আজ যে কবিতাটি পাঠ করব, সেটি আসরে প্রকাশিত হয়েছে বিগত ১৫ - ০৮ - ২০১৭ তারিখ l শিরোনামে 'অহংকার' শব্দটি রয়েছে l কবিতার প্রেক্ষাপটে প্রথমে অহংকার শব্দটিকে নির্মোহ দৃষ্টিতে বুঝে নেবার চেষ্টা করবো l
অহংকার শব্দটিকে সাধারণত আমরা নেতিবাচক অর্থে গ্রহণ করে থাকি l এই অহংকারকে ঘিরে অন্য সব ভাষার মতো বাংলা ভাষাতেও প্রবাদবাক্য রচিত হয়েছে - অহংকার পতনের মূল l
কিন্তু অহংকারের প্রতি এই একপেশে মনোভাব সঠিক নয় l অতি অহংকারের অনেক দোষ আছে বটে, কিন্তু এটা বোঝা দরকার, মানুষের ব্যক্তিত্বের দুটি দিক - একটি তার বিনয়, অপরটি অহংকার l বিনয় অনেক সময় দুর্বলতা বলে চিন্হিত হয় l তখন অহং অর্থাৎ অহংকার, রাগ দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় l প্রশাসক, এবং সৈনিক যিনি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন - তাদের শুধু বিনয় থাকলে চলে না l প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবার মতো অহং অর্থাৎ অহংকার প্রয়োজন l আবার, মাতা-পিতা, গুরুজন, শিক্ষক - এঁদের প্রতি অহংকার প্রদর্শন শোভন নয় l বিনয় ও ভালোবাসা দিয়ে তাঁদের হৃদয় জয় করে নিতে হয় l
বোঝা প্রয়োজন, মানুষের আত্মোন্নয়নের চিন্তা আসে অহম থেকেই। ব্যক্তি নানা কারণে বিপর্যস্ত হতে পারে। যুদ্ধে পরাজিত হতে পারে, ব্যবসায় তার ক্ষতি হতে পারে, কুচক্রীদের দ্বারা সে বিপদগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু এই পতন সারাজীবন সে মেনে নিতে পারে না l আবার পতন থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে যে সংগ্রাম করতে হবে তার জন্য প্রয়োজন শক্তি, সাহস ও প্রেরণা - যেগুলির উত্স হলো তার অহংবোধ l কোন ঘটনা প্রত্যক্ষ করে, কোনো জ্ঞানী ব্যক্তির কথা শুনে তার চেতনা জাগ্রত হতে পারে। প্রত্যাঘাত করার মানসিকতা জাগতে পারে। এই যে নির্জীব মানুষের হঠাৎ জেগে ওঠা, প্রতিবাদ করার মতো সাহস সঞ্চয় করা, এর নামই অহংকার l যদি কারো মধ্যে অহম না থাকে, সে কখনো অসম্মানের বিরুদ্ধে, পরাধীনতার বিরুদ্ধে, অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে না। যে চেতনা একজন আধমরা মানুষকে উজ্জীবিত করে তোলে তার নামই অহংকার।
অহংকার একটি শক্তি, একটি বোধ - যা আমাদের ঈপ্সিত লক্ষ্যের পথে নিয়ে যায় l প্রয়োজন তার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের l যেমন জল এবং আগুন l এগুলি ছাড়া মানবজীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না l কিন্তু আগুনকে, জলকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় - তাহলে সমূহ ক্ষতি হতে পারে l গ্রামকে গ্রাম ভেসে যেতে পারে l নগর সভ্যতা পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে l
জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য অহংকার যেমন একটি শক্তি ও প্রেরণা রূপে কাজ করে, সেই সফলতা অর্জিত হবার পর সেই সাফল্য থেকেও গর্ববোধ বা অহংকার জন্মায় l বর্তমান কবিতায় কবি তাঁর সফলতায় এরকম অহংকারজনিত গর্ব ও আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন l
প্রেমে সফলতা পাওয়া সব ক্ষেত্রে সহজ হয় না l এই সফলতা অর্জন করা মানে একজনের মন জয় করা, তার অস্তিত্বের অংশ হওয়া l যত কঠিন পথে এই সফলতা আসে, সফলতার তৃপ্তি, অহংকার তত বেশি হয় l গর্ববোধ হয় l যে ছিল অধরা, সেই স্বর্গের অপ্সরার নামের পাশে আজ প্রেমিক কবির নাম l একসাথে উচ্চারিত হচ্ছে দুটি নাম l এ এক পরম পাওয়া l প্রাপ্তির সফলতার উপজ অহংকার l একই বাতাসে দুজন নিঃশ্বাস নিচ্ছে l দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস বাতাসে মিশে যাচ্ছে একত্বের অধিকারে l আকাশের চাঁদ প্রিয়ার বেশে অধিকতর সৌন্দর্য নিয়ে প্রেমিকের ইহজীবনের দোসর হয়েছে l
প্রেমিকার জীবনের সব মুহূর্ত এখন প্রেমিকময় l তার চিন্তা চেতনা, ভাব ভাবনা, কাজ কর্ম - সব তার জীবনসঙ্গীকে ঘিরে l সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে শুধু তারা দুইজন l প্রাণের প্রিয় মানুষটির ওপর এই অবিসংবাদী জয় প্রতিষ্ঠা করতে পেরে প্রেমিক কবি বিশাল আত্মপ্রসাদ লাভ করেছেন l এই প্রসন্নতা 'অহংকার' নামে বারে বারে কবিতায় উচ্চারিত হয়ে কবির আনন্দের তীব্রতা প্রকাশ করছে l


আত্মচেতনায় উদ্বুদ্ধ এক সুন্দর সুপাঠ্য কবিতা উপহার দেবার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা l