মেঘ ও বৃষ্টি - প্রকৃতির রঙ্গশালায় এমন দুটি চরিত্র যা কবির কাব্য উন্মাদনা সৃষ্টিতে অনাদিকাল থেকে catalyst এর কাজ করে আসছে l কালিদাসের যুগ থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ হয়ে অত্যাধুনিক কালেও সেই ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত l মেঘ বৃষ্টি নানাভাবে মানুষের জীবন যাপনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত l কবিদের মনে কতো বিচিত্র ভাবের উদয় হয় মেঘ ও বৃষ্টির রঙবাহারী খেলায় l কখনো মানবিক আবেদন l  বৃষ্টির কাছে খরাক্লিষ্ট ধরায় শীতল বর্ষণের আবেদন l "আল্লা মেঘ দে, পানি দে" প্রার্থণা" l কবি কখনো বৃষ্টিকে সৌন্দর্যের উৎস হিসাবে দেখছেন l আবার বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি ভয়ের কারণ l
"নীলনবঘন আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে l"
কখনো বৃষ্টি শিশুদের খেলার সাথী l বৃষ্টি কোথাও সৃষ্টির প্রতীক, কোথাও ধ্বংসের l আঁধার রাতে বৃষ্টি মানে ভূতের গল্প l বৃষ্টি মানে রূপকথার গল্প l বৃষ্টি মানে স্কুলে রেনি ডে ছুটি l বৃষ্টি মানে পথে জলকাদা, অসুখ বিসুখ l বৃষ্টি মানে গাছগাছালি স্নান করে সবুজ সতেজ l  খিচুড়ি, পাঁপড় ভাজা l
আর বৃষ্টি মানে মন নেচে ওঠা l মনে প্রেমভাবের উদয় l
শান্তনু ব্যানার্জ্জী রচিত "প্রেমবৃষ্টির কাব্য (সেনোরিটা সিরিজ)" কবিতাটিতে আকাশে মেঘের আবির্ভাব এক প্রেমিকের প্রেমভাবনাকে জাগিয়ে তুলেছে l মেঘের কাছে করা হয়েছে বৃষ্টির জন্য আবেদন l বৃষ্টির জলে প্রেমিকার সাথে ভিজে প্রেমকে অনুভবের স্বপ্ন l সেই অনুভবে সীমা ছাড়ানোর ইঙ্গিত l প্রেমের গরল পান করতে প্রস্তুত প্রেমী l উত্তেজনার আবেশে সঙ্গিনীর বাধা মানবেন না l তার শরীর স্পর্শ করবেন l ভালবাসার অনুমোদন চাইবেন l অনুমোদন মিলে গেলে সেই সম্পর্ককে ভাষা দিবেন প্রেমিক l প্রেমিকার সৌরভে বিভোর প্রেমী কোনো আপত্তি মানছেন না l সারাদিন তাকে সঙ্গ দিয়েছেন, জাগতিক কাজকর্মে যুক্ত থেকেছেন, রাত্রিটা অন্য কোনো কাজে নয়, শুধু প্রেম ভালোবাসার উপভোগের জন্য উৎসর্গ করতে চান l দুঃখ কষ্ট জীবনে থাকবেই l তাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রেমিকার আলিঙ্গনে স্বর্গীয় সুখের অনুভব নিবেন প্রেমবিহ্বল প্রেমী l প্রেমিকার কালো কেশ, তার রূপালী অশ্রুবিন্দু অশেষ মুল্যবান তার কাছে l প্রেমের অবিচ্ছেদ্য অনুভব l  
ছোটখাট বৃষ্টি নয়, বৃষ্টি আসুক মুষলধারে, অঝোরধারায় l সমস্ত শোকতাপ ভুলে, লজ্জার বাধাকে অতিক্রম করে ঘনঘোর বৃষ্টির মধ্যে দুই প্রেমী প্রেমবৃষ্টির কাব্য রচনা করবেন l  l
ছন্দে সুরে কবিতাটি সুপাঠ্য l সুন্দর রোমান্টিকতায় যথাযথ শব্দ প্রয়োগে প্রেমভাব প্রকাশিত l
চতুর্থ স্তবকের প্রথম পঙক্তির "সব", ষষ্ঠ স্তবকের প্রথম পঙ্ক্তির "বা" এবং শেষ পঙ্ক্তির "এই" শব্দগুলি বাদ দিয়ে পড়লে কবিতাটির পাঠ সাবলীল শোনাচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে l
সুন্দর একটি মিষ্টি প্রেমের কবিতা হিসাবে পাঠ করলাম l রূপক বিশ্লেষণে যাই নি l
ভালো একটি কবিতার জন্য কবিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন l