"অসহায় বাবা" রচনায় এক পরিবারের গল্প মেলে ধরেছেন কবি নাসিরউদ্দিন তরফদার l সমাজের হৃদয়হীনতার এক করুন চিত্র ফুটে উঠেছে সেই গল্পে l পরিবারে মানুষ পরস্পর যে সম্পর্কে আবদ্ধ, সেই সম্পর্ক পারস্পরিক যে কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ আশা করে, যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে পরিবার ব্যবস্থাটির বুনিয়াদ - তার একটি কেস স্টাডি করেছেন কবি আলোচ্য কবিতাটিতে l
বর্বর জীবনের অন্তে সভ্যতার আলো মানবজীবনে প্রবেশ করার এক পর্বে মানবজাতি পরিবার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে l এই ব্যবস্থায় নরনারী বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে আদর, ভালবাসা, পরিচর্যা দিয়ে গড়ে তোলে l পারস্পরিক প্রেম ও কর্তব্যবোধে পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের এক ঠিকানা হয় l সন্তানেরা বড়ো হয়ে যখন স্বনির্ভর হয়, তারাও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় l ততদিনে তাদের পিতামাতা হয়তো বৃদ্ধ হয়েছেন l কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন l তাঁদের দেখাশোনা করা, তাঁদের সব প্রয়োজন মেটানো সন্তানদের দায়িত্ব l এই দায়িত্ব পালন করে তারা পরিবার বৃত্তটিকে সম্পূর্ণ করে l


"অসহায় বাবা" কবিতাটিতে যে পরিবারের কথা বলা হয়েছে সেই পরিবারে প্রথম আঘাত এসেছে যখন প্রায় কুড়িবছর আগে পরিবারের যিনি কর্তৃ, তাঁর জীবনাবসান হয়েছে l সংসার যখন মাঝ দরিয়ায়, তখন এসেছে এই বিপর্যয় l একা পিতা তাঁর স্ত্রীর স্মৃতি হৃদয়ে স্থাপন করে তাঁর দুই সন্তানকে মানুষ করে তুলেছেন l একাই সন্তানদের জন্য মা ও বাবা দুই ভূমিকা পালন করেছেন l গ্রামের হাটে হাটে আনাজপাতি বিক্রি করে ফেরা - এটাই তাঁর জীবিকা l দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এই কাজ করে, গ্রামে বাস করেও তিনি তাঁর দুই সন্তানকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলছেন l নিজে কষ্ট করেছেন, কিন্তু সন্তানের সব প্রয়োজন মিটিয়েছেন হাসিমুখে l ছেলেগুলো বড়ো হয়েছে l বাবাও বুড়ো হয়েছেন l তেষট্টি বছর বয়স হয়েছে তাঁর l কিন্তু এখনও কঠোর পরিশ্রম করে যান তিনি l দুই সন্তানকে নিয়ে আনন্দে সুখে দিন কেটে যায় তাঁর l বধূকে হারিয়েছেন l কিন্তু সন্তানেরা যে তাঁর সঙ্গে আছে, এটাই তাঁর কাছে বিরাট প্রাপ্তি ! মায়ের অভাব কখনো বুঝতে দেননি তাদের l এখন বুড়ো বয়সে সন্তানেরাই তাঁর একমাত্র অবলম্বন l
তারপর সুদিন আসে l লেখাপড়া শেষ করে দুই সন্তান চাকরি পায় l বাবা আশা করেন এবার তাঁর দুঃখ ঘুচল l আর তাঁকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হবে না l গ্রামের হাটে হাটে আনাজপাতি নিয়ে আর ঘুরে বেড়াতে হবে না l মনে তাঁর বাহারি স্বপ্ন জাগে l কিছুটা ভোগ বিলাসের ইচ্ছা জাগে মনে l
কিন্তু বিপর্যয় নেমে আসে পরিবারে l বাবা দিশেহারা হয়ে যান, যখন দেখেন লেখাপড়া শেষে, দুই ছেলে চাকরি পেয়ে আর তাঁর সঙ্গে গ্রামে থাকতে রাজি হয় না l বাবাকে অন্ধকারে রেখেই তারা শহরে বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে শহরে চলে যায় l সেখানেই থাকতে শুরু করে l বুড়ো বাবার কোনো খোঁজখবর রাখে না l
দায়িত্বহীন দুই সন্তানের এই হৃদয়হীন আচরণে পরিবার ব্যবস্থার বুনিয়াদ যেন কেঁপে ওঠে l


মর্মস্পর্শী রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !!