শুভ জন্মদিন কবি !
আঞ্চলিক ভাষায় মনোরম কবিতা l কবি অরূপ গোস্বামী তাঁর অন্য কবিতাগুলির মতো "পইদ্দ পরব" কবিতাটিতেও আঞ্চলিক ভাষায় ভাবের সুন্দর পরিবেশন করেছেন l গ্রামের সহজ সরল এক স্বল্পশিক্ষিত কবির জবানীতে শহরে অনুষ্ঠিত কবিতা উত্সবে তাঁর অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন আন্তরিক দরদ দিয়ে l গ্রামেরই এক যুবক যে সেই শহরে কলেজে পড়াশুনা করে, তার কাছ থেকে খবর পেয়ে গ্রাম্য কবির শহরে আসা l তাঁর নিজের ভাষায় "পইদ্দ পরব" এ যোগদান করার জন্য l প্রথমে অবাক হয়েছিলেন l পদ্য নিয়ে পরব হয় - বিষয়টি ঠিক বোধগম্য হয় নি l আবার ভেবেছেন, হবে নাই বা কেন ? আজকাল তো কতো রকমেরই উত্সব হয় l সেরকমই একটি না হয় কবিতা উত্সব ! একটু ভয় পেয়েছিলেন শহরে অনুষ্ঠিত কবিতা উত্সবে যোগ দিবার কথা ভেবে l তাঁর কেরামতি গ্রামের অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত আধপেটা, আধ পোশাকি লোকেদের কাছে গ্রামের পরিসীমার মধ্যেই চলে l শহরে গিয়ে শহুরে শিক্ষিত আধুনিক কবিদের কাছে কি তাঁর কবিতা পেরে উঠবে ? সন্দেহ, সংশয় ছিল l কিন্তু মনে সাহস শক্তি সঞ্চয় করে পকেটে দুটি স্বরচিত কবিতা পুরে তিনি শহরে চলে আসেন l শহরের কবিদের কবিতা শোনেন এবং সেখানে নিজের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখ ভিত্তিক পদ্যকবিতা পাঠ করেন l
শহরে আসতে, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে, তাঁর কিছু অসুবিধা হয়েছে l খাবার জোটে নি মনমতো l কিন্তু এখানে এসে তিনি শিখেছেনও অনেক কিছু l তিনি দেখেছেন ধবধবে ধুতি পাঞ্জাবি পড়া শহরের সুশিক্ষিত প্রবীণ কবিদের কবিতা ভিন্ন ধরনের l সেই আসরে তিনি নিজের কবিতাও পড়েছেন l কিন্তু দুটো যে আলাদা প্রকৃতির সেটা তিনি বুঝেছেন l শহরের কবিদের কবিতাগুলি রূপ, রস, অলঙ্কার, চিত্রকল্প ব্যবহারে উন্নত, সমৃদ্ধ l ছন্দ, সুর, তালের ঢেউ কবিতাগুলিকে আলোড়িত করে তোলে l সেই কবিতাগুলি শুনে গ্রাম্য কবি তার ক্ষুধার কথাও ভুলে যান l মন ভরে যায় তাঁর l তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর নিজের কবিতায় কথার এত খেলা নেই l কাব্য প্রকরণের এত প্রয়োগ নেই l প্রাইমারির বিদ্যা নিয়ে কবিতায় ছন্দ বিষয়টিকেও তিনি ঠিকমতো ব্যবহার করতে শেখেন নি l সহজ সরল আঞ্চলিক ভাষায় গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের কথা তাঁর রচনায় আসে l সেগুলি কবিতা হয় কি না, তা তাঁর জানা নেই l কিন্তু তাঁর দৌড় এ পর্যন্তই l তবে এগুলি লেখার পর তিনি বেশ স্বস্তি বোধ করেন l মনটা ফুরফুরে লাগে ।
তিনি বুঝতে পারেন শিক্ষার তারতম্যের কারণেই শহুরে কবিতার সঙ্গে তাঁর কবিতার এই পার্থক্য l অশিক্ষার কারণে চোখ থাকতেও গ্রামের মানুষ অন্ধ l এই শিক্ষার অভাবই তাঁদের সমস্ত দুঃখের কারণ l
শিক্ষাই হলো আসল চোখ l শহরের কবিতা উত্সবে যোগ দিয়ে গ্রাম্য কবির এই শিক্ষা হয় l তিনি বুঝলেন শুধু গ্রামের লোকের সুখ দুঃখের বিষয়ে কবিতা লিখলে চলবে না l গ্রামের অশিক্ষিত লোকেদের অশিক্ষার অন্ধকার থেকে জাগিয়ে তুলতে হলে, তাঁদেরও চোখ খুলতে হবে, শিক্ষার আলোয় তাঁদের আলোকিত করে তুলতে হবে l তবেই তাঁরা নিজ অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠবেন এবং নিজ অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে শিখবেন l কবিতাকে হতে হবে এই জন জাগরণের হাতিয়ার l ভবিষ্যতে আবারও শহরের কবিতা উত্সবে যোগদান করার সংকল্প গ্রহণ করেন গাঁয়ের কবি l


কবিকে জানাই শুভকামনা !!