চিকিৎসককে সমাজে প্রায় ভগবানের সমান মর্যাদা দেয়া হয়। ভগবান প্রাণ সৃষ্টি করেন। আর সেই প্রাণকে সমস্ত রকমের রোগব্যাধি থেকে মুক্ত করে মানুষকে সুস্থ জীবন যাপনের অভিজ্ঞতা দান করেন চিকিৎসক। কিন্তু এই ব্যঙ্গ কবিতাটিতে চিকিৎসকের কাছ থেকে একটু বেশি চাওয়া হয়েছে। একেবারে সত্যি সত্যি ভগবান ভেবে নেওয়া হয়েছে চিকিৎসককে। এতটা করা বোধ করি কোনো চিকিৎসকের পক্ষেই সম্ভব নয়, তা তিনি যতো বড়ো চিকিৎসকই হোন না কেন।


চিকিৎসকের ওপর মানুষের আস্থা অগাধ l প্রাণপ্রিয় চিকিৎসককে প্রার্থনা করা হলো তিনি যেন মোক্ষম, কার্যকরী ওষুধ দেন যাতে করে রোগব্যাধি দূর হয়ে যায় l এ পর্যন্ত ঠিক ছিলো l কিন্তু এরপরে চাওয়া হলো, তিনি এমন ওষুধ দিন যাতে করে ক্ষুধার্তদের ক্ষুধা দূর হয়, দুঃখী মানুষের দুঃখ দূর হয় l একবার এমন ওষুধ খেলে ক্ষুধা, দুঃখ জড় থেকে যেন চিরতরে বিনাশ হয় l সমস্ত রকমের কষ্ট যন্ত্রণার থেকে মুক্তি মেলে l কোথায় আছেন এমন চিকিৎসক, কোথায় আছে এমন ওষুধপত্র, সর্বরোগহর, সর্বদুখহর - জানতে ইচ্ছে হয় l
সহজ সরল রোগব্যাধির কথার সীমা পেরিয়ে কবি কবিতায় স্বীকার করেছেন গরিবী অর্থাৎ দারিদ্র্য এক নির্মম মহাব্যাধি l মানুষের জীবনযাপনকে অমর্যাদায় ভরে দেয় l এই দারিদ্র্যকে সমূলে বিনাশ করা প্রয়োজন l কবিকল্পনায় মনে করা হয়েছে সমাজ একটি দেহ, দারিদ্র্য একটি শারীরিক  অসুখ বা ব্যাধি, এবং অস্ত্রোপচার দ্বারা এই ব্যাধির নিরাময় সম্ভব l চিকিত্সার অঙ্গ হিসাবে অস্ত্রোপচার তো তাঁরা করেই থাকেন। অসীম করুণাময় চিকিৎসককে অনুরোধ করা হচ্ছে শেষবারের মতো এই অস্ত্রোপচার করে তিনি যেন সমাজের দেহকে, প্রতিটি মানুষের জীবনকে সুস্থ, সবল স্বাস্থ্য-উজ্জ্বল, সাকার করে তোলেন l
এখানেই চাওয়া শেষ হয় না l মানুষের মন থেকে সমস্ত রকমের কলুষতা দূর করে তাকে নির্মল করে তোলা, তার স্মৃতি, মেধা, ধী, প্রখরভাবে বাড়িয়ে তুলে তাকে শুভ পথে চালিত করা, এমন ওষুধ প্রয়োগ করা যাতে করে মানুষের মন থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, পরস্পরকে আক্রমণের মানসিকতা, অশুভ চিন্তা দূর হয়, এবং সর্বদা অপরের মঙ্গলচিন্তায় মন সদা রঙ্গীন হয়ে থাকে l
নিজ পরিচয়ে মানুষ স্বাধীনভাবে চলবে l মন থেকে সমস্ত রকমের কলুষতা দূর হবে, নিজের সব শক্তিকে সংহত করে পবিত্র হৃদয়ে আনন্দে মেতে উঠবে l সম্পর্কের টানাপোড়েন, মন কষাকষি, লোভ, স্বার্থ. ছলনা এগুলি জড় থেকে দূর হয়ে প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্কে মানুষ আবদ্ধ হবে l চতুর্দিকে আনন্দধারা বয়ে যাবে l পৃথিবীর সমস্ত মানুষ অসীম আনন্দে মেতে উঠবে l চিকিৎসককুলের অক্লান্ত চেষ্টা ও পরিশ্রমে  সৃষ্টির সৌরভে জগত ভরে উঠবে l


পরিশেষে চিকিৎসক সমাজের প্রতি অসীম বিশ্বাস ও ভক্তি রেখে বলা হয়েছে যে তাঁরা অসীম শক্তিধর এবং  দয়াপরবশ l অপরের প্রতি এই দয়া ও ভক্তিই তাঁদের নব নব জীবন সৃষ্টিতে প্রণোদিত করে l চিকিৎসক সমাজের প্রতি তাই মানুষ সদা কৃতজ্ঞ ও সমর্পণচিত্ত l


কবিতাটির শিরোনামে বন্ধনীর মধ্যে 'ব্যঙ্গ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে l বর্তমান সময়ে মুল্যবোধের অবক্ষয়ের এই যুগে কিছুক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে, চিকিৎসক সমাজের কাছ থেকে স্বাভাবিক পরিষেবাটুকুই পাওয়া যায় না l  এই কবিতায় যে পর্যায়ের পরিষেবা তাদের কাছ থেকে আশা করা হয়েছে, সেটা তো অনেক দূরের কথা l এজন্যই কি 'ব্যঙ্গ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ?


কবি গোপাল চন্দ্র সরকার মহাশয়কে সুন্দর একটি কবিতার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই l