ড. শাহানারা মশিউর রচিত 'বিপথগামী'  কবিতাটি যুগযন্ত্রনার, বিপথগামী মানুষের অপকর্মের চিত্র তুলে ধরে l
সময় প্রবহমান l সভ্যতার শুরু থেকে ভালো এবং মন্দ সময়ের দোসর l একদিকে মানবজাতির পক্ষে যা কিছু শুভ, তার পক্ষে দাঁড়িয়ে এক শ্রেণীর মানুষ তাঁদের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা, কর্মশক্তি, উৎসাহ, উদ্দীপনা, শুভকামনা প্রয়োগ করে সৃজন করে গেছেন একের পর এক সভ্যতার বুনিয়াদ, অপরদিকে জ্ঞাত, অজ্ঞাত নানা কারণে আর একটি গোষ্ঠী সভ্যতার শুরু থেকেই সভ্যতাকে বিপন্ন করে তোলার জন্য তাদের শক্তি, বুদ্ধি, সম্পদকে ব্যবহার করে গেছে l শান্তি ও যুদ্ধের প্রয়াস সমানে সমানে চলেছে l যুগে যুগে সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত পরিস্থিতির নিরিখে উন্নয়ন ও ধ্বংসকার্যের চরিত্র নির্ধারণ হয়েছে l হিংসা যুগে যুগে তার রূপ বদল করেছে l একসময়ে যখন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের চল ছিল, কতবার কত দেশ অন্য দেশের শাসনের অধীন হয়েছে l নির্বিচার শোষণ, হত্যা, লুণ্ঠন চলেছে বিজিত জাতির ওপর l মানবিক অধিকার হরণ হয়েছে যুগে যুগে l
বর্তমান যুগে পৃথিবীব্যাপী মূলত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় হিংসা, সন্ত্রাস নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে l একশ্রেণীর মৌলবাদী শক্তি যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করে বিপথে চালিত করছে l তাদের এমনভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে যে তাদের ঈশ্বরের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে, ঈশ্বরের সৃষ্টি এই জীবজগতের প্রতি কোনো মায়া-মমতা থাকছে না l সাধারণ বুদ্ধি, জ্ঞান, শুভবুদ্ধি লোপ পেয়ে যাচ্ছে l এমন অজানা জগতে তারা প্রবেশ করছে, যেখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই l
পুরো ভ্রান্তিতে ভরে যাচ্ছে তাদের জগৎ l তাদের মনকে কলুষিত করে দেয়া হচ্ছে l মানুষের প্রতি, মানবজাতির প্রতি সেখানে থাকছে শুধু একরাশ ঘৃণা এবং বিষাক্ত সব ভাবনা l কল্পনায় শুধু মানবজাতির কোনো না কোনো ক্ষতি করার মারণ সঙ্কল্প l
এইভাবে গভীর অন্ধকারে ডুবে গেছে এই প্রজন্মের যুবসমাজের এক অংশ l সর্বদা তাদের শুধু মানুষের ক্ষতি করার বাসনা l এ এমন এক গন্তব্য, অন্ধকারের এমন অতল, যেখান থেকে এই বিপথগামী যুবসমাজের ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই l সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকেনা। একবার যে এই বিষচক্রে প্রবেশ করে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেটাই তার ভবিতব্য l
চোখ থেকেও তাদের দৃষ্টি নেই l নিজস্ব কোনো বিচারবোধ নেই l শুভ অশুভ ধারণা নেই l যেভাবে তারা প্রশিক্ষিত, যন্ত্রমানবের মতো সেভাবেই কাজ করে যায় l বিশ্ব জুড়ে ছড়ায় হিংসার কুয়াশা-জাল l ভ্রাতৃপ্রতিম মানবসমাজের প্রতি তারা যন্ত্রণা বর্ষণ করে l মূল্যবোধ, মানবতার কোনো ধারনাই থাকে না তাদের l এমন পাশবিক প্রবৃত্তি তাদের পেয়ে বসে যে সন্ত্রাস, হত্যা, ধ্বংস আর রক্তক্ষরণেই তারা আনন্দ পায় l ভ্রাতৃপ্রতিম  মানুষের মরণে তারা উল্লসিত হয় l


অশুভ শক্তির অপপ্রয়াসের এই সফলতায়, বিপথগামী মানবিকতার এই পতনে কবি ব্যথিত l কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে সেই বেদনার কথা l
কবির সাথে সমব্যথী l