জীবন মৃত্যু প্রকৃতির খেলা l মানুষ জীবন পায়, প্রধানত নিজের মতো করে বাঁচে, তারপর সময় ফুরালে তাকে চলে যেতে হয় l কিন্তু এই চলে যাওয়ার বিষয়ে মানুষে মানুষে কতো ভেদ l কেউ মৃত্যুর কাছে সোজা আত্মসমর্পণ করে, শুধুই মারা যায় l কেউ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুকে পরাজিত করে আবার নতুন করে বেঁচে ওঠে l


জীবন যতো দুঃখ কষ্টেরই হোক, এই জীবন সকলের কাছেই খুব প্রিয় l কেউ এই জীবনের অন্ত  চান না l আপনজন, বন্ধু বান্ধব পরিবৃত হয়ে বিষয় আশয় এর আসক্তিতে মজে থেকে জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত উপভোগ করে চলেন l
কিন্তু তবু মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য l সেই সত্যের মুখোমুখি হতে হয় সকলকেই l যখন মৃত্যু শিয়রে এসে উপস্থিত হয়, মানুষ তার নিজের মতো করে সেই আসন্ন মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করে l কেউ সহজেই হার মেনে নেয় l কেউ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুকে পরাজিত করে নতুন করে বেঁচে ওঠেন l কবি পুলক আরাফাত  "মৃত্যুর মুখোমুখি" রচনায় এমনই এক মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষের কথা বলেছেন l


মানুষ জীবনকে কতোটা ভালোবাসে তা টের পায় যখন সে মৃত্যুর সামনে এসে দাঁড়ায় l জীবনের তৃষ্ণা বেড়ে যায় শতগুণ l জীবনের অনেক হিসাব মেলে না l মনে হয় বহু কাজ বাকি থেকে গেছে l
কিন্তু বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই যথেষ্ট নয় l মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তাকে পরাজিত করার আত্মশক্তি প্রয়োজন l এই আত্মশক্তি সবাই অর্জন করতে পারেন না l তাঁরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন l আর যাঁরা সেই শক্তিতে বলীয়ান, মৃত্যু তাঁদের কাছে হার মানে l সেই সময়ে অন্তত মৃত্যু তাঁদের আপন করতে পারে না l জীবন মৃত্যু ভেদ রেখার এপারে তাঁদের রেখে মৃত্যু বিদায় নেয় l


বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে আপন আত্মশক্তিতে বলীয়ান মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে নিজের বৃত্তের মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে হৃদয়ের মরণ অনুভব করেন l এভাবেই তাঁর কতো দিনরাত কেটে যায় শয়নে ও অনিদ্রায় l মনের গভীরে কতো এলোমেলো চিন্তারাশির ভিড় জমে l প্রতি মুহূর্তে সংশয় থাকে l এই বুঝি মৃত্যু চলে এলো l আর বুঝি বাঁচা গেলো না l জীবন মৃত্যুর এই টানাপোড়েন, কখনো খুবই সঙ্কটজনক অবস্থা, তার মধ্যেও বিশ্বাস হারান না কিছু মানুষ l মৃত্যুর আঁকা নক্সাকে ভুল প্রমান করে নিজেকে বাঁচিয়ে তোলেন অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে l নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়াই করে, প্রাণ-মন বিকিয়ে লড়াই এ জয়ী হন l জগতের প্রাণশক্তির উৎস সূর্যের দিকে অবিরাম চেয়ে থেকে তিনি শপথ নেন যে তাঁকে বাঁচতে হবে। তাঁকে প্রমান করতে হবে যে যা তিনি ইচ্ছা করেন, তা তিনি করে দেখাতে পারেন l এবং এটা তাঁকে পারতেই হবে l মরনের লোভাতুর প্রশ্বাসের কবল থেকে জীবনের শ্বাস নিয়ে তাঁকে বেঁচে উঠতে হবে l এভাবেই মৃত্যুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে মৃত্যুরই দুঃসময় ডেকে নিয়ে আসেন তিনি এবং মরণকে মৃত্যু উপহার দেন ।


সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন l