কিছু না কিছু রেখে গেছেন l রবীন্দ্রনাথ সকলের, সব বয়সের l
"আলোর দিশারী" কবিতাটিতে কবি প্রবীর দে রবীন্দ্রসত্তার বৈচিত্রের এই দিকগুলি এবং মানবশিশুর ওপর তার প্রভাব বিষয়টি কুশলতার সঙ্গে এনেছেন l


একটি ভালো কবিতার জন্য কবিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন l