মানব জীবন চাওয়া পাওয়ায় ঘেরা l অনেক চাওয়া থাকে জীবনে l একটি চাওয়া পূরণ হলে আর একটি চাওয়া মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে l কোনো মানুষ থাকেন যাঁরা অল্পেই সন্তুষ্ট l আবার কিছু মানুষের চাহিদা অনন্ত l যতো পেতে থাকেন, না পাওয়ার তালিকা ততোই দীর্ঘ হতে থাকে l চাওয়ার চরিত্রও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন l কেউ বস্তুগত চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ l কারো চাওয়া বস্তুগত চাহিদার ঊর্ধ্বে l মানুষের এমন চাওয়া পাওয়া নিয়ে, তার তৃপ্তি অতৃপ্তি নিয়ে ভাবনায় ভাবিত কবি আফরিনা নাজনীন মিলি তাঁর 'অতৃপ্তি' রচনায় l


এই জগত সংসারে নানা বাঁধনে যতই মানুষ আবদ্ধ হতে থাকুন, সকলেই জানেন একদিন এই ভব সংসার ছেড়ে তাঁকে চলে যেতে হবে l যখন সেই চিরকালীন চলে যাবার আহ্বান আসে, তখন মানুষের জানা অজানায় প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির বিষয়টা তাকে ভাবিয়ে তোলে l কি পেলাম আর কি পেলাম না - এই ভাবনা তাকে গ্রাস করে l বিদায়বেলায় এই ভাবনাকে ঘিরে জীবন সম্বন্ধে চিন্তা চেতনায় নানা বাঁক আসে l সারা জীবনের অর্জিত সবকিছু পিছনে ফেলে যেতে হবে, এই ভাবনায় জীবনে বস্তুগত প্রাপ্তির বিষয়টি গৌণ হয়ে যায় l চেনা এই জগত ছেড়ে অচেনা এক জগতে খালি হাতে পাড়ি দিতে হবে এই ভাবনায় মন উদাস হয়ে যায় l মনে কোনো আপাত অতৃপ্তির বেদনা থাকে না, কোনো হাহাকার থাকে না, যা কিছু প্রাপ্তি এসেছে জীবনে সেটাকেই অনেকটা বলে মনে হয় l বস্তুগত প্রাপ্তির প্রশ্নে মনে কোনো অতৃপ্তির বোধ থাকে না l


কিন্তু মানুষের জীবন শুধু বস্তুগত প্রাপ্তি ও ভাবনার মধ্যে আবদ্ধ নয় l তার থাকে এক পরম পাওয়ার আকাঙ্খা l তা হলো ভালোবাসার আকাঙ্খা l জীবন যতো শেষ দিনের দিকে গড়িয়ে চলে, ততোই এই পরম প্রাপ্তির বিষয়ে সে বেশি বেশি করে আগ্রহী হয়ে ওঠে l তার বিশেষ ভালোবাসার জনকে শেষবার দর্শনের জন্য সে লালায়িত হয়ে ওঠে l


যখন বিদায় ঘন্টা বেজে ওঠে তখন আর বস্তুগত বিষয়ের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি মানুষকে ভাবায় না, তখন ভালোবাসার টান, ভক্তির আকর্ষণ, জীবনের পরম প্রাপ্তি তাকে ভাবিত করে তোলে l সমগ্র নয়ন জুড়ে শুধু তাঁকে দেখবার জন্য, তাঁর সঙ্গে মিলিত হবার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে l


জীবন জুড়ে অন্য নানা প্রাপ্তির মাঝেও যে ভালবাসা দূরে চলে গেছে, শেষবেলায় একবার তাকে ফিরে পাবার জন্য মন আকুল হয়ে পড়ে l


সুন্দর বিরহের কবিতার জন্য কবিকে অভিনন্দন !!